সারা বাংলা

গ্রেপ্তার আতঙ্কে নিশ্চিন্তপুর গ্রাম পুরুষ শূন্য

মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে চাউলিয়া ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের গ্রাম নিশ্চিন্তপুর। শহরতলীর ছোট এ গ্রামের নাম নিশ্চিন্তপুর হলেও আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না এখানকার বাসিন্দাদের। গত রোববার গ্রামের দুইপক্ষের সংঘর্ষ এবং এ নিয়ে মামলার পর সেখানে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। গ্রেপ্তার আর হয়রানি এড়াতে নিশ্চিন্তপুর গ্রাম পুরুষ শূন্য। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। পড়ে আছে খেত-খামার। আবার সংঘর্ষ শুরু হতে পারে- গ্রাম জুড়ে এমন গুজবে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। সংঘর্ষের ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে মামলা হয়েছে। এলাকার বাসিন্দা লাল্টু মিয়া জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় চাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজার রহমান ও ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আকিদুলের সমর্থকদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ চলে আসছে। গত শনিবার রাতে নিশ্চিন্তপুর বাজারে ইয়ারুল ও হাসান নামের দুইপক্ষের দুই যুবকের মধ্যে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে একটি দোকান ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এ ভাঙচুরের জের ধরে রোববার সকালে দুইপক্ষের সমর্থকেরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁঠা নিয়ে প্রতিপক্ষ ও তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। এ হামলা ও পাল্টা হামলায় উভয়পক্ষের ১৪ জন আহত হয়েছে। কমপক্ষে ১৫টি বাড়ি ও ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর হয়েছে। লুটপাট চলে কয়েকটি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। আটক করে পাঁচজনকে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তাঘাটা ফাঁকা। ঘর বাড়িতে রয়েছে নারী ও শিশুরা। এলাকার পুরুষেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে পুলিশের ভয়ে। বাড়িতে নারী আর শিশুরা অজানা আতঙ্কে সময় পার করছে। সংঘর্ষে বেশ কিছু বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট করা হয়। বাজারের সব দোকান বন্ধ করে যে যার মতো নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। এলাকাজুড়ে পুলিশ টহল দিচ্ছে। গ্রামের বাসিন্দা শাহাদত হোসেন (৭০) বলেন, ‘ছেলেরা ব্যবসা করে। মারামারির সময় তারা গ্রামে ছিল না। তবু গ্রামে দলাদলির কারণে তারা বাড়ি আসতে পারছে না। ব্যবসা বন্ধ।’ বৃদ্ধা আকলিমা বেগম বলেন, ‘তিন ছেলে ও তাদের স্ত্রীরা বাড়ি ছেড়ে বাইরে আছে। আবার মারামারি, হামলা হতে পারে।’ চাউলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আকাশ (৯) জানায়, ‘বাড়ি থেকে স্কুলে যেতে দিচ্ছে না।’ চাউলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজার রহমান ও ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আকিদুল মেম্বর এ ঘটনায় জন্য পরস্পরকে দায়ি করেছেন। মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম আজমল হুদা বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’ রাইজিংবিডি/মাগুরা/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন/বকুল