সারা বাংলা

‘আমি যে কি হারিয়েছি তা কেবল আমিই বুঝি’

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা : খুলনা মহানগরীর সাত রাস্তা মোড়ের অদূরে দোলখোলা বাজার সংলগ্ন ইসলামপুর রোডের অবস্থান।

 

এ রোডের পূর্ব দিকের গলিটি বিলাসী হোটেল গলি নামে পরিচিত। গলির ঠিক মাথায় চারতলাবিশিষ্ট ভবন। এ ভবনের দ্বিতীয় তলায় ব্যাংকার স্বামী চিত্ত রঞ্জন কুন্ডু এবং দুই সন্তান অভিজিৎ কুন্ডু ও অবন্তি কুন্ডুর সঙ্গে বসবাস করতেন গৃহবধূ  শিপ্রা কুন্ডু (৫০)। কিন্তু একটি ঘটনা সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে।

 

শনিবার বেলা ১১টার দিকে বাড়ির ১০০ গজের মধ্যে দোলখোলা মোড় সংলগ্ন স্থানে আকস্মিকভাবে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন শিপ্রা কুন্ডু।

 

ঘটনার পর গৃহবধূ শিপ্রা কুন্ডুর বাসভবনে গিয়ে দেখা যায়, তার বৃদ্ধা মা নাতনি অবন্তি কুন্ডুকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছেন। তিনি বার বার মেয়ের নাম ধরে বলছেন, ‘এ কি হয়ে গেল, আমার শিপ্রাকে কোথায় পাবো’। বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন তিনি।

 

আবার নানীকে জড়িয়ে ধরে শিপ্রা কুন্ডুর একমাত্র মেয়ে অবন্তি কুন্ডু বলছে, ‘আমি যে কি হারিয়েছি তা কেবল আমিই বুঝি, আর কেউ বুঝবে না’। এ ছাড়া খবর পেয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আত্মীয়স্বজনরাও একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করছেন।

 

নিহত শিপ্রা কুন্ডুর ননদ সরস্বতি কুন্ডু বলেন, ‘বৌদি পুঁজার ফুল কিনতে দোলখোলা বাজারে গিয়েছিল। তিনি স্থানীয় দোকান থেকে ফুলও কিনেছিলেন। কিন্তু ফুল নিয়ে আর বাসায় ফিরতে পারেননি। সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে ফুলও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাস্তায়ই পড়েছিল। তার আর পুঁজা করা হলো না’।

 

প্রতিবেশীরা জানান, শিপ্রা কুন্ডুর চোখের মনি ছিল ছেলে অভিজিৎ এবং মেয়ে অবন্তি। তাদের সবসময় তিনিই দেখভাল করতেন। এখন তিনি চলে যাওয়ায় ছেলে-মেয়েরা ভেঙে পড়েছে।

 

এদিকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে শিপ্রার ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। এরপর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া এ ঘটনায় এখনও থানায় মামলা দায়ের করা হয়নি।

 

প্রসঙ্গত, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, কেসিসির ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডনকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি ছোড়ে।ওই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে শিপ্রা কুন্ডু নামের গৃহবধূ নিহত হন।

   

রাইজিংবিডি/খুলনা/৩১ ডিসেম্বর ২০১৬/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/রিশিত