সৌরচিত্র আমাকে সেজদা দেয় || জব্বার আল নাঈম
আমি আছি বলে ফুলে ফুলে পাখি আসে
শান্তি খুঁজে পায় পৃথিবীর মানুষ;
দুধের শিশু শিল্পব্যঞ্জনায় হাসে
সভ্যতায় আধুনিক ঢেউ।
আমি আছি বলে-নরকের উত্তাপ কম
স্বর্গের বাতাস এইখানে প্রবাহিত
যুদ্ধ যায় থেমে।
লাউ লতার মতো বাড়ে শান্তি-শৃঙ্খল
দিনের আলো কিছুটা উজ্জ্বল।
সমাজ-দর্শন-সাহিত্য সংকেত বুঝে-
রাষ্ট্র জেগে থাকে মধ্যরাত;
পায়ের ধুলা পবিত্র সুরমা ভাবে
আমার যৌবন বন্ধুরা চোখে মাখে।
মঞ্জুরি মহাত্মায় অটো প্রটোকল
যুগে যুগে দীক্ষা সাজিয়েছি লতায় পাতায়;
ফুলবাগান;
বাগানের সুবাস নিয়ে তোমরা লেখো-
গল্প কবিতা গান।
আমি আছি বলে-নারীরা বারোমাস যুবতী;
স্বর্গের হুরপরী এখনও কুমারী
মুক্তি ও মন্ত্রণার বাণী নরের টানাটানি
অইখানে কিছু নেই
আধেক পাগলামি।
সৌরচিত্র সেজদা দেয় বুকে টেনে প্রতিভার ছায়ায়
পৃথিবীর সংসার;
ডানার আশ্রয় আশ্রমে অনেকগুলো নক্ষত্র-
হাসে আবার কাঁদে; মঙ্গল মাসে।
আর ব্যর্থরা ভুলচুলে শাল বানায়
রাষ্ট্র ভাবে মহতী উদ্যোগ;
কে বলে, তাহারা আমার অনুজ?
এই শ্রাবণ || অহ নওরোজ
নদীতীরে দাঁড়িয়ে থাকি।
পানিতে নিজের দীর্ঘরেখা
আর অদ্ভুত রঙ
এই শ্রাবণেও কেমন মিহিন হয়ে থাকে,
আমি বন্ধনের গন্ধ পাই।
মনে হয়,
এই এক ফালি সবুজ,
ধীর হতে ধীরে কেঁপে ওঠা
এই জল সমতল,
এই পশ্চিমা রোদ,
আরও পরে জ্বলে ওঠা
সারি সারি বাতি,
ফাল্গুনের মত নারী,
ছায়া জোছনার আকাশ ব্যালকুনী,
ভিন্ন আলেয়া আর
অজান্তেই নড়ে ওঠা আমার জন্মরং
এক তসবীর তৈরি করে রেখেছে
আমার মাথা; গায়ে
ও আত্মায়।
আনন্দ জোগাতে নয়, জাগাতেই তারা
ঝিলমিল করে ওঠে দিনরাত।
তবু কেন জানি বুকের ভেতর হাহাকার!
আমি চলে গেলে এই আনন্দদাগ
রয়ে যাবে কি?
জাগবে কেউ? জাগাবে কোন মৃন্ময় ?
কবিতা, পাশ ফিরে শোও || রফিক মুয়াজ্জিন
পাশ ফিরে শুয়ে থাকো, কবিতা আমার
জাগিয়ে রেখো না আর, এখন অন্ধকার
অনেক কাব্যি করে বহুত ঠকেছি আমি
বিবিধ সঙ্গমে ক্লান্ত হয়েছি, এবার থামি
এ ছাড়াও তো অনেক কাজ পড়ে আছে
সেসব করতে দাও, পাছে
কাম হবে শুধু, আর হবে না তো কাজ
পাশ ফিরে শোও, পাশ ফিরে শুয়ে থাকো আজ
মধ্যরাতের সুরবালা।।মাহফুজ রিপন
মাঝ রাতের পাখিরা উড়ে যায় দূর আকাশে। বাল্যবন্ধুর মত শুভ্র জ্যোৎস্না চিনিয়ে দেয় ঘরে ফেরার পথ। বাতাসে ভর করে জলকাদার ঘ্রাণ। নদীতে জলের প্রসূন আজ। তৃষ্ণায় বুক ফেটে যায়- হায়রে গন্ধ কুসুম। বহমান নদীর দিকে তাকাই, জল ঝরার শব্দে নৈঃশব্দের ঘুম ভাঙ্গে। আমার গোপন পাপ গুলো শুষে নেয়- মধ্যরাতের জলধারা। মাটির শরীর হেঁটে যায় পূবের দিক। আদি শয্যা-শ্মশান ঘাটে পুড়তে থাকে সাধের শরীর। গহীন অঙ্গারে ক্রোধের জ্বালা- জ্বলে। সুরবালার কান্নায়- ভোজবাতির মতো অন্ধকারের ঘণ্টা বাজে।
ধ্বংস || শায়লা সিমি সুবর্ণ ঢেউ তরঙ্গে মনোরম বিনোদ-বেণী সঙ্গে মন আটকে যায় প্রভুর এ ভব খেলা তুঙ্গে। নূপুরে জাগে কাঞ্চনজঙ্ঘা জলের উপর ঝিলিমিলি রোদের জলকেলি মাছ ফেলে প্রেমলীলা সাধে মাছরাঙ্গা। দু`পা হেঁটে গিয়ে মহামায়া`র ঘর তার পাশে জেগে উঠে অলি`র দিব্য চর! প্রভু তুই ভালবাসা অলি তুমি প্রেম! পরম প্রেমে কন্দল বুঝি সৌহার্দের কাল শেষ। আমরা হিংসুটে বেশ! প্রভু তুমি সঙ্গে থেকো হবে হবে নির্বংশ বিধর্মীরা আজ ফের! ধ্বংস... ধ্বংস...
মনে পড়া চোখ ||
চিনতে চিনতে চালিয়ে নিচ্ছি জীবন
মুছতে মুছতে ওলট-পালট স্মৃতি৷
বারান্দাঘেঁষা কুয়াশায় কার মুখ!
দেখতে চাই না, দরজা বন্ধ রাখি৷
পুড়িয়ে দিতাম চুমুর স্বাদটি ঠোঁটের
সিগারেট নেই, পকেট শূন্য খা খা৷
এই তৃষ্ণার ওপারে তোমার মুখ
ধোঁয়ারা আঁকছে, ফুসফুসে তুলে রাখি৷
বিষ জমে গেছে, বিষ জমে যায় রোজই
পুরনো প্রেমের বন্ধ কপাট খুলে
হুড়মুড় রোদ হেমন্ত আনে যদি
না শুকানো ক্ষত কুয়াশায় পেতে রাখি৷
বুঝিতো কেন যে সন্ধ্যামুখী আলোয়
ভুল বোঝা দিন পিচ রাস্তায় হাঁটে,
ফেলে রেখে যায় `অনুধাবনের দায়`৷
মনে পড়া চোখ চোখেই লুকিয়ে রাখি৷
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ নভেম্বর ২০১৫/তারা