সারা বাংলা

শীতলক্ষ্যা তীরে বকুল তলার গ্রামীণ মেলা

রফিক সরকার, কালীগঞ্জ : শীতলক্ষ্যা তীরে বকুল তলার গ্রামীণ মেলা কালীগঞ্জবাসীর প্রিয় মেলা। মেলাটি বসে মাঘ মাসের চতুর্থ দিনে। শুরুতে এই মেলাটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও বর্তমানে তা সকল ধর্মের মানুষের উৎসবে পরিনত হয়েছে। কালীগঞ্জের বকুল তলার এই গ্রামীণ মেলা প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো। নির্দিষ্ট দিন এলেই মেলা প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে উঠে নানা বয়সী মানুষের পদচারণায়। মেলায় আসে টমটম গাড়ি, চড়কি, নানা রঙের পুতুল, বেলুন, কাঠ-বাঁশ- বেতের তৈরি আসবাবপত্র ও মাছ ধরা সরঞ্জাম, মাটির হাড়ি, পিঠা তৈরির সাঝ, পিড়ি, মালসা, জলচৌকি, রান্নার তৈজসপত্রসহ আরো অনেক বাহারী উপকরণ। এবার ১৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে এই মেলা। ইতিমধ্যে সকল আয়োজন চূড়ান্ত। তিলা, কদমা, নিমকি, শখের মিঠাই, চানাচুর, মাসের বোরা, খই, বাতাসা ও হরেক রকম খাবারের গন্ধে ম ম মেলার প্রান্তর।  এসে গেছে পুতুল নাচ, নাগরদোলা, ঘূর্ণি বিদেশ, বেলুন-বন্দুক খেলার সাজ-সরঞ্জাম। এসে গেছে চটপটি-ফুচকা, আলু-ডাবলির মতো মুখরোচক খাবার-দাবারও। মেলায় এসেছে মাটির তৈরি কুমারদের দেশি-বিদেশি ফলের রঙিন ব্যাংক, সাহেব-মেম, কিংবা বউ পুতুল, মাটির গরু, ছাগল, হাতি, বাঘ, সিংহ, ঘোড়া, কুমির, হাঁস, মুরগি, মাছ, পেখম তোলা ময়ূর এসব। কথা হয় মেলায় আগত শিশু দর্শনার্থী উপজেলার সৈয়দ আহমেদ কিন্ডার গার্টেন স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাশেদ্বীন সরকার রূপণের (৮) সঙ্গে। রূপন জানায়, তার স্কুলের পাশেই এই মেলা বসেছে। মেলা থেকে তার বাবা তাকে খেলনা গাড়ি ও বেলুন কিনে দিয়েছে। কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদার্ত্তী গ্রামের গৃহবধূ রোজীনা বেগম (২৫) এসেছেন সংসারের প্রয়োজনীয় কিছু তৈজসপত্র কিনতে। মায়ের সঙ্গে আসা শিশু রাফিয়া ভাঙ্গা ভাঙ্গা শব্দে জানায় সে এসেছে বড় পুতুল কিনতে।  এমন নানা রঙীন বায়না নিয়ে বড়দের সঙ্গে আরও অনেক শিশু মেলায় এসেছে। কালীগঞ্জ বাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. রফিজ উদ্দিন (৭৫) জানান, তার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে কালীগঞ্জের বকুল তলার গ্রামীন মেলা দেখে আসছেন। কিন্তু তারও আগে বাবা-দাদার কাছে এই মেলার অনেক গল্প শুনেছেন। শুরুতে এই মেলাটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও বর্তমানে তা সকল ধর্মের মানুষের আনন্দের উৎসব। প্রথমে এক দিনব্যাপী হলেও পরে তিন ও সাত দিনব্যাপী, এখন পনের দিনব্যাপীও হচ্ছে। আর এর একটি অংশ জুড়ে থাকছে ফার্নিচারের মেলা। ঢাকার মিরপুর থেকে মেলায় শিশু খেলনার দোকান নিয়ে এসেছেন মো. আব্দুল্লাহ (৪০)। তিনি জানান, ১০ বছর যাবৎ তিনি এই মেলায় দোকান নিয়ে অংশগ্রহণ করে আসছেন। বেচা-কেনা যাই হইক স্থানীয় মানুষের সাথে অন্যরকম একটা সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে তার।

 

মেলার একটি স্টল

গাজীপুরের সালনা থেকে এম.ডি রিমন (২৬) এবারই প্রথম মেলায় শিশু খেলনার দোকান নিয়ে এসেছেন। কিন্তু মেলায় এসে এখানকার গ্রামীণ পরিবেশ তার খুব ভালো লেগেছে বলে জানালেন। মেলায় মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর থেকে ক্রোকারিসের দোকান নিয়ে এসেছেন পঞ্চাশোর্ধ মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান প্রায় দুই যুগ ধরে তিনি এই মেলায় দোকান নিয়ে আসেন। তা ছাড়া প্রায় এক যুগ ধরে তিনি একই জায়গায় দোকান নিয়ে বসছেন। মেলায় কসমেটিস দোকানি রহুল আমিন (৪৫) জানান, তার দোকানে মহিলা ক্রেতার ভিড় প্রচুর। তাই বিক্রিও ভালো। মেলার আয়োজক আলী আল মারুফ অনিক জানান, মেলায় স্বল্প খরচে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীদের স্টলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলম চাঁদ জানান, মেলায় যাতে কোন প্রকার জুয়া বা অসামাজিক কার্যক্রম এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতি না হয় সে ব্যাপারে মেলা প্রাঙ্গণে সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।   রাইজিংবিডি/কালীগঞ্জ (গাজীপুর)/১৭ জানুয়ারি ২০১৭/রফিক সরকার/টিপু