সারা বাংলা

কক্সবাজারে জলাবদ্ধতা নিরসনে উচ্ছেদ শুরু

কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজার শহরে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এর আগে নোটিশ দিয়ে অবহিত করার পরও দখলদাররা স্বেচ্ছায় অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না ফেলায় এ অভিযান শুরু হয়। এদিকে কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী নালার এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছে সচেতন মহলসহ পৌরবাসী। তারা পৌর কর্তৃপক্ষের এমন সাহসী উদ্যোগে পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে কক্সবাজার শহরের পানি চলাচলের প্রধানতম নালা বাজারঘাটা এলাকায় এ অভিযান চালানো হয় বলে জানান ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। অভিযানে পৌরসভার শ্রমিকরা ছাড়াও দিনমজুরিতে নির্মাণ শ্রমিকদের নিয়োজিত করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ৩০ মার্চের মধ্যে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ঘোষিত সময়ের মধ্যে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে না পারলে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। অবশেষে বৃহস্পতিবার অভিযান শুরু করে জনগণের কাছে  দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন তিনি। মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ পানি চলাচলের নালা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ। প্রতি বছর জলাবদ্ধতার কারণে শহরের বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম বাজারঘাটাসহ এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। সম্প্রতি সামান্য মৌসুমী বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় পৌর কর্তৃপক্ষ নালার ওপর নির্মিত সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি জানান, এর আগে জেলা প্রশাসন ও পৌর প্রশাসন যৌথভাবে ১২৯ জন অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরী করেছে। অভিযানে তালিকা মতে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। শহরের পানি চলাচলের অন্যতম পাঁচটি নালার সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান চলবে। মাহবুবুর বলেন, নালা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীরা যত বড় শক্তিশালী হোক না কেন; তালিকা অনুযায়ী সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এতে অতীতের মতো স্বজনপ্রীতি-অনিয়ম হবে না এবং কাউকে ছাড়ও দেওয়া হবে না। জলাবদ্ধতা নিরসনে সর্বস্তরের পৌরবাসীর সহযোগিতা ও সর্মথনও কামনা করেন তিনি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পরিবেশবাদী কর্মীসহ সর্বস্তরের পৌরবাসী। সেভ দ্য নেচার কক্সবাজারের সভাপতি আ. ন. ম. মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ বলেন, দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে পৌরবাসী দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। প্রতি বছর ভারি বর্ষণে শহরের বাজারঘাটাসহ এক-তৃতীয়াংশ এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে জমে থাকা পানি ঢুকে পড়ে বাসা-বাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। তিনি বলেন,  নালা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় স্বাভাবিক পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া ভারি বর্ষণের সময় পাহাড় কাটার মাটি বৃষ্টিপাতের পানির সঙ্গে এসে ভরাট হয়ে যাওয়াও জলাবদ্ধতার আরেকটি কারণ। নালা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি শহরে পাহাড় কাটা বন্ধ করার দাবি জানান মোয়াজ্জেম। কক্সবাজার শহরের বাজারঘাটা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, প্রতিবছর জলাবদ্ধতার কারণে বর্ষা মৌসুমের অধিকাংশ সময়ই পানির সঙ্গে বসবাস করতে হয়। সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই বাসা-বাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ে। এতে স্থানীয় এলাকাবাসীর দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। পৌর কর্তৃপক্ষের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মতো সাহসী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তিনি। রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/১৬ মার্চ ২০১৭/সুজাউদ্দিন রুবেল/রুহুল