শিল্প ও সাহিত্য

আশিতে শফীউদ্দিন সরদার

আরিফুল ইসলামনাটোর, ৩ মে : শফীউদ্দিন সরদার নিভৃতচারী এক অসাধারণ লেখক। আমাদের সাহিত্য ভান্ডারে তিনি উপহার দিয়েছেন- রূপনগরের বন্দী, বখতিয়ারের তালোয়ার, গৌড় থেকে সোনারগাঁ, বিদ্রোহী জাতক, বারো ভূঁইয়া উপাখ্যানের মতো সমৃদ্ধ উপন্যাস। মে দিবসে আশিতে পা রাখলেন বরেণ্য এই কথা সাহিত্যিক।১৯৩৫ সালের এই দিনে নাটোর সদর উপজেলার হাটবিলা গ্রামে জন্ম তার। শিক্ষায় সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী শফীউদ্দিন সরদার নিজ গ্রামের স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি রাজশাহী সরকারী কলেজ ও সরদহ ক্যাডেট কলেজে অধ্যাপনা করেন। বানেশ্বর কলেজ ও নাটোর রাণী ভবাণী সরকারী মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তার রচিত প্রথম সামাজিক উপন্যাস ‘চলনবিলের পদাবলি’ দেশের কোন প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশ না করায় তিনি আজীবন ঐতিহাসিক ও সামাজিক উপন্যাস রচনার সিদ্ধান্ত নেন।

সেই থেকে তিনি একে একে রচনা করেন- রূপনগরের বন্দী, বখতিয়ারের তালোয়ার, গৌড় থেকে সোনারগাঁ, যায় বেলা অবেলায়, বিদ্রোহী জাতক, বারো পাইকার দূর্গ, রাজ বিহঙ্গ, শেষ প্রহরী, বারো ভূঁইয়া উপাখ্যান, প্রেম ও পূর্ণিমা, বিপন্ন প্রহর, সূর্যাস্ত, পথহারা পাখি, বৈরী বসতী, অন্তরে প্রান্তরে, দাবানল, ঠিকানা, ঝড়মুখো ঘর, অবৈধ অরণ্য, দখল, রোহিণী নদীর তীরে ও ঈমানদার এর মতো জনপ্রিয় ঐতিহাসিক উপন্যাস।

এ ছাড়াও অপূর্ব অপেরা, শীত বসন্তের গীত, পাষানী, দুপুরের পর, রাজ্য ও রাজকন্যারা, থার্ড পন্ডিত, মুসাফির ও গুনাহগার নামে বেশ কয়েকটি সামাজিক উপন্যাস উপহার দেন।

তার রচিত ভ্রমণ কাহিনী- সুদূর মক্কা মদীনার পথে, কল্পকাহিনী- সুলতানার দেহরক্ষী, রম্য রচনা- রাম ছাগলের আব্বাজান, চার চাঁন্দের কেচ্ছা ও অমরত্বের সন্ধানে উল্লেখযোগ্য।

শিশু সাহিত্য উল্লেখ করার মতো- ভূতের মেয়ে লীলাবতী, পরীরাজ্যের রাজকন্যা ও রাজার মেয়ে কবিরাজ। গত দুই বছরে তিনি বখতিয়ারের তিন ইয়ার, রাজ নন্দিনী, লা-ওয়ারিশ, রূপনগরের বন্দী ও দ্বীপান্তরের বৃত্তান্ত নামে পাঁচটি বই উপহার দিয়েছেন। এ নিয়ে তার মোট লেখা বইয়ের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪২টিতে।

আর কিছুদিন বেঁচে থেকে তিনি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা লেখে যেতে চান এই কথা সাহিত্যিক।শফীউদ্দিন সরদার নিজে তার জন্মদিন পালন করতেই চান না, তবে তার ভক্তরা ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে বাড়িতে গেলে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে যান।

কবি আল মাহ্মুদের ভাষায়, ‘শফীউদ্দিন সরদার বাংলাদেশের সমকালীন সাহিত্যে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। যিনি ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী মুসলিম বীরত্বগাঁথার মহান উপস্থাপক। তিনি আমাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কথা শিল্পী। আমি উপন্যাসিক শিল্পীর একজন ভক্ত’।

 

রাইজিংবিডি/শাহ মতিন টিপু