কৃষি

কক্সবাজার: পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্বর্ণখনি!

উদয় হাকিমকক্সবাজার থেকে, ২৯ জুন : পৃথিবীর দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সৈকত কক্সবাজার। এটা যে বাংলাদেশের কত বড় সম্পদ আমরা জানি না! যদি জানতাম এই সৈকতকে ঘিরে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশে পরিনত হতে পারতাম আমরা। কক্সবাজার একটি বিশাল খনি। স্বর্ণখনি।

খনি থেকে স্বর্ণ আহরণ করতে যেটুকু পরিকল্পনা দরকার, শুধু সেটুকু দাবি করে কক্সবাজার। স্বর্ণখনির জন্য যেসব স্থাপনা, মেশিনারিজ দরকার ওই পরিমান বিনিয়োগ এখানে দরকার।

হয়তো ভাবছেন পাগলের প্রলাপ! মোটেও না। লাখ টাকা খরচ করে আমরা বালি যাই, ব্যাংকক-পাতায়া কত জায়গাতে যাই। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ওইসব এলাকায় কী কী করা হয়েছে একটু ভাবুন। বিশ্বাস করুন বালি-পাতায়ার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর, আকর্ষনীয় কক্সবাজার।

কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্র সীমার দৈর্ঘ্য ১০০ কিলোমিটার। পুরোটাই বালুময়। একদিকে সাগর। আরেকদিকে পাহাড় বা সমতল। সমুদ্র তটের পুরোটাই সমতল ঢালু। তাই প্রায় পুরোটাতেই সাঁতার কাটা নিরাপদ। পুরোটাতেই সম্ভব পর্যটন স্থাপনা তৈরি।

এই ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় সবগুলো হোটেল- মোটেল-রিসোর্টই কক্সবাজার শহর কেন্দ্রিক। সামান্য কয়েকটি হোটেল-রিসোর্ট আছে ইনানীতে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপেও রয়েছে সাধারন মানের কিছু হোটেল। টেকনাফ পর্যটনের জন্য অসাধারন একটা জায়গা হলেও সেখানে থাকার মতো তেমন কোনে হোটেল-মোটেল নেই।

কথায় বলে ‘মানি বিগেডস মানি’। অর্থ্যাৎ টাকায় টাকা আনে। বিদেশীদের টাকা নিজেদের পকেটে ভরার জন্য প্রয়োজন কিছু কৌশলী উদ্যোগ। এরমধ্যে অবশ্য সরকারের উদ্যোগই বেশি জরুরী। সরকার গাইড লাইন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। বিনিয়োগ হবে প্রাইভেট সেক্টর থেকে। সরকার ইচ্ছে করলে বিনিয়োগও করতে পারে। হতে পারে পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) বিনিয়োগও।

প্রথম প্রয়োজন পরিকল্পনা। কোথায় হোটেল-মোটেল রিসোর্ট হবে তার জন্য ফিউচার পরিকল্পনা দরকার। এরপর দরকার নিরাপত্তা। শুধু বিদেশী পর্যটকদের জন্য আলাদা জোন করা দরকার। যেটা হবে এক্সক্লুসিভ জোন। এখানে তিন তারা থেকে ৭ তারা মানের হোটেল হবে। থাকবে সুইমিং সুবিধা, নাইট ক্লাব, বার, পার্ক, ওপেন জোন, ব্যাংক, খেলার মাঠ ইত্যাদি। কেবল বিদেশী এবং খরচে লোকেরা এখানে আসবেন। ৫০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে এর আয়তন।    

এই স্পেশাল জোনের জন্য থাকবে স্পেশাল সিকিউরিট। র‌্যাব বা এরকম বিশেষ বাহিনী সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা দেবে। নিরাপত্তা বহরে থাকবে হেলিকপ্টার এবং আধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জাম। এখানে সাধারন কোনো ব্যক্তি প্রবেশ করতে পারবে না। পুরো এলাকা থাকবে দেয়াল বা কাঁটাতার ঘেরা।

সমুদ্রের ভেতরে চলে যাবে তারের বেড়া। নিরাপদ সাঁতারের জন্য সিকিউরিটি নেট থাকবে। থাকবে প্রশিক্ষিত লাইফ সাপোর্ট গার্ড। মুদ্দা কথা নিজেদের জোনে পর্যটকরা যা ইচ্ছে তাই করতে পারবেন। পাবেন প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা।

বিশেষ বিমান বন্দরের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ, ইনানী, মহেশখালি, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, নিঝুম দ্বীপ এলাকায় হেলিকপ্টার সার্ভিসের ব্যবস্থা থাকবে। পুরো সৈকত, হেলিকপ্টারে ভ্রমনের প্যাকেজ থাকতে পারে। জলভীতি কিম্বা সময়ের অভাবে অনেকেই সেন্টমার্টিন যেতে পারেন না। হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা থাকলে পর্যটকরা তাতে উঠবেনই।

কক্সবাজারের কলাতলী সি বিচ থেকে মেরিন ড্রাইভ তৈরি করতে হবে শাহ পরীর দ্বীপ পর্যন্ত। এটা আরো বিস্তৃত করে পূর্ব দিকে নাফ নদীর সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়। এই মেরিন ড্রাইভ হবে চার লেনের। যারা স্পোর্টস কার কিম্বা সাধারন কার চালাতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটা হতে পারে মজার একটি ড্রাইভ প্যাকেজ।

রাস্তাটির বিভিন্নস্থানে বিভিন্নরকম স্থাপনা থাকতে পারে। এই ১০০ কিলোমিটারের পুরোটাতেই থাকবে ২৪ ঘন্টার স্পেশাল সিকিউরিটি। যাতে দিন-রাত ২৪ ঘন্টাতেই এটা নিরাপদ জোন হিসেবে বিবেচিত হয়।

দেশী পর্যটকের ভীড়ে কক্সবাজার এক রকমের ভারাক্রান্ত। শুধু কক্সবাজার শহরে হোটেল মোটেল কেন্দ্রীভূত না করে এটাকে ছড়িয়ে দিতে হবে টেকনাফ পযন্ত। তাতে শহরের উপর থেকে চাপ কমবে। পুরো এলাকাটি চমৎকার পর্যটন জোনে পরিণত হবে।

বিশ্বব্যাপী এসব পরিকল্পনার কথা জানাতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক এবং যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালাতে হবে। বিদেশীদের দিতে হবে স্পেশাল আতিথেয়তা। তারা দেশে গিয়ে যেন অন্যদের আসতে উদ্বুদ্ধ করেন।

সম্প্রতি জিম্বাবুয়ে গিয়ে দেখেছি যেটা। ভিক্টোরিয়া ফলস সিটিতে পর্যটকদের বিনোদনের জন্য স্থানীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হচ্ছে। প্রতিটি পর্যটকই তা উপভোগ করছেন। মজা পাচ্ছেন। ‘বোমা’ নামে একটি রেস্তোরায় ডিনার করতে গিয়ে দেখলাম প্রায় শ’ দেড়েক খদ্দের। সবাইকে দিয়ে একসঙ্গে খোল বাজালো। সবাই বাদক, সবাই নৃত্য শিল্পী, সবাই পারফরমার।

আমি যেগুলো বললাম সবই তাৎক্ষনিক ভাবনা থেকে। দেশ-বিদেশে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরিকল্পনা আহবান করা যেতে পারে। তাহলে সাত আশ্চর্য নির্বাচনের মতো বা তার কাছাকাছি একটি হাইপ তোলা সম্ভব হবে। বেরিয়ে আসবে অদ্ভূত সব সুন্দর পরিকল্পনা। আর তা বাস্তবায়ন করে আমরা হতে পারি সবচেয়ে বড় স্বর্ণখনির মালিক।   

 

রাইজিংবিডি / ২৯ জুন, ২০১৩ / আপ- কেএস/এলএ