আমিনুল থাইল্যান্ড থেকে

মাথা উঁচু করে বিদায় নিল বাংলাদেশ

বাংলাদেশের কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন আক্ষেপ করতেই পারেন। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে জিততে পারলে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারত। কিন্তু স্বাগতিকদের বিপক্ষে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেও হার মানে ১-০ গোলে। এরপর জাপানের বিপক্ষে উড়ে যায় ৯-০ ব্যবধানে।

এভাবে বিধ্বস্ত হওয়ার পরও শনিবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এতো ভালো ফুটবল খেলবে বাংলাদেশ তেমনটা কী কেউ প্রত্যাশা করেছিল? কোচ ছোটনও হয়তো করেননি। কিন্তু তার শিষ্যরা তার মান রেখেছে। মাথা উঁচু করে বিদায় নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে।

গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে শনিবার থাইল্যান্ডের চনবুরির আইপিই স্টেডিয়ামে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই-দুইবার এগিয়ে গিয়েও ২-২ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। তাতে এএফসি কাপে প্রথম ড্র ও প্রথম পয়েন্ট পাওয়ার নতুন ইতিহাস গড়েছে তহুরা-মারিয়ারা।

এই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০১৭ সালেও দেখা হয়েছিল বাংলাদেশের। সেবার ১০ জন নিয়ে ৭৪ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেও বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত হার মেনেছিল ৩-২ ব্যবধানে। আজ শনিবারও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ২১ মিনিটে তহুরা খাতুন বাংলাদেশকে গোল করে এগিয়ে নেন। তার গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। বিরতির পর ৭৭ থেকে ৮১ মিনিটের মধ্যে তিন-তিনটি গোল হয়। তার মধ্যে দুটি করে অস্ট্রেলিয়া, একটি বাংলাদেশ। এ সময় এতো বেশি আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ হচ্ছিল যে চোখের পলক ফেলারও সময় পাওয়া যাচ্ছিল না।

দারুণ দারুণ গোলের সুযোগ তৈরি করে যাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া। আর সেটা করছিল বাংলাদেশের রক্ষণাত্মক কৌশলের সুযোগ নিয়ে। এ সময় অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা একের পর এক শট নিতে থাকে গোল মুখে। কিন্তু গোলরক্ষক রূপনা চাকমা দারুণ গোলকিপিং করে বাংলাদেশের জাল রক্ষা করেন। ৭৭ মিনিটে কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে হেড দিয়ে জালে পাঠিয়ে সমতা ফেরান অস্ট্রেলিয়ার ক্লাউদিয়া মিহোসিস।

তবে এক মিনিট পরেই আবারো বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন তহুরা খাতুন। এবারও গোলের যোগানদাতা আঁখি খাতুন। বাংলাদেশের অর্ধ থেকে তার লম্বা ক্রস অস্ট্রেলিয়ার অর্ধে পেয়ে যান তহুরা। তখন তার সামনে কেবল অস্ট্রেলিয়ার গোলরক্ষক মিরান্ডা টেমপ্লেম্যান। তাকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে পাঠিয়ে বাংলাদেশকে উচ্ছ্বাসে ভাসান। অবশ্য ৮১ মিনিটের মাথায় অস্ট্রেলিয়ার পেইজি জোইস থ্রো থেকে বল পেয়ে দূর থেকে শট নেন। তার নেওয়া শট লাফিয়ে উঠেও রুখতে পারেননি রূপনা। তাতে ম্যাচে ফেরে সমতা।

এরপর চলে উভয় দলের আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ। তৈরি হতে থাকে গোলের সুযোগ।  বাংলাদেশের সমর্থকরা শঙ্কায় থাকেন। এই বুঝি গোল হল। এই বুঝি হেরে গেল বাংলাদেশ। এই বুঝি ২০১৭ সালের কষ্টের স্মৃতি ফিরে আসে। এই শঙ্কা নিয়ে ৯০ মিনিট শেষ হয় ২-২ গোলের সমতা নিয়েই। ম্যাচের যোগ করা সময় দেওয়া হয় ৪ মিনিট! এই চার মিনিট যেন ফুরোতেই চাইছিল না বাংলাদেশের সমর্থকদের জন্য। এ সময় অস্ট্রেলিয়া আক্রমণ চালিয়েই যাচ্ছিল। বাংলাদেশ তাদের আক্রমণ রুখে দিচ্ছিল। হঠাৎ রেফারি মাহসা ঘোরবানি লম্বা বাঁশি বাজান।

বাংলাদেশের সমর্থক, কোচিং স্টাফ সবার চোখে-মুখে স্বস্তি ফিরে আসে। মুখে হাসি ফোটে। করতালি দিয়ে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার সমর্থকরা অভিনন্দন জানায় বাংলাদেশকে। করতালির মধ্য দিয়ে ড্রেসিং রুমে ফিরে তহুরা-আঁখিরা।

এর মধ্য দিয়ে এএফসি কাপের টানা দ্বিতীয় মিশন শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের। আগামীকাল দুপুরে দেশের বিমান ধরবে বাংলাদেশ দল। গোলাম রাব্বানী ছোটন তার পরবর্তী মিশনের জন্য জুনিয়রদের প্রস্তুত করবেন। আর মারিয়া-তহুরা-আঁখিরা একে একে জাতীয় দলে নিজেদের জায়গা পাকাপোক্ত করবেন। নিজেদের সেরাটা দিয়ে আবার হয়তো কোনো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করবেন। থাইল্যান্ড/আমিনুল