সুরের বাঁধন || শাহরিয়ার সোহেল‘আমি তোমারও সঙ্গে বেঁধেছিআমারও প্রাণ, সুরেরও বাঁধনেতুমি জান না, আমি তোমারেপেয়েছি অজানা সাধনে।’সত্যিই কি মাধবী, আমি তোমাকে পেয়েছিতুমিতো গ্যাস বেলুনের মতো উড়ে চলো দুরন্ত আকাশে…অন্য কোথাও সুরের বাঁধনে তোমাকে পেয়েছি আমিআমার এ প্রাণ তোমাতে অবিচ্ছেদ্যএক নিরাকার চিরন্তন ধ্রুব শিখাতোমাকে পেয়েছি অজানা সাধনেহয়ত পাইনি কিছুই-তবু স্বপ্নও কখনো সত্যের অধিকরঙিন ছায়ার আচ্ছাদনে আচ্ছাদিতসুরের মূর্ছনায় ঢেউয়ের তরঙ্গেপ্রাণস্পন্দন উত্থিত ক্রমশ জোয়ারবিকালের সোনালি রোদ-মখমল উষ্ণতাছেড়ে চলে যেতে পারি না অন্য কোথাওমায়ার বাঁধনে রূপশালি ধানভানা শরীরের ঘ্রাণমাথার ভিতরে এক চিরন্তন বোধ সদা আবর্তিতআমি তারে নেভাতে পারি নাঅন্য কোথাও অজানা সাধনেসুরেরও বাঁধনেশান্তির লগনেতোমারও সঙ্গেবেঁধেছি আমার পরমাত্মাছেড়ে চলে যেতে পারি না সুরের মূর্ছনা…ছায়া-পূজা || অব্যয় অনিন্দ্যআলোর অক্ষমতার যন্ত্রণাকে কে যেন নাম দিল ছায়া এই ক্ষোভে কুলবতী আলো সন্ধ্যা হলে ঘরে ফেরে নাদ্বাররক্ষী ওজোনের খিল হাট হলে- পৃথিবীর সাথে বউছি খেলতে খেলতে তাপ হয়ে যায়, মেরু তুষারকে করে জ্যোৎস্নার কান্না সমুদ্রকে দেয় ঘর ভাঙার পাসওয়ার্ড। কুলবতী আলোর ক্ষোভে কুলনাশ নিয়ে আমাদের ম্যা ম্যা কূটনীতির বেডরুমে পৌঁছবে না কূটনীতির টাইয়ের নটে অনেক আলো- উত্তরাধুনিক আলো, ধার্মিক আলো, সাম্যবাদী আলো, গণতন্ত্রী আলো। এত আলো- তবু কম সংখ্যকদেরকে অন্ধকার ছুড়ে দিতে নিরন্তর ছায়া-পূজা করছে লক্ষ-কোটি পেঁচা। সবখানে আলো পৌঁছার প্রত্যাশা নিয়েই সূর্য হিলিয়ামে পুড়ে পুড়ে পৃথিবীর বুকে দুধ যোগায়তবুও মানবতার সামনে কেবল ছায়ারই রাজত্ব– কেবল পেঁচাদেরই হুলুধ্বনি। তেজপাতা || গিরীশ গৈরিকগর্ভবতী রিভলবারের সন্তান গর্ভেই থাকবোমারু বিমানের ডিম বিমানেই থাকএ সকল ছানা আমাদের পুকুরের হাঁসের সাথে খেলা করে নাবৃষ্টি শেষে বাড়ির উঠানে এসে প্যাক প্যাক করে ডাকে নাবৃক্ষ কখনো মলত্যাগ করে না তার জন্মজালে এ সকল বিষয় অধ্যায়নে আরো জানা যায়সাপলুডুর সাপ ও মই কোনো সমার্থক শব্দ নয়নার্সের কাছে আর যাব নাআর দেখাবো না গোপন ব্যথাসব ব্যথাই চেটে খাবে প্রসবকালীন গাইয়ের মতোঅনন্তিকা || বিলাস দাশমাঝ দুপুরের অতিথি তুমি, এসেছো সন্ধ্যাবেলাতবুও তোমার পদচারণায় রাঙা এ কূল-হয়েছে উতলা, এই পরন্ত বেলা।তারা হয়ে আসবে তুমি এই আঁধারেতাই ভেবে নেমেছি শঙ্খচিল হয়ে কিনারে,হয়েছো তুমি সুখতারা, রেখেছো আমায় ওই সন্ধ্যা ঘিরে। অবাধ্য কেশ তোমার তুলছে ঢেউ, মৃদু বাতাসে চিকন কোমরও দুলছে আধো ভেজা অঙ্গে তাই দেখে কুঞ্জ ছেড়েছে রসিক ভ্রমর, অন্তরালে হলো পুলকিত, তোমার কোমল দেহের সুগন্ধে অথৈ আনন্দের নীরব সাগরের জল রাশি, সম-সম উচ্ছন্নেও ওই পারের দিকহারা ব্যথিত ফুলটুশি।অষ্টাদশীর বুকটা তোমার শূন্য করেআপন মনে উপ-বসনখানি বিছিয়েছ নিঃসঙ্গ বালু চরে,লোকলজ্জা ভুলে সেই দৃশ্য ধরেছে প্রকৃতির মনেতাই তো, দোয়েল-কোয়েল আর-কোকিলের সুর রেখেছে তোমায় ঘিরেদেখেছো কি তাকিয়ে একবারও পিছু ফিরে? হেমন্তের আবছা কুয়াশায় অধর তোমার হয়েছে প্রজাপতি কিংবা আষাঢ়ে ভেজা সুমিষ্ট নাসপাতি নয়নের কাজল ছুঁয়েছে গাল, তাতে কি লুকিয়েছে তোমার যৌবন অনল? ওই দ্যাখো তাকিয়ে, অর্ধজীবন্ত শামুক ঝিনুকেরাও- অগোচরে ছুঁতে চায় তোমার পতিত আঁচল নির্জন দ্বীপে জাগ্রত নারী তুমি অনন্তিকা তোমার পদভারে এ ভূমি আজ প্রাণবন্ত জ্বলে উঠেছে বিংশ শতাব্দিতে নিভে যাওয়া প্রণয়ের অগ্নিশিখা। ভালোবাসায় নমঃ || মান্নান পলাশরাত বাড়লে মেরুদণ্ড ঋদ্ধহাড়ে বাড়ে এক নতজানু-প্রেম-অপ্রেমের বেলা-অবেলায়,বেখেয়ালে ভালোবাসা পালায়।বিড়ালছানার মতো আদর, ময়নারমতো কথা শেখাতে হয়;নয়তো বাঁকা হাড়গোড়ে-বাসমতি গন্ধ ছড়িয়ে সে পালায়, গাংচিলতেপান্তরে- হায় হায় জীবনবেদে সজারুঝনঝনায়, ভালোবাসার আশায় বসে থাকা বটতলায়।ভালোবাসার তড়খড় লতিয়ে লালনের কালীগঙ্গায়-জল বাড়ে, কবিতে কবিতায় ভালোবাসার মোহন বাঁশি বাজায়,কে বাজে, প্রেম-ভালোবাসার মরুদ্যানে ভালোবাসার শব্দরা শুকিয়ে খড়খড়ে মড়েমড়ে রয়।আপেক্ষিক সূত্র মেনে যায় না, হৃদয়াঞ্চলের নদীতে পানশি চায়,ছলছলিয়ে খিলখিলিয়ে ময়ূর সময় পেলে, ভালোবাসারা পুঁটির মতো তেল ছড়িয়ে, হৃদয় জুড়িয়ে সন্ধ্যার আগেই আঁচলে জড়ায়।ভালোবাসতে গেলে একটু পাগল হতে হয়, মজনু তো নয়জীবনভর ভরপেট ভালোবাসায় থাকে কবিরা, তাদের মিথ্যেভালোবাসার কাব্যমালা গাঁথতে হয়, নইলে কী ৩৩ বছর যায়?রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫/তাপস রায়