সারা বাংলা

মাথা ন্যাড়া করে শাস্তি: পাঁচজন গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর : রংপুরে পরকীয়ার অভিযোগে সালিশ বৈঠকে এক কৃষককে সারা দিন গাছের সঙ্গে বেঁধে মারপিট ও মাথা ন্যাড়া করে গলায় জুতার মালা দিয়ে গ্রাম ঘুরানোর ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার ভোরে পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- দুলাল মিয়া, বেলাল হোসেন, তৈয়ব আলী, গোলাম মোস্তফা ও আব্দুল মান্নান। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত এক গৃহবধূকে মারপিট করে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই দিন থেকে ওই গৃহবধূ নিখোঁজ রয়েছেন। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, রংপুর নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব অভিরাম বামনপাড়া গ্রামের মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে দুলাল মিয়ার সঙ্গে পাশের হরিরাম পিরোজ গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে রফিকুল ইসলামের বন্ধুত্ব ছিল। ঘটনার দিন গত বুধবার সকালে রফিকুল ইসলাম খেতে বোরো ধানের চারা লাগাতে দুলালের বাড়ির পাশে জমিতে যায়। সকাল ১০ টার দিকে অসুস্থবোধ করলে তিনি বন্ধু দুলালের বাড়িতে যান। এ সময় দুলালের স্ত্রী আঞ্জুমানারা বেগম তাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যায়। বিষয়টি আশপাশের লোকজন দেখতে পেয়ে রফিকুলকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ আনে। পরে রফিকুলকে বাড়ির সামনে একটি গাছে বেঁধে রেখে মারপিট করা হয়। সারা দিন গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখার পর রাত ১০ টায়  গ্রাম্য সালিশ বসানো হয়। সালিশে নেতৃত্ব দেন হারাগাছ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ, আবু তৈয়ব, আব্দুল কাদেরসহ ১৪ সদস্যের একটি সালিশ কমিটি। সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রফিকুলকে মাথা ন্যাড়া করে গলায় জুতার মালা পরিয়ে গ্রামে ঘুরানো হয়। পরে রাত ১২ টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার পরপরই ওই গৃহবধূকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর আর ওই গৃহবধূর খোঁজ মিলছে না। এ ঘটনায় রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে শুক্রবার গভীর রাতে কোতোয়ালি থানায় পাঁচজনের নামে এবং অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন- প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ, বেলাল হোসেন, আব্দুল মান্নান, মোস্তফা মিয়া ও ফারুক হোসেন। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুলাল মিয়ার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব রয়েছে। ঘটনার দিন আমি খেতে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বন্ধুর বাড়িতে যাই। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাকে ও দুলালের স্ত্রীকে জড়িয়ে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাদের দুইজনকে নির্যাতন করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘সালিশ কমিটির লোকজন আমার এবং দুলালের স্ত্রীর কোনো বক্তব্য শোনেননি। দুইজনকেই মারপিট করেন। তারা এক তরফাভাবে বিচার করে সাজা দিয়েছেন।’  তিনি এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। দুলালের বড় ভাই আব্দুল মান্নান সালিশের বিষয়টি স্বীকার এবং নিজেকে নির্দোশ দাবি করে বলেন, সালিশ কমিটিতে ১৪ জন ছিলেন। তিনি ছিলেন না। সালিশ কমিটির লোকজন রফিকুলকে মারপিট ও মাথা ন্যাড়া করে জুতার মালা গলায় দিয়ে ঘুরানোর বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন। তবে নিখোঁজ গৃহবধূ এখন কোথায় আছেন এ বিষয়ে তিনি কিছু জানান না বলে জানান। ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম সরোয়ার মির্জা বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনে ভেবেছিলাম গ্রামবাসী এর সমাধান করবে। কিন্তু বিচারের নামে মাথা ন্যাড়া করে জুতার মালা দিয়ে গ্রাম ঘুরাবে, এটা ভাবতে পারিনি। অভিযুক্ত গৃহবধূকেও তারা গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।’ তিনি এ ন্যক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন বলেন, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নিখোঁজ গৃহবধূকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। রাইজিংবিডি/রংপুর/২৯ জানুয়ারি ২০১৭/নজরুল মৃধা/বকুল