শিল্প ও সাহিত্য

ছোটগল্প || কিছুটা প্রগতিশীল

বিনীত তার সহপাঠী চেতনা দিক্ষীতের সঙ্গে বন্ধুত্ব, ভালোবাসা আর বিয়ের প্রস্তুতি বিগত দুই বছরে এমনভাবে পাকাপোক্ত করেছিল যে, একদিন চেতনা স্থায়ীভাবে তার বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়। নিজের সফলতা দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিল বিনীত! অনেকটা সাবধানও! প্রেমের জোয়ার কিছুটা শান্ত হলে প্রথম তার ভেতরে যে ভাবনা এলো তা হলো, যতটা সহজে সে চেতনাকে পটিয়েছে ঠিক ততটা সহজে যেনো আর কেউ তাকে পটাতে না পারে। বছর ধরে চেতনার সৌন্দর্যে কোনো কমতি দেখা গেল না, বরং আগের চেয়ে বেড়েছে। চঞ্চলতা তার কথার পাশাপাশি যেনো চোখেও দৃশ্যমান হতে লাগলো। 

বিনীত স্বাধীন ভারতের অধিকাংশ যুবকদের মতোই ছিল। সবগুণ একটু একটু করে- কিছুটা আধুনিক, কিছুটা পারম্পরিক, কিছুটা প্রতিভাবান, কিছুটা ক্রুদ্ধ, কিছুটা আবেগ, কিছুটা প্রগতিশীল, কিছুটা পতনশীল। আর দশজনের মতো তার স্বপ্নের  স্ত্রী-ও সেই ছিলো, যে কিছুটা শিক্ষিত হবে কিন্তু যাকে দমন করা যাবে; আধুনিক হবে, আজ্ঞাপালনকারী বুঝদার হবে; কিন্তু তার চেয়ে ভিন্ন চিন্তা আর বিচার বোধসম্পন্ন না হলেই হলো। 

বিনীত লক্ষ্য করে চেতনা সারাদিন কোনো না কোনো কাজে অথবা কথায় মগ্ন হয়ে কাটিয়ে দেয়। অনেকটা এমন যেন, জীবনের কোনো সুর তার শরীর আর মন স্পর্শ করেছে আর সে নৃত্যরত মুদ্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। বিনীত ভাবলো, তাকে একটু ঘেটে দেখা দরকার তার ভেতরে কি চলছে। 

সে এমন ভঙ্গিতে কথা বলা শুরু করলো, ‘চেতু, তুমি ছাড়া আর কারো সঙ্গে কথা বলতে আমার কেন জানি ভালো লাগে না।’ সে-ও যেন ঠিক এমনই একটা উত্তর শোনার অপেক্ষায় ছিল- চেতনাও বলবে, তোমাকে ছাড়াও আমার আর কোনো ছেলের সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে না।  

চেতনা বললো, ‘তাহলে তো গভীর সমস্যা। কাল যদি আমার কোনো বন্ধু বাড়িতে আসে তাহলে তুমি কী করবে?’ ‘আমি পাশের ঘরে চলে যাব’, সে অনেকটা রেগে উত্তর দিলো। ‘দেখ, আমার তো সবার সঙ্গেই কথা বলতে ভালো লাগে, বাচ্চাদের সঙ্গে, বড়দের সঙ্গে এমন কি আমি তো বই আর টিভির সঙ্গেও কথা বলি।’ ‘চেতনা, দুনিয়া এখন অনেক বখে গেছে। যখনই তুমি কারো সঙ্গে কথা বলো একটা মাপ রেখে কথা বলবে। লোকজন আজকাল মেয়েলোকের খোলামেলা আলাপকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে।’ ‘ব্যাখ্যা করতে দাও, সেটা তাদের সমস্যা, আমার না।’ চেতনা কাঁধ নাচিয়ে উত্তর দেয়।

বাড়ির নিচের কয়েকটা ঘর খালি ছিল। অবশ্য এটা বিনীতের বাবার বানানো বাড়ি। নিচের তলায় বাগানের বাইরের দিকটায় চারটা ঘর বানানো হয়েছিল দোকান ভাড়া দেওয়ার জন্য। বাবা যেহেতু তাদের সঙ্গে থাকে না, তার নিয়ম-কানুন আর চালু নেই। বিনীতের বাবা-মা এখন জম্মুতে থাকেন। বিনীতের একদম পছন্দ ছিল না বাড়ির কোনো অংশ ভাড়া দিয়ে আয় করা। চারটি দোকানঘর ফাঁকা পড়ে আছে। মাসে একবার পরিষ্কার করার জন্য ঘরগুলোর তালা খোলা হয়। ঘরের কাজের মেয়ে বিরক্ত হয়ে বকবক করে ঘর পরিষ্কার করে। চেতনা তখন সঙ্গে সঙ্গে ওকে পাঁচ টাকার নোট হাতে ধরিয়ে দেয়। 

এবার ডিসেম্বরে এমনই ঠাণ্ডা ছিল যে আকাশে সূর্য আর রোদের দেখা পাওয়া গেল না। লোকজন শীতের পোশাক পরা শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু প্রতিমুহূর্ত এমন মনে হতো যেনো চারপাশ বরফের দেয়ালে ঢাকা। এমনই একদিন কফি হাউজ থেকে ফেরার সময় বিনীত আর চেতনার নজর পড়ে এক রিকশাওয়ালার দিকে। রিকশাওয়ালার গায়ে একটা পাতলা সুতি কাপড়ের চাদর। রিকশা চালানোর সময়ে সেটা বারবার সরে যাচ্ছিল। ভেতরে গায়েও পাতলা কাপড়ের জামা। 

বিনীতের খুব খারাপ লাগে। বলে, ‘ঘরে এত এত পুরনো কাপড়, লোকটাকে কিছু কাপড় দিয়ে দাও।’  ‘নিচের ঘরে বড় ট্রাঙ্কে কিছু পুরনো কাপড় আছে।’ বাড়িতে পৌঁছে চেতনা রিকশাওয়ালাকে বলে, একটু দাঁড়াও তোমাকে একটা সোয়েটার দিচ্ছি। সে ওপর থেকে বড় ট্রাঙ্কের চাবি নিয়ে আসে। সেখানে পুরনো আমলের লেপ-তোশক আর জামা-কাপড় ছিল। সে বাছাই করে একটা ভালো শীতকাপড় আর চাদর বের করে রিকশাওয়ালাকে দেয়। রিকশাওয়ালা চেতনার কাছ থেকে ভাড়া নিতে রাজি হয় না। সে বারবার হাত জোড় করে ফিরিয়ে দেয়, ‘না মালিক আপনি বেশ অনেক দিনের মুজুরির সমান জামাকাপড় দিয়েছেন।’ কিন্তু বিনীত আর চেতনা একপ্রকার জোড় করেই ভাড়াটা রিকশাওয়ালার হাতে গুজে দেয়।

রাতের বেলা ঘরের দরজা বন্ধ করার সময় চেতনা দেখে, রিকশাওয়ালা কোথাও যায়নি, সে ঘরের সামনেই রিকশায় চাদর পেঁচিয়ে শুয়েছিল। সে বিনীতকে জানায়। বিনীত চিন্তিত হয়ে পড়ে, ‘এই বরফপড়া ঠাণ্ডার রাতে শীতে মরে যাবে, দেখো।’ চেতনা মায়া দেখিয়ে আবদার করে, ‘বিনীত, বেচারাকে নিচের খালি ঘরে এক রাত কাটাতে দাও। সবগুলো ঘর ফাঁকা পড়ে আছে।’ বিনীতে নিচে গিয়ে রিকশাওয়ালাকে উঠিয়ে নিচের ঘরে নিয়ে আসে। এটা শুধু একরাতের মামলা ছিল। এমন শীতে তাকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবাও ঠিক না, বিশেষ করে সে যখন ভোড়ে উঠে উঠান ঝাঁট দেয়, গাছে পানি দিয়ে খুশী মনে বিনীতকে তার রিকশায় অফিসে ছেড়ে আসে। কখনো কখনো চেতনাও রহমত চাচার রিকশায় বাজারে চলে যায়। 

এক রাতে অনেক ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করে। বরফ জমতে থাকে। চেতনার মনে হলো রহমত চাচার খুব ঠাণ্ডা লাগতে পারে। সে তার ঘরের জানলা দিয়ে রহমত চাচাকে ডাকতে শুরু করে, ‘রহমত চাচা ঠাণ্ডা লাগছে না তো?’ রহমতও জবাব দেয়, ‘না মালকিন।’ বিনীতের ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে বিরক্তির ভঙ্গি নিয়ে চেতনার দিকে তাকায়, ‘এটা তো দিনেও জিজ্ঞেস করতে পারতে।’ ‘দিনে তো রোদ থাকে। ঠাণ্ডা তো রাতেই বাড়ে।’  ‘আচ্ছা যদি তার ঠাণ্ডা লাগেও তাহলে কি করবে? নিজের কম্বল তাকে দিয়ে দেবে? ‘তুমি তো সাধারণ একটা কথাকে বিগড়ে দাও। সে এমনটা বলবে না কখনো।’  বিনীত বকবক করতে লাগলো, ‘আমার ঘুমটাই হারাম করে দিলে।’

দপ্তর থেকে স্কুটার কেনার জন্য বিনীত ছমাস ধরে আবেদন করে রেখেছিল। তাতে সুবিধা এই, সরকারি কর্মচারীরা নির্ধারিত মূল্য থেকে দশ শতাংশ ছাড় পাবে আর ফান্ড থেকে লোনের সুবিধাও সহজে পাওয়া যায়। যেদিন স্কুটার কেনার লোন পাওয়া গেল, বিকেলে ঘরে পৌঁছেই চেতনাকে খুশীর সংবাদ দিতেই, অনেকটা গম্ভীর সুরে চেতনা জানতে চাইল ‘বেচারা রহমত চাচার কী হবে তাহলে?’ ‘এর মানে কী?’ আমরা কি তার ঠেকা নিয়েছি, চলে যাবে সে যেখান থেকে এসেছে সেখানে।’ বিনীত ঝাঁঝালো গলায় বলে।   ‘স্কুটার থাকলে, রিকশাওয়ালা দিয়ে আমাদের কী হবে? আমরা কোনো সরকারি দাতব্যখানা তো খুলে বসিনি।’ ‘তোমার তাকে নিয়ে এত ভাবনা কিসের? তোমার কী লাগে সে? আমি তো ভেবেছি স্কুটার কেনার সংবাদে তুমি অনেক খুশী হবে।’ ‘খুশী তো আমি অবশ্যই হয়েছি, কিন্তু একজন গরিব বেচারার জীবিকা স্ব-ইচ্ছায় কেড়ে নেওয়া এটা অনেকটা খারাপ ব্যাপার।’ ‘তাহলে কী করবো? আমরা কি তাহলে এনজিও খুলে বসে যাব আর এলাকার সব নগ্ন, ভুখাদের আশ্রয় হয়ে বসে থাকব?’ ‘সেজন্য বড় কলিজা দরকার। আমরা একটা বেঘর লোকের মাথায় সামান্য ছায়া দিতে পারছি না যেখানে সেই লোকটি নিজ পায়ে দাঁড়ানোর সক্ষমতা রাখে।’

বিনীত খুব বিরক্ত হয়। সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, রহমত চাচার সঙ্গে এমন দুর্ব্যবহার করবে যেনো সে নিজ থেকেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। বিনীতের এমন আচরণ শুধু রহমত চাচার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ধীরে ধীরে ছোট-ছোট কথাবার্তায় চেতনার ওপরও সে অযথা রাগ দেখাতে শুরু করে। বেশ কয়েকবার সে তার অফিসের সহকর্মীদের ঘরে নিয়ে আসে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় বিনীতের ঘরে বসেই মদ-বিয়ার খাবে। অন্যান্যদের বাড়িতে সে সুযোগ নেই। কারো বাসায় বয়স্ক বাবা-মা তো কারো বাসায় ছোট বাচ্চা। সেদিক থেকে বিনীতের ঘরে তেমন ঝুট-ঝামেলা নেই। 

এই সুযোগ পেয়ে বিনীতের সহকর্মীরা খুশী হয়ে সবাই মিলে চাঁদা তোলে। চেতনা নিমকি আর সালাদের ব্যবস্থা করে দেয় কিন্তু আয়োজনের পাশাপাশি চেতনাও তাদের সঙ্গে বসে পড়ে। বিনীত বিরক্ত হয়, কোনো না কোনো বাহানায় তাকে এটা সেটা আনতে বারবার উঠিয়ে দেয়। চেতনা সেগুলো ঠিক ঠিক নিয়ে এসে পুনরায় সবার সঙ্গে বসে পড়ে। কোনোভাবে নিজের রাগ কমিয়ে বিনীত রাতের বেলা চেতনাকে বোঝানোর চেষ্টা করে, ‘দেখ চেতু, তুমি আমার অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে বসো না, এটা কেমন ভালো দেখায় না।’ ‘আমি তো এর মধ্যে খারাপ কিছু দেখি না। সবাই কেমন সম্মান দিয়ে কথা বলে।’ চেতনা অসম্মতি প্রকাশ করে।  ‘আরে এটা তো শুধু তোমাকে দেখানো মাত্র। অফিসে এই লোকগুলো অন্যের বউকে নিয়ে কেমন আজেবাজে কথা বলে, তুমি জানো?’ ‘যদি তারা এতটাই নীচ হয় তাহলে তোমার তাদের কাছ থেকে দূরে থাকা উচিৎ।’  ‘আমাকে উপদেশ দেওয়ার কোনো দরকার নেই। আমার কর্তব্য তোমার সম্মান রক্ষা করা।’ বিনীত সেখানেই কথা শেষ করে দেয়। 

বিনীত লক্ষ্য করে বাজারে দোকানদারগুলো চেতনাকে দেখলেই হেসে হেসে কথা বলে। তার কথা মতো দুই-পাঁচ টাকা কমও রাখে। কিছু কিছু দোকানদার তো তার পছন্দকে এতটাই বুঝতে পারে যে ঠিক ঠিক তার চাহিদামতো জিনিসপত্র এনে হাজির করে। 

বিনীত একদিন বলে, ‘চেতু তুমি কেন কষ্ট করে বাজারে যাও। অফিস থেকে ফেরার পথে আমি বাজার নিয়ে আসবো। তুমি লিস্ট বানিয়ে আমাকে সকালে ধরিয়ে দিবে।’ নিজের প্রেমিক স্বামীকে কষ্ট দিতে চাইতো না চেতনা। পাশাপাশি তার স্বাধীনভাবে ঘুরাফেরা করাটাও ছিলো পছন্দের। সে এখন বিনীতকে না বলেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য একা একা বাজারে চলে যায়। কখনো বাজারে গিয়ে কিছু না কিনে শুধু শুধু ঘুরে আসে।

বাড়িতে দিয়ে যাওয়া পত্র-পত্রিকা আর ম্যাগাজিনের সংখ্যাও ছিল বেশি। কারণ দুজনেরই পড়ার শখ ছিল। বিনীত যেখানে পত্রিকা উল্টিয়ে এক-দুপাতা পড়ে সেখানে সে পুরো পত্রিকা খুঁটিয়ে পড়ে ফেলে চেতনা। সেখানে প্রকাশিত কোনো গল্প, কবিতা পড়ে বিনীতের সঙ্গে সেগুলো নিয়ে আলাপ করে। বিনীত বলতো, ‘দেখ, যে কোনো রচনা সমালোচনার চেয়ে সেখানে কতটা ডুবে যাওয়া যায় সেটা দেখাই আসল।’ চেতনা বলে, ‘সমালোচনা ছাড়া জীবন পানসে, সাহিত্যও। বান্ধবীরা বলে, তুমি সারাদিন এইসব গল্প-উপন্যাস নিয়ে পড়ে থাকো, এগুলোতে শুধু মিথ্যে আর বানোয়াট গল্প।’ 

চেতনা তার সম্মতি আর অসম্মতি জানাতে খুব একটা সময় নিত না। সে সম্পাদককের দীর্ঘ চিঠি লিখতো। যদি গল্পের সঙ্গে লেখকের ফোন নাম্বার পাওয়া যায় তাহলে সেই লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতো। সচরাচর তো কারো উত্তর পাওয়া যেত না। একবার এক গল্প লেখক চেতনার চিঠির জবাব দিয়েছিল। তিনি অনেকটা নম্রতা সহকারে চেতনার সমালোচনা স্বীকার করে বলেন, ‘যে পর্যন্ত আমার বুদ্ধিমত্তা ছিল আমি গল্পটা লিখেছি। তবে আপনি আমার চেয়ে আরও প্রখর বুদ্ধিমত্তার অধিকারী।’ 

স্বামী-স্ত্রী দুজনেই সেই গল্প পড়েছিল। দুজনের প্রতিক্রিয়াই ভিন্ন ছিল।  বিনীতের মতে, ‘কত বড় লেখক আর কত বিনয়। সে উলটো তোমার হাতে বন্দুক ধরিয়ে দিলো।’ চেতনা বলে, ‘ভুল। বিনীত, লেখকরা খুব চালাক হয়। সে আসলে এই কথা বলে আমাকে তার পিছু ছাড়িয়েছে।’ ‘বাদ দাও, তোমারও বা এত সময় কই বসে বসে লেখকদের চিঠি লেখা। কাহিনি লেখা হয় পড়ে ভুলে যাওয়ার জন্য।’  চেতনা টের পায়, প্রতিদিন রাতে বিনীত তার মোবাইল ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করে। ভালো করে লক্ষ্য করে বুঝতে পারে বিনীত আসলে খুঁজে বের করতে চায় সে সারাদিন ফোনে কাদের সঙ্গে কথা বলেছে।  ‘কতটা নীচু মানসিকতার প্রকাশ। আমি তো তার কাছ থেকে অফিসে থাকা প্রতিটা মুহূর্তের হিসাব নিতে চাই না’ এমনটা চেতনার উপলব্ধি হলো। 

চেতনার মনটা কেমন নিস্তেজ হয়ে গেল। তার মনে হচ্ছিল কেউ তাকে উপর থেকে প্রতিমুহূর্তে নজর রাখছে। সে বই বাদ দিয়ে কম্পিউটারের দিকে মনযোগ দেওয়া শুরু করে। আরে এ কি! চেতনা যেনো ঘরে বসে এক নতুন পৃথিবীর সন্ধান পেয়ে যায়। সব বিষয়ে এত বিস্তারিত আর বিচিত্র তথ্য। যে কোনো বিষয়ের সঠিক খবর জানার জন্য এখন তার মন আরও উৎসুক হতে শুরু করে। বিনীত রীতিমতো হয়রান হয়ে গেল। সে যখনই কোনো বিষোয়ে আলাপ তোলে, চেতনা সে বিষয়ে আরও দশটা বেশি আলাপ তুলতে শুরু করে। বিনীত চেতনার নতুন নাম দেয় ‘মিনিপিডিয়া’।

চেতনার প্রখরতায় বিনীত প্রভাবিত ছিল আবার প্রতারিতও। সে বুঝতে পারে জীবনের দৌড়ে চেতনা তাকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাবে।

ফেইসবুকে চেতনার হাজার বন্ধু হয়ে গেল। সে এখন ঘরের ভেতর আরও মনযোগী হয়ে উঠেছে। সে রাত জেগে ইন্টারনেটে কিছু না কিছু পড়াশোনা করে। এই কদিন বিনীত খুব হাঁসফাঁস করতে থাকে। ভাবতে থাকে, যদি চেতনা কোনো চাকরিতে ঢুকে পড়তে চায় তাহলে সেখানেও সে বিনীতকে ছাড়িয়ে যাবে।

মমতা কালিয়ার জন্ম ২ নভেম্বর ১৯৪০, উত্তরপ্রদেশ, ভারত। হিন্দি ভাষার সুপরিচিত কথাসাহিত্যিক, কবি ও শিক্ষক। প্রধানত মধ্যবিত্ত ভারতীয় নারীদের জীবন, জীবিকা ও বিচিত্র অভিজ্ঞতার বয়ান পাওয়া যায় তার গল্প, উপন্যাসে। ২০১৭ সালে উপন্যাস ‘দুঃখম সুখম’-এর জন্য তিনি ব্যাস সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন।