শিল্প ও সাহিত্য

অন্ধের স্পর্শের মতো || বিশ্বজিৎ চৌধুরী

প্রৌঢ় অধ্যাপককে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘একটা মেয়ে কখনো রাজহাঁস হয়ে যেতে পারে?’

ভেবেছিলাম তিনি ভ্রু কোঁচকাবেন, মাথা তুলে চশমার নিচের অংশটার ভেতর থেকে তাকাবেন, বোঝার চেষ্টা করবেন আজকাল গঞ্জিকা সেবন করা হয় কিনা। কিন্তু সেসব কিছুই না, তিনি নির্বিকার কণ্ঠে বললেন, ‘পারে।’

‘আপনি দেখেছেন?’

‘না।’

‘তাহলে?’

‘তুমি তো দেখেছ।’

হ্যাঁ আমি দেখেছি। কিন্তু এই গল্পটা আমি কাউকে বলতে পারছি না। অধ্যাপককে বলতে এসেছিলাম, কারণ অনেক কাল আগে, যখন আমি তাঁর প্রিয় ছাত্র ছিলাম, অনুতপ্ত সুরে একটি পাখি শিকারের গল্প বলেছিলেন আমাকে। তরুণ বয়সে ফটিকছড়িতে তাঁর মামার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পাহাড়ের পাশে একটি বিস্তৃত জলা ঘিরে উড়তে ও ঘুরতে থাকা অতিথি পাখিদের ভিড় থেকে একটি রাজহাঁসকে গুলিবিদ্ধ করেছিলেন তিনি। ব্যাপারটি তেমন গুরুতর কিছু ছিল না। কেননা তখন এদেশে পরিবেশবাদী আন্দোলন চাঙা হয়ে ওঠেনি। সংবাদপত্রের পাতায় অপরাধ হিসেবে পাখি শিকার বা ফাঁদ পেতে পাখি ধরে বাজারে বিক্রি করার সংবাদ প্রকাশের রেওয়াজও চালু হয়নি। তরুণ কলেজ ছাত্র কাঁধে এয়ারগান, হাতে রক্তাক্ত নিহত রাজহাঁসটি নিয়ে, ভবিষ্যতের একজন বাঘ বা নিদেনপক্ষে হরিণ শিকারীর সমীহ আদায় করার অভিপ্রায়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। কিন্তু হঠাৎ তাঁর চোখে পড়ল, হাঁসটির পায়ে কিছু একটা বাঁধা আছে। সবুজ একটা রিবন দিয়ে বাঁধা পলিথিনের একটি ছোট্ট পুটলি। কৌতূহলী হয়ে পথেই বসে পড়েছিলেন তরুণ। গিঁট খুলে পলিথিনে মোড়ানো একটি চিঠি পেয়েছিলেন তিনি। ইংরেজিতে লেখা সেই চিঠি লিখেছে কোনো দূর দেশের কোনো এক লিন্ডা জনসন- ‘এটি আমার পোষা পাখি, আমার দেশে এখন প্রচণ্ড শীত। এমন শীতে এই পাখি বাঁচে না, তাই তাকে ছেড়ে দিলাম। শীত আর বরফঝড় শেষ হলে ও আমার কাছে আবার ফিরে আসবে। দয়া করে ওকে মেরো না, বন্দী করে রেখো না।’ বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠেছিল তাঁর। শিকারের আনন্দ মুহূর্তেই বিষাদে পরিণত হয়েছিল। তরুণ বয়স বলেই বোধহয় অজানা দেশের কোনো এক অচেনা লিন্ডা জনসনের জন্য অশ্রুপাতও করেছিলেন সেদিন। পাহাড়ের পাশে জংলায় মাঁটি খুঁড়ে নিজ হাতে কবর দিয়েছিলেন রাজহাঁসটিকে। এরপর থেকেই মাঝে মাঝেই এক কিশোরী লিন্ডা জনসনকে স্বপ্নে দেখতে পান তিনি। বিয়ের দিন যে রকম সাদা গাউন পরে ক্রাইস্ট চার্চে যায় খ্রিস্টান মেয়েরা, ঠিক সে রকম পোশাকে একটি মেয়ে বহুবার হানা দিয়েছে তার স্বপ্নে। মেয়েটির সাদা ফ্রক রক্তে লাল, তার চোখে তীব্র ঘৃণা ও অভিসম্পাত।

গল্পটি বলার সময় অধ্যাপকের চোখে যে গাঢ় বিষণ্নতা দেখেছিলাম, তাতে আমি তাঁর প্রতি করুণা বোধ করেছিলাম। অধ্যাপক সেদিন তাঁর দুঃসহ স্মৃতিবাহী এয়ারগানটি আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। আমি তাঁর শ্রেণিকক্ষের সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র ছিলাম বলে, নাকি দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি অকেজো পুরোনো বন্দুকটি আমাকে দিয়েছিলেন জানি না। আমিও নিতান্ত একটি প্রদর্শনী-সামগ্রীর মতো দীর্ঘদিন আমার ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখেছি।

এতকাল পরে অন্য একটি রাজহাঁসের গল্প বলতে এসেছিলাম আমার প্রিয় স্যারের কাছে। তিনি বললেন বটে, হ্যাঁ পারে, একটি মেয়ে রাজহাঁস হয়ে যেতেই পারে। কিন্তু আমার গল্পটি তিনি পুরো শুনতে চাইলেন না। ঘটনার পূর্বাপর জানতে চাইলেন না আমার কাছে। আমি দ্বিধা ও অস্বস্তি নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম তাঁর কক্ষ থেকে।

ইদানিং প্রায়ই এরকম হচ্ছে। আমার স্মৃতিসূত্রগুলো কিছুতেই যেন জোড়া লাগছে না। মাঝখানে কোথাও একটা মস্ত ফাঁকা জায়গা। সেই ফাঁকটুকু ভরাতে পারছি না।

বাসায় কোনো কোনোদিন নৈশ আহারের সময়টাতে একটু গল্পগুজব করার সুযোগ হয়। ছেলে বউ আর দুটি নাতি-নাতনিকে একসঙ্গে পেয়ে আমার বৃদ্ধা মা-ও যেন উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন এ সময়টাতে। অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি, তখন তাঁর পিঠের ব্যথাটা থাকে না, কিংবা থাকে, তবে কঁকিয়ে উঠে তিনি এরকম আনন্দময় সময়কে নষ্ট করতে চান না। কথা যে খুব একটা বলেন তা-ও না, মাঝে মাঝে ফোঁড়ন কাটেন। এই যেমন এখন আমার কথার মধ্যে কথা বলে উঠলেন। এই একটি কথায় আমাকে প্রায় ডুবিয়ে দিলেন নদীর জলে।

আমি শৈশবের স্মৃতিচারণ করছিলাম স্ত্রী-সন্তানদের কাছে। আমরা স্কুল ছুটির পর ঘরে বইপত্তর রেখে, জামাটা পাল্টে ছুট লাগাতাম পি.কে সেনের মাঠে। দুদলে ভাগ হয়ে ঘণ্টাখানেক নিয়ম মেনে না মেনে ফুটবল খেলা, লাথি গুঁতো ফাউল বা পেনাল্টি নিয়ে কলহ বিবাদের পর দল বেঁধে গোসল করতে যেতাম কর্ণফুলীতে। গোসল মানে বন্দরের ঘাট থেকে নদীতে নেমে দাপাদাপি। ঝাঁপিয়ে পড়ে, সাঁতার কেটে, ডুবে-ভেসে সে কী তুমুল হুল্লোড় আমাদের!

‘কর্ণফুলিতে?’- আম্মা বিস্ময়ে চোখ বড় করে বললেন, ‘তুই তো সাঁতারই জানিস না, নদীতে নামলি কী করে?’

আমার দুই ছেলেমেয়ে হেসে উঠল সশব্দে। মেয়েটি ছোট, ক্লাস এইটে, কাউকে বেকায়দায় ফেলতে পারার মতো আনন্দ আর কিছুতেই হয় না তার। এমন মোক্ষম একটা সুযোগ পেয়ে সে হাততালি দিয়ে ছড়া কাটতে লাগল, ‘লায়ার লায়ার, প্যান্টস অন ফায়ার...।’

আমার স্ত্রীর মুখে তখন শয়তানির হাসি, ‘ভাগ্যিস আম্মা ছিলেন, না হলে একদিন হয়তো ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার গল্পও শুনতে হতো আমাদের... হি হি হি।’

আমি চোরের চেহারায় তাকিয়ে আছি সবার দিকে। মুখে নিশ্চয় একটা বিব্রত ও সলজ্জ হাসি ফুটে উঠেছে। তারচেয়ে বড় কথা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছি। আমার শৈশবের গল্পটা আর এগোতে পারল না বলে নয়, আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠা আনন্দময় শৈশবের একটা ছবি মিথ্যা হয়ে গেল বলে।

আমি সাঁতার জানি না এ কথা সত্য, কিন্তু নদীর জলে উচ্ছ্বসিত এক ঝাঁক কিশোরের মধ্যে আমিও ছিলাম এটা তো মিথ্যা নয়! কী করে কী হলো। হিসাবটা কিছুতেই মিলছে না। সেদিন নৈশ আহারের আড্ডাটা মাটি হয়ে যায়নি। আমার সামান্য অন্যমনস্কতা আমলে না নিয়ে মেয়ের স্কুলের, ছেলের কলেজের, স্ত্রীর কর্মস্থলের নানা প্রসঙ্গ নানা দিকে বাঁক নিয়ে মধুরেন সমাপয়েৎ। শুধু আমার গলায় একটা অস্বস্তির কাঁটা বিঁধে রইল।

আমরা সদরঘাটের যে বাড়িটাতে থাকতাম, সেটা ছেড়ে এই তিন বেডের ফ্ল্যাটে উঠে এসেছি তা-ও বছর দশেক হলো। পাড়ার বন্ধুরা কে কোথায় ছিটকে পড়েছে খোঁজখবর নেওয়ার সময় তেমন পাই না। একদিন বেশ খুঁজে পেতে মিলনকে ফোন করলাম, ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার, আমার সেলফোনের নম্বর কী অজ্ঞাত কারণে তার সেভ করা ছিল, ফোন রিসিভ করেই বলল, ‘কী রাইটার খবর কি? হঠাৎ গরিব কেরানির খোঁজ পড়ল?’

‘এমনিতেই, অনেকদিন যোগাযোগ নেই...।’

‘যোগাযোগ না থাকলেও তোর খবর পাই তো। বেশ নাম-টাম হয়েছে শুনি। এবার ঈদসংখ্যায় তোর উপন্যাসটা খুব ভালো হয়েছে।’

খুশি হয়ে বললাম, ‘পড়েছিস?’

‘আরে না, আমার কী সেই সময় আছে। তোর ভাবি বলল, খুব টাচি।’

বুঝলাম বউয়ের পাঠরুচির ওপর অগাধ আস্থা তার। এবার আসল প্রসঙ্গের দিকে গেলাম, ‘আচ্ছা মিলন আমরা ছোটবেলায় পি.কে সেনের মাঠে খেলতে যেতাম মনে আছে?’

‘কেন মনে থাকবে না... সেই সব দিন ভোলা যায়? কী দিন ছিল আমাদের! আজকালকার ফ্ল্যাটবাড়ির খুপড়িতে থাকা ছেলেমেয়েরা ভাবতেও পারবে না...।’

সেকাল আর একালের শৈশবের একটা তুলনামূলক আলোচনার দিকে যাচ্ছিল মিলন, থামিয়ে দিয়ে বললাম, ‘খেলা শেষে নদীতে গোসল করতে যেতাম?’

‘হ্যাঁ যেতাম তো, ব্রিজঘাট থেকে লাফিয়ে পড়তাম নদীতে...’ আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল হঠাৎ থামিয়ে জানতে চাইল, ‘কেন বল তো?’

‘না এমনিতেই। আচ্ছা, আমিও কি তোদের সাথে নদীতে নামতাম?’

‘তুই? তুইও নামতি নিশ্চয়, সবাই নামবে আর তুই নামবি না? তুইও নিশ্চয়..., কতদিন আগের কথা, সব কি আর মনে আছে...।’

‘হ্যাঁ, কত দিন আগের কথা।’

‘আহা, সেইসব দিন...।’ একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ যেন শোনা গেল ফোনের ও প্রান্ত থেকে।

আলাপ শেষ করার পর আবার নদীর জলে উচ্ছ্বসিত কিশোরদের ভিড়ে নিজেকে দেখতে পাই আমি। কিন্তু আমি তো সাঁতার জানি না!

কেন এমন হয়ে যাচ্ছে আমার? স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের এক পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে কয়েক বন্ধু জড়ো হয়েছিলাম একদিন। দেখা হয়ে গেল শাহাবুদ্দীনের সঙ্গেও। একটা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে এখন। আমার হিরো শাহাবুদ্দীন। দুর্দান্ত ফুটবল খেলত। স্কুলের নবম-দশম শ্রেণীতে পড়ার সময়েই এ ডিভিশন ফুটবল লীগে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। এই শাহাবুদ্দীন একবার আন্তঃস্কুল ফুটবলের একটি খেলায় কর্নার কিক নিয়ে সোজা প্রতিপক্ষের গোলপোস্টে বল ঢুকিয়ে দিয়েছিল। যাকে বলে রেইনবো শট। সেই অসাধারণ দৃশ্য এখনো চোখে ভাসছে আমার। অনেকদিন পর শাহাবুদ্দীনকে পেয়ে সেই কথাটি তুললাম, ‘মিউনিসিপ্যাল স্কুলের সঙ্গে আমাদের কলেজিয়েটের ফাইনাল ম্যাচটির কথা মনে আছে তোর? কর্নার কিক থেকে সোজা গোল করে দিয়েছিলি...।’

শাহাবুদ্দীন অবাক, ‘আমি? না না জীবনে কোনোদিনই কর্নার কিক থেকে গোল করতে পারিনি আমি।’

আমি অন্য সহপাঠী বন্ধুদের সাক্ষী মানলাম, ‘অ্যাই তোদের মনে নেই ফাইন্যাল ম্যাচে শাহাবুদ্দীন...।’

কেউ সমর্থন করল না, হেসে উঠল সবাই, এরকম কোনো ঘটনাই নাকি ফাইনাল ম্যাচটাতে ঘটেনি। শাহাবুদ্দীন একটা গোল করেছিল বটে, তবে কর্নার কিক থেকে নয়, তা ছাড়া ৩-২ গোলে মিউনিসিপ্যালের কাছে সেদিন হেরেছিল কলেজিয়েট।

সাজিদ হোসেন, আমাদের সাজু বলল, ‘ইউরোপীয় লীগের খেলা দেখিস বোধহয় টিভিতে, কার পায়ের গোল যে শাহাবুদ্দীনের নামে দিয়ে দিলি আল্লা জানে, হা হা হা।’

আমি থতমত, নিরুচ্চার। তখন আরও মারাত্মক কথাটা বলল নুরুল আমিন, ‘আশরাফ ছোটবেলা থেকেই জমিয়ে মিথ্যা বলতে পারত। আমরা সবাই গোল হয়ে ওর গল্প শুনতে বসে যেতাম মনে নেই?’

আমি জমিয়ে মিথ্যা বলতাম ছোটবেলা থেকে! হ্যাঁ গল্প করতাম খুব, বলার ভঙ্গির কারণে হয়তো শুনতে পছন্দও করত সবাই। এর নাম ‘জমিয়ে মিথ্যা?’ মনটা বিষণ্ন হয়ে পড়ছিল ক্রমশঃ। খুব চেষ্টা করে হালকা হাসির একটা অভিব্যক্তি ধরে রাখতে চাইছিলাম। আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্যই বোধহয় সাজু বলল, ‘আরে মিথ্যাটা গুছিয়ে বলতে পারত বলেই তো সাহিত্যিক হতে পারল আশরাফ। আমাদের পেটে বোমা মারলে দু’ লাইন বেরোবে?’

গুছিয়ে মিথ্যা বলতে পারতাম বলেই আমি আজ লেখক! লেখকেরা মিথ্যা বলে? কেন সত্য-মিথ্যা একাকার হয়ে যাচ্ছে আমার? সত্য তাহলে কোনটা?

এদেশে গল্প বানিয়ে বলতে হয়? প্রতিদিন কত ঘটনার ঘনঘটা। খুন, ধর্ষণ, ইয়াবা, বন্দুকযুদ্ধ, গণজাগরণ, শাপলা চত্বর, টেকনাফ, রোহিঙ্গা- বিষয় তো ছুটে আসছে যমুনার বানের লাহান। একাত্তরে দেশটা স্বাধীন হলো, তারপর থেকে কত রকম করে বদলাল রাজনীতি। অস্থির সমাজ কত রকমের বাঁক নিচ্ছে, প্রতিটি সত্য ঘটনাই তো গল্পকে ছাড়িয়ে ছাপিয়ে যাচ্ছে।

এই যেমন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যাচ্ছে কত মানুষ। কিন্তু গল্পটা মোটামুটি একই রকম। পুলিশ বা র‌্যাব ধৃত আসামিকে নিয়ে অস্ত্র বা মাদক উদ্ধারে গেল, সেখানে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীদের হামলা পুলিশের ওপর, পাল্টা গুলিতে মানে বন্দুকযুদ্ধে আসামি নিহত। স্থান-কাল-পাত্র আলাদা, কিন্তু গল্প একটাই। একবার আমার এক পুলিশ কর্মকর্তা বন্ধুর সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ হয়েছিল।

শান্ত গলায় বলেছিল, ‘উপায় নাই, সন্ত্রাস আর মাদক চোরাচালান যে হারে বাড়সে, এইটা দমন করার আর কোনো পথ নাই। আসামি ধরে এনে মামলা দিলাম, কদিন পর ঠিকই কোর্ট থেকে জামিন নিয়া বারায়া যাবে... আবার একই কাজে গিয়া ঢুকবে। এখন কী করবা তুমি?’

এর উত্তর নেই আমার কাছে। অপরাধবিজ্ঞান আমার অধীত বিষয় নয়। মিনমিন করে বললাম, ‘কিন্তু সব গল্প একই রকম হবে কেন? তোমাদের ডিপার্টমেন্টে কোনো ক্রিয়েটিভ লোক নাই?’

এবার প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে গেল বন্ধু, ‘কেন, আমরা কি এখানে সাহিত্য করতে বসছি নাকি? সেইটা তোমাদের কাজ, তোমরা করো। তারপর সুযোগ পাইলে মানবাধিকারের বাঁশটা ঢুকায়া দিও আমাদের পিছনে...।’

আর কথা না বাড়িয়ে চা শেষ করেছিলাম সেদিন।

কিন্তু আমার সমস্যাটা অন্যরকম। আমার সামনে গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়েছিল মোজাম্মেল। হাওয়ায় সাঁতার কাটার মতো দু’ হাত ছড়িয়ে দিয়ে শূন্যে ভেসে উঠেছিল শরীরটা, তারপর ধপ্ করে মুখ থুবড়ে পড়েছিল একটু দূরে। আমার সামনেই, আমি তার রক্তে রাস্তার কালো পিচ লাল হয়ে উঠতে দেখেছি। সেটা ১৯৮৩ সাল। এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে তখন উত্তাল রাজপথ। ঢাকায় ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে জয়নাল, দীপালী সাহাসহ বেশ কজন ছাত্র-জনতা। সেই খবর চট্টগ্রামে এসে পৌঁছালে উত্তপ্ত বারুদে আগুনের স্পর্শের মতো বিক্ষোভে ফেটে পড়ল এখানকার ছাত্ররাও। পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে বেরুলো বিরাট মিছিল, আমি ছিলাম সেই মিছিলে। সেখানেও গুলি চলল। মোজাম্মেল মরল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোজাম্মেল মারা গেল আমার সামনেই। আমি তার হাওয়ায় ভেসে ওঠা আর মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়া দেখেছি, আমি রক্তে কালো রাস্তা লাল হয়ে যেতে দেখেছি। কিন্তু বহুদিন পর সেই কথাটা বলার পর কায়সার বলল, না আমরা সেখানে ছিলাম না। তার আগেই যখন পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছিল তখনই ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছিল মিছিল। শহীদ মিনারের পেছনের পাহাড় বেয়ে কোর্ট বিল্ডিংয়ের দিকে সরে গিয়েছিলাম আমরা। কায়সার আমার সঙ্গে ছিল। তার কথাটা সত্য। আমরা কোর্ট বিল্ডিংয়ের দিকে পালিয়ে গিয়েছিলাম এ কথাও সত্য। কিন্তু মোজাম্মেল গুলিবিদ্ধ হওয়ার দৃশ্যটা যে নিজের চোখে দেখেছিলাম তার কী হবে? আমি তো দেখেছি, কাছ থেকে দেখেছি লাশটা। বহুদিন স্বপ্নে-দুঃস্বপ্নে রক্তের ভেতর থেকে জেগে উঠেছি।

সংবাদপত্রে চাকরি করি দীর্ঘদিন। ডেস্কে বসে সংবাদ সম্পাদনার কাজ। কোনো রিপোর্টে অসঙ্গতি থেকে গেলে রিপোর্টারকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে তথ্য ও যুক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করি। মারাত্মক বিভ্রাট কখনো হয়নি, হলে তো আমার চাকরি থাকে না। ফলে নিজের স্বাভাবিকতা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।

আমার স্ত্রীকে হালকা চালে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আমার কথার মধ্যে উল্টা-পাল্টা কিছু টের পাও? মিথ্যা বলছি মনে হয়?’

‘না, মিথ্যা বলছ মনে হবে কেন?’- শাহানা বিস্মিত, তারপর একটা অনুরক্ত হাত আমার পিঠে রেখে বলে, ‘তোমার সঙ্গে মাঝে মাঝে ফাজলামি করি, এসব তুমি সিরিয়াসলি নাও?’

‘না না সিরিয়াসলি নিই না।’ আমি হেসে উত্তর দিই।

নারীরা ভালো। আমার আম্মা, আমার প্রবাসী কেয়াবু ভালো। আমার স্ত্রী, আমার প্রাক্তন প্রেমিকা আর একটি রাজহাঁসও ভালো। না রাজহাঁসের কথা এখনি বলব না।

আমার প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে একবার দেখা হয়ে গেল ঢাকা রেলস্টেশনের প্লাটফরমে। একই ট্রেনে আমরা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এসেছি। কিন্তু চট্টগ্রামের রেলস্টেশন বা ট্রেনের কামরায় দেখা হয়নি, দেখা হলো ঢাকায়, ট্রেন থেকে নেমে। আমার কাঁধে একটা ব্যাগপ্যাক, আর পাশ দিয়ে ট্রলি ব্যাগ টেনে একা দৃপ্ত ভঙ্গিতে হেঁটে যাচ্ছে লাবণ্য। প্রাক্তন প্রেমিকার নাম লাবণ্য না হলে মানায়! তো দেখা হয়ে গেল কতকাল পরে। এখন সে স্বামী-সন্তান-চাকরি-বাকরি সামলে কী আত্মপ্রত্যয়ী মহিলা! সময়ের নিজস্ব একটা শক্তি আছে, টাইম ইজ দ্য বেস্ট হিলার কথাটা তো আর এমনি এমনি চালু হয়নি। বিচ্ছেদ-প্রসঙ্গের তিক্ততা সব মুছে গেছে এই সময়েরই কারণে। স্টেশনেরই দোতলার রেস্টুরেন্টে এক কাপ কফি খাওয়ার প্রস্তাব তাই করতে পারল সে অনায়াসে।

কফি খেতে খেতে অনেক গল্পগুজব। ‘মনে আছে?...’ ধরনের এক প্ররোচনায় আমি বলে ফেললাম, ‘তোমার সঙ্গে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত মনে আছে আমার। তোমার বাম বুকের জরুলটার কথাও মনে আছে, চোখে ভাসে এখনো...।’

চমকে উঠল, বুকের কাছে শাড়ির আঁচলটা যথাস্থানে আছে কিনা একবার দেখে নিল দ্রুত। পরমুহূর্তে তার বিস্ময় পরিণত হলো ক্রোধে, ‘জরুল! আমার বুকে? না, আমার বুকে তো কোনো জরুল নেই। তা ছাড়া তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক তো ওই পর্যন্ত গড়ায়নি, দু’একবার চুমুটুমু... ওইটুকুই তো।’

আমি প্রচণ্ড বিপন্ন বোধ করি। জরুল নেই? আমাদের সম্পর্কটাও বুকের জরুল দেখে ফেলার মতো অতদূর গড়ায়নি? তাহলে বাম স্তনের একটি জরুল যে চোখে ভাসে, চোখ বন্ধ করলে এখনো দেখতে পাই আমি, সেটি কার? শাহানার বুকেও তো নেই।

‘কোথায় কখন কার সঙ্গে ফস্টিনস্টি করেছ কে জানে!’- প্রচণ্ড তিক্ত ও বিরক্ত লাবণ্যের কণ্ঠ।

দীর্ঘদিন পর প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে দেখা হওয়ার ব্যাপারটি সুখকর হলো না। লাবণ্য চলে গেল নিজের পথে। কিন্তু ফরসা পুষ্ট বাম স্তনের ওপর একটা জরুল আমার চোখে ভাসছে।

এবার রাজহাঁসের ব্যাপারটা বলি। তখন সবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আমার কলেজের সহপাঠী মনসুর বলল, ‘আমাদের বাড়িতে যাবি?’

মনসুরদের বাড়ি নাটোর। আমি তো কম বয়স থেকেই কাব্যাক্রান্ত, নাটোর শুনেই আমার বনলতা সেনের কথা মনে পড়ল। যেন নাটোর গিয়ে পৌঁছালেই কেউ একজন আমাকে জিজ্ঞেস করবে, এতদিন কোথায় ছিলেন? কিন্তু মনসুর বলল, এরকম কারো নাম সে জীবনে শোনেনি। যাই হোক সবারই সব নাম শুনতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আমি নিজের বাড়ির লোকজনকে অনেক বলে-কয়ে মনসুরদের বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি পেলাম। মনসুর সেই বয়স থেকেই এত দূরের পথ একা যাওয়া আসা করতে পারত। আমি তার সঙ্গী হয়েছিলাম।

নাটোর শহরেই মনসুরদের বাড়ি। চার-পাঁচটা দিন সেখানে খুব আনন্দে কাটিয়েছিলাম মনে আছে। বনলতা সেনের ঠিকানা বলতে পারল না, কিন্তু আমার বন্ধুটি আমাকে রানী ভবানীর রাজবাড়ি দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল। বিরাট একটা দীঘি দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল, যাকে ‘সাগর’ নামে ডাকা হয়। মোটের ওপর মনসুরদের পরিবার আর নাটোরকে খুব ভালো লেগে গিয়েছিল আমার।

দু’বন্ধুর ফিরে আসার কথা ছিল এক সঙ্গেই। কিন্তু মনসুর জানাল, সে রেজাল্ট বেরোনোর আগে আর চট্টগ্রামে ফিরবে না। এমনকি রেজাল্ট বেরোনোর পর চট্টগ্রাম না ঢাকায় পড়তে যাবে তারও ঠিক নেই। তার মানে একা ফিরতে হবে! প্রথমে একটু ভড়কে গিয়েছিলাম। কিন্তু মনসুর বোঝাল নতুন কিছু তো নয়, যেপথে যেভাবে এসেছি, ফিরে যাওয়ার পথটাও ঠিক সেই একই রকম। সে স্টেশন পর্যন্ত এসে ট্রেনে তুলে দিয়ে গেল। আমি একই পথে নাটোর থেকে ফিরেছি সিরাজগঞ্জ। এরপর স্টিমারে যেতে হবে গোবিন্দাসীঘাট। তারপর আবার চড়ব ট্রেনে।

সিরাজগঞ্জে নেমে জানলাম স্টিমার ছাড়বে আরও প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পর। আমি ট্রেন থেকে নেমে অন্য যাত্রীদের মতো হুড়মুর করে স্টিমার ঘাটের দিকে না গিয়ে চারপাশটা একটু ঘুরে দেখব মনস্থ করেছিলাম। তখন ঠিক কী মাস মনে নেই, তবে ধানখেতে পাকা ফসল দেখেছিলাম মনে পড়ে। পথে-ঘাটে তেমন লোকজন নেই, এদিকটায় দোকানপাটও চোখে পড়ে না। আধাপাকা, কিন্তু চওড়া রাস্তার এক ধারে বড় বড় আম কাঁঠাল বা আরও নানা জাতের গাছের ছায়ায় একটি স্নিগ্ধ দুপুরের কথাও মনে পড়ে। এদিক ওদিক হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের একটি পাড়ায় গিয়ে পৌঁছালাম। ঠিক পাড়া বলতে যা বোঝায় তা নয়। অনেকটা বারো ঘর এক উঠোন ধরনের বাড়ি, সারিবাঁধা ঘরগুলোর সামনের দিকেই টলটলে একটা পুকুর। বাঁশবেড়া টিনের চালা ঘরগুলোর ভিটে আর উঠোনটা গোবর দিয়ে লেপা, পরিচ্ছন্ন। দেখতে গ্রামের আর দশটা গুচ্ছঘরের বাড়ির মতোই। শুধু একটি ব্যাপারই অন্যরকম লাগল চোখে। প্রায় সবকটি ঘরের দরজায় একটু বেশি সাজগোছ করা মেয়েরা দাঁড়িয়ে বা বসে আছে। আমি এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে উঠোনে এসে দাঁড়িয়েছি।

কোনো পুরুষ মানুষ, এমনকি বাচ্চা-কাচ্চাও দেখা যাচ্ছে না কোথাও। বারো ঘরের দরজায় দরজায় দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা মেয়েরা কেউ একবার আমার দিকে তাকাল কি তাকাল না, নিজেরা মেতে আছে হাসি বা গল্পে। এর মধ্যে হঠাৎ আমার সামনে এসে দাঁড়াল একটা মেয়ে। আমারই বয়েসী বা আমার চেয়ে দু-এক বছর বড় হবে হয়তো। খুব সুন্দরী বলা যাবে না, তবে ফরসা মুখটা লাবণ্য আর বিষণ্নতা মিলিয়ে মায়াময়। এ রকম একটি মেয়েকে বনলতা সেন নামে ডাকা যেতে পারে। কিন্তু ওর নাম বনলতা নয়। লম্বা গড়ন, কোমর ছাপানো চুল আর চোখে গভীর কালো রঙে আঁকা কাজল। কালো সালোয়ার, কালো-সাদা প্রিন্টের কামিজ আর গলায় পেঁচানো একটি কালো ওড়না। বলছি বটে তেমন সুন্দরী নয়, কিন্তু দুবার তাকাতে হয়।

হাবারামের মতো তাকিয়ে আছি ওর দিকে। দূর থেকে এক মহিলা, হয়তো মেয়েটার মা, খালা বা ফুফু, বললেন, ‘বাবুরে ঘরে নিয়া যা সায়রাবানু।’

বুঝলাম মেয়েটার এই নাম। ছুটে পালিয়ে যাব কিনা একবার ভেবেছি, পারলাম না। মা, খালা বা ফুফুর নির্দেশ মেনেই যেন আমার হাত ধরে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে গেল সায়রাবানু। কী অদ্ভুত বিহবলতা, উপেক্ষা করার শক্তি নেই আমার। নিশিপাওয়া মানুষের মতো তার পিছু নিয়েছি। দরজা বন্ধ করল। যত্ন করে বসাল তক্তপোশে, আদর করল খুব। আমি তার দুই বুকের মাঝখানে নাক ডুবিয়েছিলাম। নারীদেহ নিয়ে তো নানা কল্পনা ছিল তখন, সেই প্রথম স্পর্শে অবশ বোধ করেছিলাম। ব্যস, আর কিছু না। সায়রাবানু বুঝে নিয়েছিল আমি তার ইচঁড়েপাকা ‘কাস্টোমার’ও না। আবার জামা-কাপড় গুছিয়ে নিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়েছিল। আমিও তার পিছু পিছু। বাইরে পুকুর ঘাটে এসে দাঁড়াল। একবার ঘাড় কাত করে তাকাল আমার দিকে। একটু কী হাসল? ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। হঠাৎ মাথা ঝুঁকিয়ে দুহাত সোজা মাথার সমান্তরালে নিয়ে সাঁই করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জলে। ডুবসাঁতারে অনেকটা দূর ভেসে গিয়েছিল। তারপর আর দেখি না। নিথর জল। তরঙ্গ বা বুদবুদও ওঠে না কোথাও। আমি পুকুরঘাটে দাঁড়িয়েই আছি। কিন্তু সায়রাবানু ভেসে ওঠে না। দূর থেকে স্টিমারের ভেঁপু শুনি, আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। পুকুরের চারপাশে অস্থির হয়ে তাকাই। কিন্তু সায়রাবানু আর ওঠে না।

আমি সায়রাবানুর মা, খালা বা ফুফুর কাছে জিজ্ঞেস করি, পুকুরে নেমে কোথায় ভেসে গেল মেয়েটা, কেন উঠে আসছে না? মা, খালা বা ফুফু হেসে বলল, ‘ওই পাড়ে।’

আমি ও পাড়ে তাকাই, একটা রাজহাঁস পুকুরের জল থেকে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে গেল ওই পাড়ে।

‘ওটা তো রাজহাঁস?’

মা, খালা বা ফুফুর মুখে এবার অদ্ভুত হাসি, ‘ওইটাই সায়রাবানু।’

একটা মেয়ে চোখের সামনে রাজহাঁস হয়ে গেল! এমন ঘটনা বিশ্বাস করতে হবে? কিন্তু নিজের চোখেই তো দেখলাম। মেয়েটার মা, খালা বা ফুফুও তা-ই বলল। নাহলে মেয়েটা গেলই বা কোথায়? সিরাজগঞ্জের ঘাটে স্টিমারের ভেঁপু বাজছে। এক অদ্ভুত বিভ্রমের ঘোর নিয়ে ফিরে এসেছিলাম।

এই গল্পটা কোনোদিন কাউকে বলিনি। কে বিশ্বাস করবে! আমার এককালের প্রিয় শিক্ষক ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপককে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি বলেছেন, এরকম হতে পারে। আশি পেরিয়েছে তাঁর বয়স, অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। এখনও ঘোলা কাচ মোটা ফ্রেমের চশমা নাকে লাগিয়ে মোটা মোটা বই পড়েন। তিনি বলেছেন, পারে। তাঁর সঞ্চিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে বললেন, না অবান্তর প্রসঙ্গে আলোচনায় অনীহা, নাকি মতিভ্রম কে জানে?

এখনো কোথাও কোনো রাজহাঁস দেখলে আমি চমকে উঠি, এটা সায়রাবানু নয়তো? আশেপাশে লোকজন না থাকলে আমি নিচুস্বরে জানতে চাই, ‘তুমি কি সায়রাবানু?’

রাজহাঁস কোনো উত্তর না দিয়ে দীর্ঘ গ্রীবা বাঁকিয়ে অহঙ্কারী ভঙ্গিতে চলে যায়। দেশে এত রাজহাঁস, তার মধ্যে আমি সায়রাবানুকে কোথায় খুঁজে পাব?

অগত্যা রাজহাঁসকে নিয়ে আমি একটা গল্প লিখি। কিন্তু পাঠক কিছুতেই সেই গল্প বিশ্বাস করে না। ঢাকা/তারা