শিল্প ও সাহিত্য

আল মাহমুদের অগ্রন্থিত কবিতা

 

আমি চলে যাই উড়ন্ত মেঘে

 

একটি কবিতা লিখবো ভেবেছি মেঘের মধ্যে, গদ্যে-পদ্যে ছন্দে ও মিলে নব আবর্তে।  

কিন্তু তোমার ছড়ানো গর্তে নতুন শর্তে আবদ্ধ আমি- আমি চিরকাল আমিই রয়েছি ছন্দে ও মিলে বিশ্ব নিখিলে।  

আমি চলে যাই বাংলাদেশের উড়ন্ত মেঘে অতিশয় বেগে- চলে যাই আমি যৌবন রেখে নতুন অব্দে, শব্দে খেলেছি ছন্দে নেচেছি এখন বৃদ্ধ হায়রে আমার সব কথা হলো কালের নৃত্য। ছন্দে-গন্ধে শব্দ তরঙ্গে বর্ষা সিক্ত।  

বসন্ত এখন শুকায় রৌদ্রে আমায় নিত্য, আমি চলে যাই স্বপ্ন ছড়িয়ে শব্দ গড়িয়ে কালের বৃত্ত-  

ডাক দিয়ে বলে আয় কবি আয় আমি চলে যাই, এটাই সত্য।

 

চেনা জগৎয়ের ফেনা রেখে

 

আমিতো চলেছি কেবল সামনে, যেখানে শুধুই আমার নামটি ইশারায় ডাকে আমাকেই শুধু সামনে চলার আদেশে টানে।  

আমি চলে যাই; দিক থেকে দূর দিগন্ত পানে আমি বাক ঘুরি- যেখানে অচেনা সুদূরের পথ দেয় হাতছানি।  

কী আছে সেখানে কিছু কি জানি? তবু চলে যাই চেনা জগতের ফেনা রেখে পিছে কে যে আমাকে কেবল টানছে আমি মুখ থেকে বলি কিছু কথা শব্দের কণা আমার মুখেই ফণা ধরে আছে                                      আমি আনমনা-  

আমি বলব না কোথায় যাচ্ছি কোথায় নিবাস কোথায় ঠিকানা- আমি শুধু যাই, শুধু চলে যাই                                      নেইতো ঠিকানা; কে আমার নাম বলে অবিরাম আমি হেসে ফেলি আমি ঢোক গিলি- আমিও তো হায় ছিলাম এখানে নিজের বাসায়;  

এখন কেবল হতাশায় হাঁটি নিজের ছন্দ করি কাটাকাটি।  

মিলে পৌঁছবোই একদিন ঠিক, আমিই সঠিক কাব্যের ভাষা করেছি ধারণ শুনিনি বারণ। আমি তো রয়েছি আমাকে নিয়েই  

এর বেশি আর কথা নেই কিছু ব্যথা আছে এই বুকের মাঝেই আমি চলে যাই।

 

শ্রুতিলিখন ও ভূমিকা : আবিদ আজম

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সর্বব্যাপ্ত অধীশ্বর আল মাহমুদের কবিতা-কীর্তি নতুন করে বলবার কিছু নেই। কবি মন্ত্রের মতো কিছু পঙ্‌ক্তি রচনার ইচ্ছার কথা আমাকে জানিয়েছিলেন। যদিও অল্প কয়েকটি লিখে আর শেষ করতে পারেন নি। কবিতা রচনার সময় কবির ঈষৎ কম্পিত চেহারার দিকে তাকিয়ে আমার মনে হতো প্রার্থনারত কোনো আধ্যাত্মিক সুফি দরবেশকেই যেন আমি দেখছি, যিনি মন্ত্র আওড়াচ্ছেন। আর আমি আনাড়ি হাতে তা লিপিবদ্ধ করছি মহাকালের শিলালিপিতে। কবির হৃদয়ের গুঞ্জন শুনতে পাওয়া শ্রুতিলেখক হিসেবে আমার মনে হয়েছে, কবির ডিকটেশনের লেখা অধিকাংশ কবিতাই মৃত্যুগন্ধী; যা রচিত হয়েছে প্রেম, প্রকৃতি, প্রার্থনাসহ বিচিত্র বিষয় উপজীব্য করে। স্বীকার করতেই হবে, কিছুটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও এসব কবিতার অধিকাংশই কবিকে লিখতে হয়েছে সাহিত্য সম্পাদকদের তাগিদে, আবদার-অনুরোধ রক্ষা করতে। তিনি তা করেছেন। কেননা তিনি বহুবার উচ্চারণ করেছেন এই সত্য: ‘ভালো একটি কবিতা লিখতে আমি রীতিমতো প্রার্থনা করি।’ ঢাকা/তারা