শিল্প ও সাহিত্য

পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার পেলেন যারা

অলাত এহসান : পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার-২০১৭ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতি বছর ‘সাহিত্য উৎসব ও লিটল ম্যাগাজিন মেলা’ সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অধীনে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার প্রদান করে। গত বুধবার বিকেলে বাংলা আকাদেমির মোহরকুঞ্জ মুক্তমঞ্চে মেলা ও স্মারক সম্মান অর্পণ অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর মোট ১৪টি বিভাগে স্মারক সম্মান দেওয়া হয়েছে। এ বছর অনুবাদ সাহিত্যে সামগ্রিক অবদান রাখার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সাহিত্য আকাদেমির লীলা রায় স্মারক সম্মান পেয়েছেন অধ্যাপক-অনুবাদক অভিজিৎ মুখার্জী। জাপানি থেকে বাংলা অনুবাদে তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। অনুষ্ঠানে অভিজিৎ মুখার্জীকে উত্তরীয় প্রদান করেন শাঁওলি মিত্র। মঞ্চ থেকে জানানো অনুবাদক পরিচিতিতে বলা হয়, ‘শ্রী অভিজিৎ মুখার্জী পেশায় প্রযুক্তিবিদ্যার অধ্যাপক। পাশাপাশি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানি ভাষার শিক্ষক। নানা পত্রপত্রিকায় জাপানি ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন কথাসাহিত্য ও কবিতা। প্রাবন্ধিক হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাঁর রচিত একটি গ্রন্থ ‘যে ভারতীয়রা ইংরিজিতে লিখছেন’। সরাসরি জাপানি থেকে বাংলায় তাঁর নির্ভরযোগ্য অনুবাদ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। হারুকি মুরাকামি বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহলে জনপ্রিয় এবং বহুচর্চিত কথাসাহিত্যিক। তাঁর রচনা অভিজিৎ মুখার্জীর অনুবাদে বাংলায় প্রথম বার প্রকাশিত হলো।’ লীলা রায় স্মারক সম্মাননা পদকের বাইরে অন্যান্য পদকে ভূষিতরা হচ্ছেন, তমাল বন্দ্যোপাধ্যায় (সোমেন চন্দ স্মারক), তুষার কাঞ্জিলাল (তাপসী বসু স্মারক), একরাম আলি (সুপ্রভা মজুমদার স্মারক), নন্দদুলাল আচার্য (বিভা চট্টোপাধ্যায় স্মারক), নন্দিনী নাগ (সুধা স্মারক), সুপ্রিয় চৌধুরী (শান্তি সাহা স্মারক), শুভাপ্রসন্ন (মনোজমোহন বসু স্মারক), প্রার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল (আলপনা আচার্য স্মারক), ভগীরথ মিশ্র (জ্যোতিপ্রকাশ চট্টোপাধ্যায় স্মারক), অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় (অনিতা-সুনীলকুমার বসু স্মারক), অর্ণব পণ্ডা (শক্তি চট্টোপাধ্যায় স্মারক)। এ ছাড়া লিটল ম্যাগ আদম সম্পাদক গৌতম মণ্ডল পেয়েছেন আকাদেমি-মধুপর্নী সম্মান এবং লিটল ম্যাগাজিন সম্মান যৌথভাবে পেয়েছে ‘সাহিত্যদর্পণ’ ও ‘তিতির’। অনুষ্ঠানে সবাইকে উত্তরীয়, স্মারক সম্মান ও নির্ধারিত অর্থমূল্য প্রদান করা হয়। অনুবাদক অভিজিৎ মুখার্জী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক। এক সময় পড়িয়েছেন জাপানে কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাহিত্য ও সংস্কৃতি কোনো না কোনো ক্ষেত্রের সঙ্গে, এমনকি দৈনন্দিন জীবনেও, সুযোগমত খানিকটা সম্পর্ক রেখে চলা মানসিকতায় ও রুচিতে ভারসাম্য আনে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। পেশার কারণে গবেষণাপত্র ছাড়াও, উপরোক্ত কারণেই সাহিত্যের ক্ষেত্রেও কিছুটা লেখালেখি অনেক সময় করেছেন। তবে তিনি মূলত বিশ্বসাহিত্যের আগ্রহী ‘পাঠক’ বলেই নিজের পরিচয় দেন। প্রিয় লেখকের সংখ্যা বহু, এর মধ্যে ভিএস নাইপলের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত টান ঘনিষ্ঠজনরা অবগত আছেন। এ যাবৎ তার অনূদিত, লেখা ও সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে আছে, সমুদ্রতটে কাফকা, দুই খণ্ড (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা, কলকাতা), হারুকি মুরাকামির নির্বাচিত গল্প, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ (বাংলাদেশ), যে ভারতীয়রা ইংরিজিতে লিখছেন, বুকস ওয়ে (কলকাতা), যেটুকু জাপান, রীতাক্ষর প্রকাশন (কলকাতা) এবং Tagore and Japan: A Retrospection : a Collection of Articles on Tagore and His Association with Japan, 2011, Sakura Academy. জাপানি ভাষা শিক্ষকতায় জাপান ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিজিৎ মুখার্জী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানি ভাষারও অধ্যাপনা করেন। ইতোপূর্বে গবেষণার জন্য ভারতে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি রাজীব গান্ধীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশেও তার অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনুবাদ প্রকাশ হয়েছে। অনুবাদে স্মারক সম্মাননার বিদূষী লীলা রায়ের জন্ম ১৯১০ সালের ৭ আগস্ট। তিনি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের স্ত্রী।  বিবাহের পর তাঁর নাম হয় ‘লীলা রায়’। বাংলা থেকে তিনি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন সতীনাথ ভাদুড়ীর লেখা জাগরী, তারাশঙ্করের গণদেবতাসহ আরও কয়েকটি উপন্যাস। অনুবাদ করেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, নরেন্দ্রনাথ মিত্র, সোমেন চন্দের ছোটগল্প। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরী, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখের কবিতাও অনুবাদ করেছেন তিনি। তিনি নিজেও ইংরেজি ভাষায় কবিতা লিখতেন। ইংরিজিতে লেখা তাঁর প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে A Challenging Decade নামে। অনুবাদ সাহিত্যে তাঁর বিশেষ অবদানের কথা স্মরণ করে অনুবাদের ওপর পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি মর্যাদাপূর্ণ লীলা রায় স্মারক সম্মান প্রবর্তন করে। পড়ুন অভি‌জিৎ মুখার্জীর দু‌টি লেখা :  **  ** 

 

​রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ জানুয়ারি ২০১৭/তারা