সারা বাংলা

অকেজো দুটি পা নিয়েই জীবনযুদ্ধে

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা : দুটি পা-ই অকেজো। হাঁটতে পারেন না। তাতে কি, জীবন তো আর থেমে থাকে না। তাই জীবনের চাকা ঘোরাতেই ভ্যানের চাকা ঘোরানোর সিদ্ধান্ত প্রতিবন্ধী আব্দুল লতিফ হাওলাদারের (৫২)। লতিফ হাওলাদার খুলনা মহানগরীর আড়ংঘাটা সরদারডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। বেঁচে থাকার তাগিদে মোটরচালিত ভ্যান চালাচ্ছেন চার বছর ধরে। জীবনসংগ্রামী লতিফ হাওলাদার বলেন, সংসারে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও বৃদ্ধা শাশুড়িকে নিয়ে তাদের সুখের সংসার। কিন্তু দারিদ্রতা পিছু ছাড়ছে না। পাঁচ বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুটি পা বিকল হয়ে যায়। দরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু মাত্র ১০ বছর বয়সেই জীবনসংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। প্রথমে ভিক্ষাবৃত্তি দিয়ে জীবন শুরু হয় তার।  বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর স্ত্রী হিসেবে রাশিদা বেগমের সাথে জীবনসংসার শুরু করেন। বিয়ের কয়েক বছর পরে সংসারে ফুটফুটে একটি কন্যাসন্তান আসে। এর তিন বছর পর আরো একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কাজ করে স্ত্রীর উপার্জন এবং তার সারা দিনের ভিক্ষার রোজগার দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলে যেত। এর মধ্যে দুই মেয়ে বড় হতে থাকায় তাদের লেখাপড়ার খরচও বাড়তে থাকে। বড় মেয়ে খুলনার বিএল কলেজের বিবিএসের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ছোট মেয়ে খুলনার মহিলা পলিটেকনিক কলেজের এনভায়রনমেন্টাল বিভাগের চতুর্থ পর্বে অধ্যয়নরত। ফলে কোনোভাবেই সংসারের চাকা আর ঘুরছিল না। এবার ভ্যান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন লতিফ হাওলাদার। কিন্তু পা কাজ না করায় প্যাডেল ঘোরাতে পারেন না।  তাই ২০১৩ সালের দিকে ধারদেনা করে একটি মোটরভ্যান তৈরি করেন। হাতে হ্যান্ডেল ধরেই শুরু হয় তার নতুন যাত্রা। এরপর থেকেই ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। সারা দিনে মাত্র ১৫০-২০০ টাকা আয়। প্রতিবন্ধী দেখে কেউ কেউ তার ভ্যানে উঠতে চান না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংগ্রামী জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়। দুবেলা দুমুঠো ভাত, স্ত্রী ও নিজের ওষুধ এবং মেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তার। বয়সের ভারে আজ অনেক কিছুই করতে পারেন না তিনি। এ অবস্থায় ভ্যান চালানোও তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ছে। লতিফ হাওলাদার বলেন, ‘প্রতি মাসে তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে ৫০০ টাকা করে পান। এতে তার এবং স্ত্রীর ওষুধের খরচও হয় না। সংসার ও মেয়েদের পড়ালেখার খরচ জোগাতে বাধ্য হয়ে ভ্যান নিয়ে ছুটতে হচ্ছে তাকে। সংগ্রামী জীবন থেকে মুক্তি পেতে সরকারের কাছে তার বড় মেয়ের একটি চাকরির আবেদন জানান এই দরিদ্র ও অসহায় পিতা। প্রতিবেশী মুদি ব্যবসায়ী রনি বলেন, লতিফ হাওলাদার চার বছর ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন। এত কষ্টের পরেও তার অনেক সময় অনাহারে জীবন কাটাতে হয়। রাইজিংবিডি/১৮ মার্চ ২০১৭/ খুলনা/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/টিপু/এএন