শিল্প ও সাহিত্য

ক্লাসরুমে পাখি || রণজিৎ সরকার

ধ্রুব ক্লাসরুমে বসে আছে। শেষ বেঞ্চে। পাশে জানালা। জানালার বাইরে কয়েকটা গাছ। আমগাছ। রাজন স্যার ক্লাসরুমে ঢুকলেন। তারপর বললেন, ‘ধ্রুব, তুমি প্রতিদিন জানালার পাশে বসো কেন?’ধ্রুব দাঁড়িয়ে বলল, ‘স্যার, ভালো লাগে আমার।’‘কেন ভালো লাগে? ভালো লাগার কারণ কী?’ধ্রুব মাথা নিচু করে বলল, ‘স্যার, কোনো কারণ নাই।’স্যার জোরে ধমক দিয়ে বললেন, ‘অবশ্যই কারণ আছে। তুমি কি সেলফি তোলার জন্য শেষ বেঞ্চে বসো?’‘না স্যার।’‘তাহলে প্রথম বেঞ্চে না বসে জানালার পাশে, শেষ বেঞ্চে বসো কেন?’ধ্রুব বলল, ‘স্যার, আমি পাখি দেখি।’ক্লাসের সবাই হেসে ফেলল।স্যার অবাক হয়ে বললেন, ‘পাখি দেখি মানে? কোথায় পাখি?’ধ্রুব জানালার দিকে তাকাল। তারপর বলল, ‘স্যার, ওই যে পাখি বসে আছে। আমগাছে।’স্যার, জানালার কাছে এলেন। তাকিয়ে দেখলেন সত্যি তো পাখি বসে আছে! টুনটুনি পাখি।‘পাখির সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কী?’‘স্যার, পাখির সঙ্গে আমি কথা বলি।’ক্লাসের সবাই ধ্রুবর কথা শুনে হেসে ফেলল। স্যারও অবাক হলেন। এ কী করে সম্ভব? পাখির সঙ্গে কথা। কারণ আছে নিশ্চয়। স্যার বললেন, ‘ধ্রুব, সত্যি কথা বলো। পাখিরা কি সত্যি তোমার সঙ্গে কথা বলে?’মাথা নাড়াতে নাড়াতে ধ্রুব বলল, ‘জি স্যার, সত্যি কথা বলে।’ক্লাসরুমের সবাই জানালা কাছে এসে ভিড় করল। পাখি দেখার জন্য। স্যার সবাইকে সরিয়ে দিয়ে তাদের বেঞ্চে বসতে বললেন। তারপর একে একে সবাই গাছের পাখি দেখতে লাগল। কিছুক্ষণ পর স্যার বললেন, ‘ধ্রুব, পাখি কি তোমার কথা শোনে।’‘জি স্যার, শোনে।’‘বিশ্বাস করব কী করে?’‘স্যার, আপনি সরে যান। চেয়ারে বসেন। আমি পাখিটাকে ক্লাসরুমে নিয়ে আসি।’স্যার অবাক হয়ে বললেন, ‘সত্যি আনতে পারবে তো?’‘পারব স্যার। আপনি চেয়ারে বসেন।’স্যার অবাক হয়ে চেয়ারের বসলেন। বাঁ হাত দিয়ে ধ্রুব জানালার গ্রিল ধরল। ডান হাত নাড়াতে নাড়াতে বললেন, ‘আমার টুনটুনি। ক্লাসরুমে এসো।’ধ্রুবর ডাক শোনামাত্র টুনটুনি পাখিটি জানালার গ্রিলে এসে বসল। ধ্রুব পাখিটাকে হাত দিয়ে ধরল। ক্লাসের সবাই অবাক হলো পাখির আসা দেখে।স্যারের টেবিলে পাখিটাকে রেখে ধ্রুব বলল, ‘কেউ পাখিটার শরীরের হাত দেবে না। আমি ছাড়া অন্য কেউ হাত দিলে কিন্তু উড়ে চলে যাবে।’স্যার বললেন, ‘তোমার পাখি কী চায়?’ধ্রুব বলল, ‘স্যার, আমার পাখিটার একটা ইচ্ছা আছে। আমাকে অনেক বার বলেছে, তার ইচ্ছার কথাটা।’‘ইচ্ছাটা কী, সেটা বলো?’‘স্যার, ও স্কুলে ভর্তি হতে চায়। আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়।’ক্লাসের সবাই আবার হেসে ফেলল ধ্রুবর কথা শুনে। স্যার পাখির দিকে তাকালেন। পাখি মাথা নাড়াল। স্যার বুঝতে পারল, তাই তো। স্যার বললেন, ‘আজ থেকেই টুনটুনি আমাদের সঙ্গে ক্লাস করবে।’রিয়া প্রথম বেঞ্চ থেকে উঠে পাখিটা ধরতে গেল। পাখিটা টের পেয়ে দরজা দিয়ে উড়ে চলে গেল। স্যারসহ ক্লাসরুমের সবাই বের হয়ে পাখিটাকে দেখতে লাগল।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুুলাই ২০১৫/কমল কর্মকার