আমিনুল ইসলাম নেপাল থেকে

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে দেশকে পদক দিলেন সাথী

রোকেয়া সুলাতানা সাথী। একজন মা। একজন ফাইটার। ২০১৬ সালে গৌহাটি ও শিলং সাউথ এশিয়ান গেমসে রৌপ্য পদক জিতেছিলেন। এরপর নিজেকে প্রস্তুত করেছেন ২০১৯ এসএ গেমসের জন্য। টার্গেট ছিল সোনায়। সেভাবে এগিয়েও যাচ্ছিলেন। কিন্তু মহামারী আকার ধারন করা ডেঙ্গু তার পথ রুখে দাঁড়ায়। অক্টোবরের শেষ দিকে যখন দেশ ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল ঠিক তখন আক্রান্ত হন সাথী। তখন এসএ গেমসের জন্য তাদের ক্যাম্প চলছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে। ক্যাম্পে তার সতীর্থরা যখন এসএ গেমসের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল তখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলেন সাথী। ৩১ অক্টোবর থেকে ১৫টি দিন ডেঙ্গুর সঙ্গে লড়াই করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ফিরে আসেন মৃত্যুর দুয়ার থেকে। ডেঙ্গু পরবর্তী জটিলতা নিয়েও নেপালে আসার আগের কয়েকদিন অনুশীলন চালিয়ে যান। এরপর নেপালে আসেন। আজ শুক্রবার নেপালের পোখরার কেসি ব্যানকুয়েট ভেন্যুতে ৭১ কেজি ওজন শ্রেণিতে ¯œ্যাচে ৭০ এবং ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ৮৫ কেজিসহ মোট ১৫৫ কেজি তুলে রৌপ্য জিতেছেন তিনি। এই ইভেন্টে সোনা জিতেছেন ভারতের মানপ্রীতি কউর।

সোনা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে এসে রৌপ্য জিতেও খুশি তিনি। কারণ, তিনি যে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে দেশকে পদক উপহার দিয়েছেন। ডোপ টেস্ট শেষে সাথী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘যদিও সোনা জয়ের টার্গেট ছিল। কিন্তু রূপা জিতে আমি অসন্তুষ্ট নই। কারণ, ৩১ অক্টোবর আমার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ১৫ দিন আমি অসুস্থ্য ছিলাম। বেঁচে ফিরব বলে আসা করিনি। বলতে পারেন মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে পদক জিতেছি। তারপরও হাতের কাছে স্বর্ণ পেয়ে মিস করলে খারাপ লাগে। হয়তো ডেঙ্গু না হলে আরো ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারতাম। প্রস্তুতির অভাবে এবারও আমি রূপা জিতেছি। চেষ্টা থাকবে সামনে আরো ভালো করার।’

২০১৬ সালের মতো আবারো সোনা মিস। বাংলাদেশ ঠিক কোথায় পিছিয়ে? সাথী বলেন, ‘আসলে আমাদের মতো অন্যান্য দেশ পিছিয়ে নেই। প্রত্যেকটা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দেখলাম যে নেপাল আছে, শ্রীলঙ্কা আছে, পাকিস্তান আছে। ওরা আমাদের চেয়ে পিছিয়ে নেই। এসএ গেমসের মতো গেমস সামনে রেখে আমরা তিন-চার মাস ক্যাম্প করি। আর ওরা বছরের পর বছর ক্যাম্প করে। আমার মনে হয় লম্বা সময় ক্যাম্পে থাকলে প্রত্যেকটা প্লেয়ার ভালো করবে। আর আমাদের যে সুযোগ-সুবিধা দরকার সেগুলো যদি ঠিকমতো দেওয়া হয় তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশে এর চেয়ে বেশি গোল্ড আমরা নিয়ে যেতে পারব।’

খুব কাছে গিয়েও বাংলাদেশ সোনা জিততে পারছে না বাংলাদেশ। সামান্য ভুলের জন্য বদলে যাচ্ছে পদকের রঙ। কেন এমন হয়, ‘এই ধরনের ফাইনাল প্রতিযোগিতা আসলে একটা লটারি। নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে গোল্ড পাবই। অথবা আমি সিলভার পাব। এখানেও ভাগ্যেরও ব্যাপার আছে। নিজের প্রচেষ্টাও আছে। আমি ফাইট করেছি। যথেষ্ট চেষ্টা করেছি যাতে আমি একটা গোল্ড পাই। আমাদের ট্রেনিংয়ের একটু ঘাটতি ছিল। স্বল্প সময় ট্রেনিং পেয়েছি। এই যে ধরুন এসএ গেমস শেষ, এরপর আমরা যার যার বাসায় অবস্থান করব। কোচ হয়তো আমাদের খুঁজেও পাবে না। এরপর কোনো প্রতিযোগিতা কিংবা গেমসকে সামনে রেখে আবার ক্যাম্প শুরু হলে আমাদের এই লেভেলে তুলতে কোচের অনেক সময় লেগে যায়। পাশাপাশি আমরা আমাদের পারফেক্ট পারফরম্যান্সে যেতে চাইলেও হয় না।’

এসএ গেমসের বাইরে ২০১৫ সালে তুরস্কে ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে তিনটা ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন সাথী। একজন অ্যাথলেটের পাশাপাশি তিনি একজন মানবিক মা। মানবিক মা বলার কারণ, অকাল প্রয়াত তার বড় বোনের ৯ মাস বয়সী সন্তানকে লালন-পালন করছেন তিনি। তার ৯ বছর বয়সী একটি সন্তানও রয়েছে। তাদের রেখে লম্বা সময়ের জন্য বিদেশে আসলে মন পোড়ে। কিন্তু মা হিসেবে এই ধরনের ত্যাগ স্বীকার করে দেশকে কিছু দিতে পারলে তাদের ভালো লাগার মাত্রাটা বাড়ে। পোখরা/আমিনুল