শিল্প ও সাহিত্য

প্রতিকৃতির আড়ালের প্রতিকৃতি

মুম রহমানইউসুফ কার্শকে আমরা অনেকেই হয়তো চিনি না। জন্ম তুরস্কে। শৈশবেই তিনি মুখোমুখি হন অটোম্যান সাম্রাজ্যের নৃশংসতার। আমের্নিয়ার গণহত্যা তাকে দেখতে হয়েছে। অভাবের তাড়নায় ছোট বোনের মৃত্যু হয়। নিরাপত্তার স্বার্থেই তার বাবা-মা তাকে পাঠিয়ে দেন কানাডায়। সেখানে কুইবেকে তার ফটোগ্রাফার চাচা জর্জ নাকাশ থাকতেন। ইউসুফের স্কুলে পড়া চলতে থাকে, পাশাপাশি চাচার স্টুডিতে টুকটাক কাজও করছিলেন তিনি। জর্জ তার মধ্যে এতোটাই প্রতিভা লক্ষ্য করেন যে, ইউসুফকে পাঠিয়ে দেন সোজা বোস্টনের বিখ্যাত ফটোগ্রাফার জন গারো’র কাছে।চার বছর পর ইউসুফ ফিরে আসেন কানাডা। এসে জন পাউলের স্টুডিওতে কাজ শুরু করেন তিনি। দুই বছর পর পাউল অবসরে গেলে অটোয়ার সেই স্টুডিও ইউসুফের দায়িত্বে চলে আসে। সেটা ছিলো ১৯৩৩ সাল। ১৯৩৬ সালে ইউসুফ প্রথম তার একক ফটোগ্রাফি প্রদর্শনী করেন। তৎকালীন কানাডার প্রধানমন্ত্রী ম্যাকেঞ্জি কিং তার স্টুডিওতে ছবি তুলতে এসেছিলেন। ১৯৪১ সালে উইনস্টন চার্চিল কানাডায় এলে তার ছবিও তুলেছেন ইউসুফ। চার্চিল তাকে মাত্র দুই মিনিট সময় দিয়েছিলেন ছবি তোলার জন্য। সেই ছবিই লাইফ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ঠাঁই পায়। পরেরটুকু রীতিমতো ইতিহাস।এই এক ছবি দিয়ে বিশ্বের বহু খ্যাতিমান ব্যক্তি আর তারকারা ইউসুফকে চিনে ফেলেন। যার ফলাফলটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। যারা এখনো ইউসুফ কার্শকে চেনেন না, তাদের সুবিধার জন্য এবার জানানো যায়, ২০০০ সালে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ১০০ ব্যক্তিত্বের তালিকা করে হু’জ হু। সেই তালিকার ৫১ জন খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের ছবি তুলেছেন ইউসুফ। সোজা বাংলায় বলা যায়, পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি খ্যাতিমান লোকের প্রতিকৃতি ধরা পড়েছে ইউসুফের ক্যামেরায়। আমরা জানিও না, অসংখ্য খ্যাতিমানের যে মুখ আমরা টি শার্টে দেখছি, ইন্টারনেট, বই, ম্যাগাজিন কিংবা কফি মগে দেখছি তার অধিকাংশই ইউসুফের ক্যামেরায় তোলা। বিখ্যাত সব প্রতিকৃতির আড়ালের প্রকৃত মানুষটির নামই ইউসুফ কার্শ। ব্রিটিশ সাংবাদিক জর্জ পেরি বোধ হয় এই বিশ্বসেরা প্রতিকৃতি চিত্রকরকে কিছুটা বুঝেছিলেন। লন্ডনের ‘দ্য সানডে টাইমস’ পত্রিকায় তিনি লিখেছিলেন, ‘যখন বিখ্যাত তারকারা অমরত্বের কথা ভাবে তখনই তারা অটোয়ার কার্শকে ডেকে পাঠায়।’ সত্যিই যেন বিশ্বসেরা তারকারা ইউসুস কার্শের ক্যামেরায় অমর হয়ে আছেন। কিন্তু কী আছে কার্শের ফটোগ্রাফিতে? প্রথমেই বলা যায়, তার ছবির অন্যতম দিক আলোছায়ার খেলা। কার্শ ছিলেন স্টুডিও লাইটিংয়ের গুরু। তার সাদাকালো ছবিতে আলোছায়ার বৈপরীত্য রহস্যময়তার সৃষ্টি করে। তার অধিকাংশ প্রতিকৃতিতে ব্যক্তির হাত দেখা যায়। মুখের অভিব্যক্তির পাশাপাশি তিনি হাতের ভাষাও গুরুত্ব দিতেন। প্রতিটি ছবির জন্যই তিনি হাতে আলাদা করে আলো ফেলতেন। তিনি মানুষের বাহ্যিক রূপের চেয়ে অভ্যন্তরীণ রূপ তুলে ধরতে পছন্দ করতেন। বিখ্যাত ব্যক্তিদের ভেতরের চেহারাটা যেন তার ছবিতে ফুটে উঠতো। তিনি বলতেন, ‘প্রতিটি নারী পুরুষের ভেতরেই একটি গোপনীয়তা লুকিয়ে আছে এবং একজন ফটোগ্রাফার হিসাবে আমার কাজ হলো সম্ভব হলে সেই লুকানো দিকটা প্রকাশ করা। এই আবিষ্কারটি সেকেন্ডের ভগ্নাংশের কম সময়ের জন্য কো