বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা সিরিজ-২০১৭

বোলিংয়ে বিবর্ণ, ব্যাটিংয়ে উজ্জ্বল বাংলাদেশ

ইয়াসিন হাসান, কলম্বো থেকে : রৌদ্যজ্জ্বল আবহাওয়া। সুন্দর সকাল। পড়ন্ত বিকেল আরও সুন্দর। কিন্তু রঙিন দিনটিতে রংধনুর সাত রঙের মত রাঙাতে পারল না বাংলাদেশ। রাবণের দেশে রঙিন পোশাকে প্রস্তুতি ম্যাচ হেরে বসল বাংলাদেশ। প্রস্তুতি ম্যাচ হলেও দুই দলের শারীরিকভাষা দেখে মনে হল মূল মঞ্চে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে লড়ছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা বোর্ড সভাপতি একাদশ। টেস্ট হারের পর পুরো শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশকে হারাতে বদ্ধপরিকর! ফ্লাট উইকেটে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে রানের পাহাড় গড়ে স্বাগতিক দল। স্কোরটাও বিশাল, ৭ উইকেটে ৩৫৪। অন্যদিকে বাংলাদেশের স্কোর ৮ উইকেটে ৩৫২। পরাজয়ের ব্যবধান ২। বোলিংয়ে বিবর্ণ ছিল তা স্কোরবোর্ড দেখলেই স্পষ্ট। আবার ব্যাটিংয়ে যে দ্যুতি ছড়িয়েছে তাও বোঝা যাচ্ছে। বোলিং পরিকল্পনা মাফিক না হলেও ব্যাটিং শতভাগ ঠিকঠাক হয়েছে বাংলাদেশের। সাব্বির, সৌম্য, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক ও মাশরাফি নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছে দারুণভাবে। রোমাঞ্চর লড়াইয়ের শেষটায় ছিল চরম নাটকীয়তা। শেষ ওভারে ১৩ রানের প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। থিসারা পেরেরার প্রথম চার বলে রান এল মাত্র ৫ রান। শেষ দুই বলে দারকার ৮ রান। হাত-পা ঘামিয়ে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ তখনও বেশ আত্মবিশ্বাসী। ওয়াইড লেন্থে পেরেরার পঞ্চম বল। ক্রিজ থেকে একটু সরে স্কয়ার কাট করে পয়েন্টের উপর দিয়ে বল বাউন্ডারিতে পাঠালেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ বলে দারকার আরও একটি বাউন্ডারি। কিন্তু পারলেন না। ফুলার লেন্থ বল মিড উইকেট ও লং অনের মাঝ দিয়ে বের করে পেলেন মাত্র ১ রান। ২ রানের হার বাংলাদেশের। ম্যাচটি হারলেও বাংলাদেশের উজ্জ্বল ব্যাটিং প্রশংসা কুড়িয়েছে সবার। এর আগে রৌদ্রজ্জ্বল সকালের শুরু থেকেই আগ্রাসী লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। মাশরাফির করা প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খোলেন দিলশান মুনাবীরা। একটু লাফিয়ে ওঠা বল কাভারের ওপর দিয়ে চার মারেন মুনাবীর। পরের ওভারে তাসকিনের শর্ট বলও ছাড় দেননি মুনাবীরা। শর্ট বল পুল করে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে বিশাল ছক্কা। প্রতিশোধ নিতে বেশি দেরি করেননি তাসকিন। নিজের তৃতীয় ও দলীয় সপ্তম ওভারে মুনাবীরাকে সাজঘরে ফেরত পাঠান ডানহাতি পেসার। ফুলার লেংথ বল অন সাইডে ফ্লিক করতে গিয়ে বল মিস করে এলবিডব্লিউ মুনাবীরা। সাজঘরে ফেরার আগে ২১ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৪ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে ১১৪ রানের জুটি গড়েন সানদান বিরাকোডি ও কুশল পেরেরা। দুজনই হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান। বড় হওয়া এ জুটি ভাঙেন প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে শ্রীলঙ্কায় উড়ে আসা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। ২৩তম ওভারে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে এসে উইকেটের স্বাদ পান তরুণ এই পেসার। আউট করেন বিরাকোডিকে। শর্ট বল পুল করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন ৬৭ রান করা বিরাকোডি। ৫৩ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান তিনি। সতীর্থ ফিরে যাবার পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন পেররা। তবে বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকেননি তিনি। সেচ্ছ্বায় অবসর নেওয়ার আগে ৮৯ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৬৪ রান করেন পেরেরা। এর কিছুক্ষণ পরই সানজামুল ইসলাম বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন। ১৭তম ওভারে মাঠে আসা সানজামুল ৩১তম ওভারে আউট করেন মিলিন্দা সিরিবর্ধনেকে। ওভারের পঞ্চম বলে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন সিরিবর্ধনে। পরের বলে প্রতিশোধ নেন সানজামুল। উইকেটের পেছনে সোহানকে ক্যাচ দেন সিরিবর্ধনে। ২৯ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩২ রান করেন তিনি। ৪০ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার রান ছিল ২৬৯। শেষ ১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে আরো ৮৫ রান যোগ করেন লঙ্কানরা। তবে শুরুর দিকে ঝড় শেষ দিকে কমে আসে। থিসারা পেরেরা ৪২, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ৫১ এবং দাসুন শানাকা ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট নেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, তাসকিন আহমেদ, সাইফুদ্দিন, সানজামুল ইসলাম ও আবুল হাসান রাজু। পাহাড় সমান লক্ষ্যের বিপরীতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলে উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বাঁহাতি পেসার বিনুরা ফার্ন্দানোর বলে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন ইমরুল কায়েস। দ্বিতীয় উইকেটে ১১৬ রানের জুটি গড়েন সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমান। দুজনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে মাথা তুলে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। আগ্রাসন দেখান সাব্বির রহমান। ৪৫ বলে তুলে নেন হাফ-সেঞ্চুরি। এরপর নিজের ইনিংসটি বড় করতে থাকেন ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান। কিন্তু ৭২ রানে অযাচিত শট খেলতে গিয়ে আউট হন সাব্বির। চতুরঙ্গ ডি সিলভার বলে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন সাব্বির। ৬৩ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান সাব্বির। তার ফিরে যাবার ৮ রান আগে সৌম্য সরকার আউট হন সিরিবর্ধনের বলে। ৪৩ বলে ৪৭ রান করা সৌম্য সিরিবর্ধনের বলে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে লং অনেক ক্যাচ দেন। টেস্ট দলপতি মুশফিকুর রহিমও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ২৩ বলে ২০ রান করে আউট হন চতুরঙ্গর বলে। সুইপ করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন মুশফিক। পঞ্চম উইকেটে আবারও প্রতিরোধ পায় বাংলাদেশ। এবার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৬৬ রান যোগ করেন। এ জুটির বেশিরভাগ রান করেন মোসাদ্দেক। মাহমুদউল্লাহ স্ট্রাইক  রোটেট করেন। অন্যদিকে মোসাদ্দেক স্বাগতিক বোলঅরদের উপর চড়াও হন। ৫০ বলে ৫৩ রান করে আউট হওয়ার আগে বাংলাদেশকে ভালো অবস্থানে রেখে আসেন মোসাদ্দেক। ২১৮ থেকে ২৩৯ পর্যন্ত যেতে সাজঘরে ফিরেন শুভাগত হোম (২) ও সানজামুল ইসলাম (৫)। এরপরই ম্যাচের দৃশ্যপট পাল্টে যায়। ক্রিজে আসেন মহারাজ মাশরাফি বিন মুর্তজা। ৩৫ বলে ৫৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে মাশরাফি ম্যাচের মোড় পাল্টে দেন। শুধু নিজে ব্যাটিং করেননি অষ্টম উইকেটে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ৫৮ বলে ১০১ রানের জুটি গড়েন। মাশরাফিকে পেয়ে হাতখুলে মেরে মাহমুদউল্লাহও আনসাং হিরো। জয়ের থেকে ১৫ রান দূরে থাকতে মাদুসানাকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন মাশরাফি। ততক্ষণে তার রান ৫৮। এরপর মাহমুদউল্লাহ সাইফউদ্দিনকে নিয়ে চেষ্টা চালালেও ২ রানের আক্ষেপে পুড়েন। ৬৮ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৭১ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। সাইফউদ্দিনের ব্যাট থেকে আসে ২ রান। রাইজিংবিডি/কলম্বো (শ্রীলঙ্কা)/২২ মার্চ ২০১৭/ইয়াসিন/শামীম