শিল্প ও সাহিত্য

তিয়াশার ঈদ || রণজিৎ সরকার

এক.তিয়াশা ঢাকাতে থাকে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। মডেল স্কুলে। এবার ঈদে বাবা-মার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে এসেছে সিরাজগঞ্জে। ঈদ উদযাপন করতে। তিয়াশার আসার কথা শোনামাত্র নিলয় আর তিশা খুশি হলো। নিলয় আর তিশা ওর চাচাতো ভাইবোন।তিয়াশা রুমে এসে পরনের পোশাক পরিবর্তন করছে। এর মধ্যে নিলয় আর তিশা ঢুকল। তিয়াশা ওদের দেখে বলল, ‘তোমরা কেমন আছ?’ তিশা বলল, ‘তুমি কেমন আছ?’তিয়াশা বলল, ‘ভালো আছি। অনেক দিন পর তোমাদের দেখলাম।’নিলয় বলল, ‘আপু, আমার জন্য কী নিয়ে এসেছ?’তিয়াশা মাকে বলল, ‘ মা, ওই ব্যাগটা কোথায়?’মা বললেন, ‘কোন ব্যাগটা?’‘যে ব্যাগে নতুন কাপড় রাখা আছে।’মা হাত বাঁ দিকে হাত উঁচু করে বলল, ‘ওই যে দেখ, তোমার বাবা ওখানে রেখেছে।’তিয়াশা দৌড়ে গেল ব্যাগের কাছে। তারপর ব্যাগ থেকে দুটি প্যাকেট বের করল। দুইজনের হাতে একটা করে ব্যাগ তুলে দিল। নিলয় ব্যাগ হাত নিল। নিল তিশাও। তিয়াশাকে ধন্যবাদ দিল ওরা।তিয়াশা বলল, ‘কাল ঈদ। ঈদের দিনে পরবে কিন্তু।’তিশা বলল, ‘তোমার নতুন জামাটা দেখি?’তিয়াশা মুচকি হেসে বলল, ‘আজ আমার পোশাক দেখাব না। কাল যখন পরব, তখন দেখাব। আজ একটু পর সবাই মিলে হাতে মেহেদী দেব।’নিলয় বলল, ‘মেহেদী নিয়ে এসেছ?’‘হ্যাঁ, এনেছি।’‘তাহলে বের কর।’তিশা বলল, ‘নিলয় চল, ব্যাগ আমাদের ঘরে রেখে আসি।’নিলয় বলল, ‘চল, রেখে আসি।’নিলয় আর তিশা ব্যাগ রেখে হাত পরিষ্কার করে আবার রুমে এল তিয়াশার কাছে। ওরা এসে দেখে তিশায়ার হাতে যেন কী।নিলয় বলল, ‘আপু, হাতে তোমার হাতে ওটা কী?’ তিয়াশা বলল, ‘এটাকে বলে ট্যাব। এ দিয়ে আমি গেম খেলি।’‘কী খেল?’‘তোমরা তো গ্রামে হাডুডু, গোল্লাছুট, বউচি, কানামাছি আরো কত রকমের খেলা খেলো। কিন্তু আমি শহরে থেকে এগুলোর সুযোগ পাই না। তাই একটা নির্দিষ্ট সময়ে এই জিনিসটার দিয়ে বিভিন্ন রকমের খেলাখেলি।’‘আমাকে শিখাবে না?’‘অবশ্যই শেখাব। তবে কাল। এখন না। হাতে মেহেদী দেব।’‘ঠিক আছে আপু, কাল কিন্তু শিখব।’তিশা বলল, ‘তুমি গ্রামে এসেছ। আমরা সবাই মিলে তোমাকে নিয়ে বউচি, কানামাছি খেলব।’‘অবশ্যই খেলব। এখন আমরা হাতে মেহেদী দেই।’‘ঠিক আছে।’ওরা হাতে মেহেদী দিতে লাগল। মেহেদী দিতে দিতে বিভিন্ন গল্প করতে করতে লাগল ওরা। তারপর রাতে ঘুমিয়ে পড়ল ওরা। দুই.ঈদের দিন। নতুন জামা পরেছে ওরা। সেমাইসহ বিভিন্ন রকমের খাবার খেয়ে ট্যাবটা বের করল তিয়াশা। তিশা আর নিলয়কে নিয়ে সেলফি তুলতে লাগল ও। নিলয় অবাক হয়ে বলল, ‘আপু, নিজের ছবি নিজে তোলা যায়?’তিয়াশা বলল, ‘হ্যাঁ, এই ছবি তোলাকে বলে ‘‘সেলফি’’।’‘তাই।’তিশা বলল, ‘আমরা গ্রামে থাকি, এত কিছু বুঝি।’তিয়াশা বলল, ‘এই তো আমি বুঝিয়ে দিলাম তোমাদের।’নিলয় বলল, ‘আরো ছবি ওঠায়।’তিয়াশা ছবি তুলতে লাগল বিভিন্নভাবে।একটু পর বৃষ্টি শুরু হলো। তিয়াশার খুব ইচ্ছা হলো বৃষ্টিতে ভেজার। ওদের দুজনকে ডেকে তিয়াশা বলল, ‘চলো, আমরা বৃষ্টিতে ভিজি।’সঙ্গে সঙ্গে ওরা দুজন তিশায়াকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগল।তিয়াশা বলল, ‘বৃষ্টি ভেজা হাঁস দেখব? কোথায় পাওয়া যাবে হাঁস?’তিশা বলল, ‘পুকুর পাড়ে গেলে দেখা যাবে।’‘চলো তাহলে পুকুর পাড়ে?’ওরা পুকুর পাড়ে গেল। দেখতে পেল, কিছু হাঁস পাড়ে বসে আছে। আর কিছু হাঁস পুকুরের পানিতে ভাসছে। তিয়াশা হাঁস দেখে অবাক হলো। আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল ও। সঙ্গে সঙ্গে পাড়ে বসা হাঁস ধরার চেষ্টা করল। হাঁস টের পেয়ে পানিতে লাফ দিল। সঙ্গে সঙ্গে তিয়াশা দিল লাফ। হাঁস ধরতে পারল না। তিয়াশা সাঁতার জানে না। সে পানির ভেতর পড়ে চিৎকার করে বলতে লাগল, বাঁচাও বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও।’নিলয় আর তিশা সাঁতার জানে। ওরা দুজন সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিল তিয়াশাকে বাঁচানোর জন্য। তিয়াশাকে পানি থেকে পাড়ে তুলল ওরা। তারপর তিয়াশার পেট চেপে মুখ দিয়ে পানি বের করল। তিয়াশা ধীরে ধীরে বলল, ‘তোমাদের ধন্যবাদ। আমাকে বাঁচানোর জন্য। তবে আমি যে পানিতে পড়েছিলাম। একথা বাড়ির কাউকে বলা যাবে না। বললে আমাদের বকা দেবে।’তিশা বলল, ‘ঠিক আছে, কাউকে বলব। তোমাকে কাল সাঁতার শেখাব।’‘আচ্ছা, আমি শিখব। এখন বাড়ি চলো।’‘একটু পরে যাই। তুমি স্বাভাবিক হও।’ কিছুক্ষণ পর ওরা বাড়িতে গেল। বৃষ্টি ছেড়ে গেল।তিশা আর নিলয়দের স্কুল মাঠে ঈদের মেলা বসে প্রতিবছর। এ বছরও বসেছে। বিকেলে বাবা-চাচাদের সঙ্গে মেলাতে গেল ওরা।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ জুলাই ২০১৫/রণজিৎ/রিশিত