শিল্প ও সাহিত্য

সেলিনা হোসেনের ধারাবাহিক উপন্যাস || ১৯তম কিস্তি

বেশি কথা বলবি না। বানিয়ে বানিয়ে বোঝা যায়? তাহলে বলতে হবে তুই বানিয়ে বোঝার পণ্ডিত। বোঝার জন্য নিজের অভিজ্ঞতা লাগে।

 

মারব ঘুঁষি, শালা। মানুষের মস্তিষ্ক বলে যা আছে তাকে কাজে লাগাবে না কেউ?

হয়েছে থাক। এখন তোকে কফি দেব। খেয়ে চলে যা।

ফ্রিজে কী আছে দেখব না?

না, আজ সে সুযোগ নেই। বসে থাক এখানে। কফি শেষ করে এক মিনিট থাকতে পারবি না।

রেগে আছিস কেন?

রাগ না। এটা একা থাকার হিসাব। তুই থাকা মানেই আমার একা থাকার সময় নষ্ট।

 

ফুস। ও কার্পেটের ওপর চিৎপটাং হয়। তারপর একটি প্রেমের গান করে। মশিরুলের মনে হয় শুনতে ভালোই লাগছে। আরো কিছুক্ষণ গান শোনা যায়। ওর গলায় সুর আছে। মশিরুল ফ্রিজ থেকে টিকিয়া বের করে ওভেনে দেয়। কান পেতে জহিরুলের গান শোনে-  ‘তোমাকে ভালোবেসে জীবন পাড়ি দিতে চাই। কাছে আসো বা না আসো কিছু এসে যায় না।’ শুনতে শুনতে মৃদু হাসে মশিরুল। এমন ভাবনা কি কোনো নারীকে নিয়ে ভাবা যায়? নাকি ভাবতে হয় আরও বড় পরিসরে- যেখানে পূর্ববঙ্গের হয়ে ওঠার ইতিহাস আছে-  নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মানুষের আত্মার ধ্বনি আছে। নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মানুষকে খোঁজার আকাঙ্খা ফুরোয় না। জহিরুল এভাবে ভাবে না। ওর ভাবনায় গতি নেই, স্থবিরতা আছে। সেদিন ওকে চা আর টিকিয়া খাওয়ালে ও বলেছিল, তোর মতো বন্ধু হয় না। আসলেই কি তাই? মাঝে মাঝে নিশাত বলে, তোমার মতো প্রেমিক হয় না। আসলেই কি তাই? মঈন কখনও বলে, আপনার মতো মনিব হয় না। আসলেই কি তাই? প্রতিবেশীদের কেউ কেউ বলে, তুমি থরো জেন্টেলম্যান। সবকিছু নিয়ে জীবন ভাবনায় ও কোথায় আছে তা ও ভাবতে পারে না।

 

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে তিনটে বাজে। মঈন এখনও ফিরল না। কোথায় গেল ছেলেটি? সিনেমা দেখা ওর নেশা। রাতের শো দেখতে পছন্দ করে। সময়মতো ফিরেও আসে। আজকে কী হলো ওর? মোবাইলে সময় দেখে বালিশের পাশে রাখে মোবাইল। যদি কোনো জরুরি ফোন আসে? এত রাতে অহেতুক ফোন করার কেউ নেই। নিশাতও করে না। বলে, রাতে তোমাকে ডিস্টার্ব করতে চাই না। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে থাকবে। যেন ক্ষুদে পোকার শব্দও তোমার চেতনায় ঘা দিতে না পারে। কিন্তু ঘুম আসছে না মশিরুলের।

 

হলো কী? নিজেকেই প্রশ্ন করে। মাঝেমধ্যে এমন তো হয়ই। তখন বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে। সব ঘরের বাতি জ্বালায়। ডেক ছেড়ে দিয়ে গান শোনে। মনে হয় গান ওর কাছে মায়াবী আলো। গানের এক একটি বাণী এক একরকম রঙ নিয়ে ওর কানের গহ্বরে জ্বলে ওঠে। তুমি শব্দ গোলাপি আলো হয়। কোন শব্দ সবুজ রঙ হয়। কাননের শব্দ নীল রঙ হয়। ফুল শব্দ বেগুনি রঙ হয়- তখনও ‘তুমি কোন কাননের ফুল’ শুনে সুরের আবেশ নিয়ে রঙের ভুবনে ঢুকে যাওয়ার মজা আছে ওর নিঃসঙ্গ জীবনের ধারাপাতে। এভাবে মনের মাধুরী মিশিয়ে গান শুনতে শুনতে ও সোফার ওপর ঘুমিয়ে পড়ে। তখন চারদিকে দিনের আলো ফুটি ফুটি করছে।

 

ঘুম ভাঙে অনেক বেলায়। দুপুর ছুঁইছুঁই সময় তখন। ধড়মড়িয়ে উঠে বসে। ঘরের বাতিগুলো বন্ধ করে। বাথরুমে যায়। শুনতে পায় মোবাইল বাজছে। মোবাইল অন করতেই ভেসে আসে বদরুলের কণ্ঠস্বর। বদরুল ধমক দিয়ে বলে, বারো-তেরোবার ফোন করেছি। মোবাইল ধরিস না কেন? কী হয়েছে তোর?

শেষ রাতের দিকে ঘুম এসেছে। টের পাইনি রে।

নাস্তা খেতে হবে না। এখনই মেডিক্যাল হাসপাতালের মর্গে চলে আয়।

মর্গে? কী বলছিস তুই?

আসতে বলেছি আসবি। বেশি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না।

ফোন কেটে দেয় বদরুল। কিছুক্ষণ বিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে থাকে মশিরুল। চারদিকে তাকায়। মঈন বোধহয় রাতে ফেরেনি। ঘরের মধ্যে ওর ফেরার চিহ্ন নেই। ও দরজা খোলার চেষ্টা করে। বুঝতে পারে, তালাটা বাইরে থেকে লাগানোই আছে। তখন বদরুলের কণ্ঠস্বর ওর দুকানে উচ্চকিত হয়ে ওঠে। ও দ্রুতপায়ে গিয়ে ঠোকে। হাত-মুখ ধুয়ে কাপড় বদলে শরীফকে ফোন দেয়। শরীফের ফোন বেজে বেজে থেমে যায়। দুবার-তিনবার ফোন দেওয়ার পরেও যখন ধরে না, তখন নিশাতের মোবাইলে ফোন দেয়। রাতে দুজন মারামারি করেছে।

 

এখন কী করছে? ঘুমাচ্ছে কী? পরে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবল, নিশাত হয়তো মাইশাকে নিয়ে স্কুলে গেছে। নাকি অন্য কিছু? এইসব ভাবনার মাঝে নিশাত দ্বিতীয়বার ফোন ধরে।

মশরু আমি রাস্তায়। বাড়ি ফিরছি।

কতদূরে আছো?

বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছি। আর বেশিক্ষণ লাগবে না।

তোমার গলা খুব নার্ভাস শোনাচ্ছে মশরু।

গতরাতে মঈন দরজায় তালা দিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিল। রাতে ফিরে আসেনি। আমি ভেতরে আটকা পড়েছি।

নিশাত হাসতে হাসতে বলে, ও এই খবর। তুমি তো বন্দিজীবন ভালোবাসে। থাকো বন্ধ ঘরে। তোমার নিঃসঙ্গতা ফুল হয়ে ফুটুক।

আহ, নিশাত রসিকতা করার সময় এখন নয়। আমার বন্ধু বদরুল আমাকে মেডিক্যালের মর্গে যাওয়ার হুকুম দিয়েছে। আমাকে তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে হবে সেখানে। তুমি এসে আমার দরজা খোল। আমি পুবদিকের বারান্দায় দাঁড়াচ্ছি। ওখান থেকে চাবি দেব তোমাকে।

 

আমি বাড়িতে পৌঁছে তোমাকে ফোন দেব। অপেক্ষা করো।

অপেক্ষার সময় যে এমন অনন্ত হয় তা ওর জানা ছিল না। মশিরুল পায়চারি করে। এককাপ চা বানিয়ে চুমুক দেবে সে ইচ্ছাও হয় না। এমনকি ফ্রিজে যে খাবার আছে সেসব বের করেও খাবার ইচ্ছা হয় না। এত শৈথিল্য জীবনের বোঝাপড়ায় এমন অনিবার্য হয়ে ওঠে, তা ওর জানা ছিল না। ওর প্রবল অস্থিরতায় ঘর-বারান্দা করে। ফোন আসে বদরুলের।

কী রে, বের হয়েছিস?

 

রাতে মঈন আমাকে আটকে রেখে গিয়েছিল সিনেমা দেখতে। তুই তো জানিস, ও প্রায়ই এমন করে। আমি অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিলাম। ও ফেরেনি। দোতলার মিসেস শরীফ মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গেছে। তাকে ফোন করেছিলাম পথে আছে। তিনি এলেই বের হতে পারব। কী হয়েছে বলবি দোস্ত।

আয়, কথা হবে। আমি মর্গের সামনে আছি।

তুই ওখানে কী করছিস?

ফোন কেটে দেয় বদরুল। ওর আরও অস্থির লাগে। অবশ্য অস্থিরতার অভিজ্ঞতা আছে ওর। বাবা যেদিন মেঘনা নদীতে ডুবে গেল সেদিন বাবাকে খোঁজার সময় এর চেয়ে বেশি অস্থিরতা ওকে পেয়ে বসেছিল। সেই অস্থিরতার জের এখনও ওর ভেতরে তোলপাড় করে। প্রতিটি মুহহৃর্ত এখন ওর সামনে এক একটি বিশাল অমাবস্যা।

 

অল্পক্ষণে নিশাত এসে যায়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওকে দেখেই চাবির গোছা নিচে ফেলে মশিরুল। এতক্ষণে ওর ভেতরের কাঁপুনি থামে। নিশাত দরজা খুলে জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছে?

জানি না। ও কিছু বলছে না। যেতে বলছে। মঈনের কিছু হতে পারে কি-না ভাবছি। গেল সিনেমা দেখতে। এখন ওকে কি আমি মর্গে খুঁজতে যাব নিশু?

আমি তোমার গাঙ্গেয় বদ্বীপ। বদ্বীপের পোড়খাওয়া জীবনের সঙ্গে আর একটি ঘটনা যোগ করো না। আমি ওপরে যাচ্ছি। মর্গ শুনে আমার ভীষণ ভয় করছে।

 

নিশাত দ্রুতপায়ে সিঁড়ি ভাঙে। মশিরুল ঘরে তালা লাগিয়ে রাস্তায় এসে রিকশায় ওঠে। অ্যালিফ্যান্ট রোড থেকে হাসপাতাল বেশি দূরে নয়। কিন্তু ট্র্যাফিক জ্যাম ভয়াবহ। ও ঘামতে থাকে। মঈনের বাড়ির খবর ওর জানা আছে। মা অসুস্থ। ওর বোনের কাছে থাকে। বছর দুয়েক আগে বাবা মারা গেছে। বাড়িতে তিন চাচা আছে। ওরা ওর খবর রাখে না। ঢাকা শহরে ওর কেউ নেই। মশিরুল নিজেই ওর নির্ভরতার মানুষ। মর্গ মানে মৃত্যু। যদি ওর তেমন কিছু হয় তাহলে কী করবে? মা তো ঢাকা শহরে আসতে পারবে না। বোনও না। বোনের স্বামী তাজুল যদি আসতে চায় তাহলে?

 

মশিরুল আর ভাবে না। বিষণ্ণ বোধ করে। ওর নিজের জন্যও দুঃখ হয়। ও নিজেই বা কাকে অবলম্বন করবে। একজন মানুষের সঙ্গে একাত্ম হওয়া খুব সহজ কাজ নয়। তাকে আপন করে নেওয়াও সহজ নয়। সম্পর্ক গড়ে উঠতে সময় লাগে। নানাকিছু ভাবনার মাঝেও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি গেটে রিকশা থেকে নামে। দ্রুতপায়ে মর্গের দিকে এগোলে দূর থেকে দেখতে পায় বদরুলকে। আম গাছের নিচে বসে আছে বদরুল। ও কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে, কেন এখানে ডেকেছিস?

মঈন কি বাড়িতে আছে?

 

কাল রাতে সিনেমা দেখতে বেরিয়েছিল। আর ফিরেনি। ওর জন্য রাত জেগে ছিলাম বলে ঘুম ভাঙতে বেলা হয়েছে। তুই ওর কোনো খবর জানিস? তুই এখানে এসেছিস কেন?

আমার এক আত্মীয় অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছেন। মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে এসেছি। যিনি মারা গেছেন, উনি ওর চাচা শশুর।

পোস্টমর্টেম হয়েছে তার?

হচ্ছে। সে জন্য বসে আছি। আর বসে আছি তোর জন্যও।

মঈন কি মর্গে?

হ্যাঁ। একজনকে দেখতে এসে দুজন মানুষকে দেখা হলো মর্গে। যা দেখে আয়।

ও এখানে কেন?

কেন, তা পরে জানবি। আগে দেখে আয় ওকে।

তুইও আমার সঙ্গে চল।

 

না, না, আমি আর যেতে পারব না। আমি এখানে অপেক্ষা করছি। তুই ঘুরে আয়।

মশিরুল মর্গের ভেতরে ঢোকে।

মশিরুল নঈমের লাশের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

মশিরুল ওর রক্তাক্ত শরীর দেখে আঁতকে ওঠে।

মশিরুল দুহাতে মুখ ঢাকলে শরীরে কাঁপুনি ওঠে।

মশিরুলর সামনে রক্তাক্ত মৃত নঈম একটি মৃতনগরী হয়ে যায়। ওর বুকের ভেতর অজস্র শব্দরাজি ধিক্কারে সোচ্চার হয়ে ওঠে। ওর একজন বড় মানুষের কথা মনে পড়ে- যে মুহূর্তে তুমি তোমার নীতি ও বোধ বিসর্জন দাও, তখনই তুমি একজন মৃত মানুষে পরিণত হও। তখন তোমার সংস্কৃতি মৃত হয়ে যায় এবং তোমার সভ্যতাও।

 

একটি সরল, সাধারণ তরুণকে যারা মেরে ফেলে, সে শহরে মৃতের সংখ্যা বাড়ে। সে শহরে জীবিতরা মৃত শহরের মানুষ হয় এবং শহরের কোনো প্রাণ থাকে না।

মশিরুল ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।

পেছন থেকে বদরুল এসে ওর ঘাড়ে হাত রাখে। বলে, আয়। আমাদের জীবনে এ দেখার শেষ থাকবে না।

আমার তো জানতে হবে, ওর কী হয়েছিল।

চল ডিউটি ডাক্তারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, কে ওকে এখানে এনেছে। পুলিশ না সাধারণ মানুষ।

দুজনে ইমার্জেন্সির ডিউটিরত ডাক্তারের কাছে আসে।

বদরুল বলে, আমার এক আত্মীয় দুর্ঘটনায় মারা যায়। পোস্টমর্টেমের জন্য তার লাশ মর্গে আছে। মর্গে গিয়ে আমি আর একটি লাশ দেখি।

একটি ছেলের লাশ? নাম পরিচয়হীন?

হ্যাঁ, ছেলেটি ওর ঘরের ছেলে।

মশিরুল গলার স্বর কঠিন করে বলে, আমি জানতে চাই ও কীভাবে এখানে এলো।

কাল রাতে আমি তো ডিউটিতে ছিলাম না। তাই আমি ঠিক জানি না। আমি রেজিস্টার দেখে বলছি।

 

ডাক্তার রেজিস্টার খুলে দেখেন। বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশ হিসেবে ও রেজিস্টারের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পুলিশ ওকে এখানে এনেছে। আপনারা কোথায় ছিল কাল রাতে, সেখানে গিয়ে খোঁজখবর করুন। তারপর থানায় গিয়ে ডায়েরি করবেন।

মশিরুল নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না। ভেজা কণ্ঠে বলে, আমি ওর লাশ দাফন করতে চাই।

ময়নাতদন্তের পরে আপনি লাশ পাবেন। ওর ছবি এবং বাবা-মায়ের নাম-ঠিকানাসহ কাগজ আনুন, আমি লাশ রিলিজের ব্যবস্থা করে দেব।

 

মশিরুল হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বলে, তুই ওকে এখানে না দেখলে আমি জানতেও পারতাম না যে কোথায় গেল। ও আমার কাছে নিখোঁজ মঈন হয়ে থাকত। জীবনভর আমি ভাবতাম কোনোদিন না কোনোদিন ও আমার কাছে আসবে। বলবে, আমি মেঘনা নদীতে হারিয়ে গিয়েছিলাম। একজন জেলে আমাকে বাঁচিয়েছে। আমি পথ খুঁজে পেয়ে আপনার কাছে এসেছি স্যার-

বদরুল ওর ঘাড়ে হাত রেখে বলে, তুই এতটা ভেঙে পড়বি তা আমি ভাবিনি রে।

 

ঠিক আছে। আমি যাই। সিনেমা হলের সামনে গিয়ে দেখি কী হয়েছে তা জানতে পারি কি-না। আমি যখন ওকে আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে যাব, তখন কিন্তু তুই আমার সঙ্গে থাকবি বদরুল।

না রে, তা পারব না। আমাকে তো আমার আত্মীয়ের লাশের সঙ্গে তেঁতুলিয়া যেতে হবে। পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায় আছি।

ওকে। আমি যাচ্ছি।

 

মশিরুল রিকশা ডেকে উঠে পড়ে। সিনেমা হল তো এখন বন্ধ। অন্যদের পাওয়া যাবে না। দারোয়ানের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে। কী এমন ঘটনা ঘটল যে, নঈমকে এভাবে মরে যেতে হলো? মশিরুলের ভাবনা এলোমেলো হয়ে যায়। কখনও মনে হয় শহরটা মেঘনা নদী। কখনও মনে হয় শহরটা একটা কবরস্থান। এখানে কোনো জীবিত মানুষ নেই। হলের সামনে এসে রিকশা থেকে নামলে বুঝতে পারে, গত রাতে এখানে একটা কিছু হয়েছে। চারদিকে ভাংচুরের ফলে বেহাল অবস্থা। ও সামনে এগিয়ে কোনায় বসে থাকা পানের দোকানদারের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। বলে, এই হলে কাল রাতে একটি ছেলে সিনেমা দেখতে এসেছিল। তারপর আর বাড়ি ফেরেনি।

পান দোকানদার খানিকটা উত্তেজিত হয়ে বলে, কত বড় ছেলে? বয়স কত?

সতেরো-আঠারো বছর বয়স হবে।

সর্বনাশ! তাহলে তো সেই ছেলেটাই হবে।

কোন ছেলে! আপনি দেখেছেন ওকে?

সন্ত্রাসীরা ওকে পিটিয়ে মেরেছে।

তখন হলের আরেক পাশ থেকে এগিয়ে আসে একজন। জিজ্ঞেস করে, আপনি কে?

আমি একটি ছেলেকে খুঁজতে এসেছি। পান ভাইয়ের কাছ থেকে খবর শুনেছি। কী হয়েছিল ওর? -চলবে..

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জুন ২০১৬/সাইফ