সারা বাংলা

১১ পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার মিরপুরে ১১টি পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোকে সামাজিকভাবে বয়কট করেছেন স্থানীয়রা। এই পরিবারগুলোর সদস্যরা অভিযোগ করে বলেছেন, তারা আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সদস্য। কিন্তু এলাকাবাসী তাদেরকে কাদিয়ানি বলে গণ্য করেন। আর এ থেকেই তাদেরকে একঘরে করা হয়েছে। একঘরে করে রাখার ফলে তারা এলাকায় চলাফেরা করতে পারছেন না, হাট-বাজারে জিনিস কেনা-বেচা করতে পারছেন না। এমনকি বোরো জমিতে সেচের পানি পর্যন্ত দিতে পারছেন না। তারা এক ধরনের নিরাপত্তাহীন পরিবেশের মধ্যে বাস করছেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে জেলার মিরপুর উপজেলাধীন চিথলিয়া ইউনিয়নের মহিষাখালী গ্রামে এক ধর্মসভা থেকে ঘোষণার পর এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ১৯৯২ সাল থেকে চিথলীয়া ইউনিয়নের মহেষাখোলা গ্রামের কিছু মানুষ আহমদিয়া সম্প্রদায়ে যোগ দিতে শুরু করেন। গ্রামে সব মিলিয়ে এখন ১১টি আহমদিয়া পরিবার আছে। ভুক্তভোগী উক্ত গ্রামের মৃত রজব আলী মন্ডলের ছেলে ফরিদ আহম্মেদ (৩২) বলেন, ‘ইতোপূর্বে আমরা জুমার নামাজ পড়তে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ভেড়ামারা সাতবাড়িয়াস্থ উত্তর ভবানীপুর আহমদিয়া মসজিদে যেতাম। অনেক দূর হওয়ায় কষ্ট লাঘবে আমার নিজ বাড়িতে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করি। এতে স্থানীয় মুসল্লিরা বাধা দিয়ে তাদের সঙ্গে একই মসজিদে একই ইমামের পেছনে নামাজ পড়তে চাপ দেয়।’ ফরিদ আরো জানান, তাদের এই চাপ উপেক্ষা করে নিজেদের বাড়িতেই তারা নামাজ ঘর করে নামাজ পড়ার উদ্যোগ নেন। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে হুজুর ডেকে প্রকাশ্য সভা করে তাদের উচ্ছেদ করাসহ নানা হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি সামাজিকভাবে একঘরে করার ঘোষণা দেয়। এ সবকিছুর নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় মৃত ছোবহান মন্ডলের ছেলে প্রাক্তন ইউপি সদস্য ছাত্তার মেম্বার, স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি জিয়াউর রহমান ও এলাজ মন্ডলের ছেলে আনিছসহ বেশ কয়েকজন। এক্ষেত্রে চিথলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের ইন্ধন রয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। রঞ্জনা খাতুন নামের এক নারী বরেন, আমাকে কাদিয়ানের বোন বলে অ্যাখ্যায়িত করে আমি যে ব্রাক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম সেখান থেকে আমাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এতে আমার কি দোষ? আর আমরা তো কাদিয়ান না আমরা আহমদিয়া মুসলিম জামায়াতের সদস্য। কলেজ ছাত্রী রিনা খাতুন বলেন, আমি বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়ার পথে কোনো ভ্যান, অটোরিকশা নিতে চায় না। উঠলেও নামিয়ে দেয়। আমাদের রাস্তাঘাটে চলতে দিচ্ছে না, গাড়ির সমস্যা, চিকিৎসার সমস্যা। এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ে বসেছিলাম। সকলের সিদ্ধান্তে আমরা বিষয়টি সমাধান করেছি। চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বলেন, তাদেরকে একঘরে করা হয়নি। ধর্ম নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো। তবে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় এলাজ মন্ডলের ছেলে আনিছের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ সব মিথ্যা। আমরা কেবল একসঙ্গে মিলে মিশে নামাজ পড়ার কথা বলেছিমাত্র। হুজুররা কে কি বলেছে তা তারাই ভালো জানেন। প্রাক্তন ইউপি সদস্য ছাত্তার মেম্বার বলেন, ধর্মীয় অপব্যাখ্যাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যে যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছিলো আমরা সেটা মিটিয়ে দিয়েছি। চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে জমিতে সেচ না দেওয়া, দোকান-পাটে সদায় না দেওয়া বা যানবাহনে চড়তে বাধা দেওয়ার ঘটনা আর ঘটবে না বলে সবাইকে আশ^স্ত করা হয়েছে। এদিকে একঘরে করা হয়েছে এমন সংবাদে উক্ত গ্রাম পরিদর্শন করেন মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান। এ ব্যপারে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো প্রকার কথা বলতে রাজি হননি।  রাইজিংবিডি/কুষ্টিয়া/২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/কাঞ্চন কুমার/রুহুল