সারা বাংলা

বৃষ্টিতে চায়ের বাগানগুলোতে উৎসব আমেজ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : চা-বাগানের জন্য আশির্বাদ হয়ে এল বৃষ্টি। হবিগঞ্জের চায়ের বাগানগুলোতে এখন উৎসব আমেজ। গত দু’সপ্তাহ ধরেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হবিগঞ্জের চা-বাগানের মালিক-শ্রমিক সকলের চোখেমুখেই খুশির ঝিলিক এনে দিয়েছে। কারণ, বৃষ্টি ছাড়া উচুঁ আর ঢালু স্থানে আড়াই থেকে তিন ফুট গাছে কুঁড়ি আসবে না। সেই কাঙ্খিত বৃষ্টি হয়েছে। গাছে কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করেছে। এরমধ্যে গাছের বড় কুঁড়িগুলো শ্রমিকরা সংগ্রহ করছেন। নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফ্যাক্টরিতে। প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। বিক্রির জন্য যাচ্ছে চট্রগ্রাম ওয়্যার হাউজে। সূত্র জানায়, বাগানে ফসলটির উৎপাদন শুরু হবার কথা বছরের ১৫ মার্চ থেকে। সময়মত বৃষ্টির দেখা পেয়ে চা-পাতার উৎপাদন শুরু করেছে হবিগঞ্জের বাগানগুলো। যদিও দেশের সিলেট, চট্রগ্রাম ও পঞ্চগড়ে ৭টি ভ্যালির মাধ্যমে প্রায় ১৯০টি বাগানে চা উৎপাদন হয়ে আসছে। এর মধ্যে পঞ্চগড়ে কাজী এন্ড কাজী বাগানে একমাত্র বায়ূ ‘টি’ উৎপাদন হচ্ছে। আর দেশের অন্যান্য বাগানসহ সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলায় অবস্থিত বাগানগুলোতে  ব্ল্যাক ‘টি’ উৎপাদন হচ্ছে সেই বৃটিশ আমল থেকে। সেই সময় থেকে বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় হতে চা-পাতার উৎপাদন শুরু হয়, সমাপ্ত হয় ডিসেম্বর মাসে। উৎপাদন শেষ হলে চা-পাতার গাছগুলোর নানাভাবে পরিচর্যা করা হয়ে থাকে। প্রতি মৌসুমে হবিগঞ্জর বাগানগুলো প্রায় ১ কোটি কেজি চা-পাতা উৎপাদন করে থাকে। নতুন করে চারা রোপন করে চা-পাতার উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বাগান কর্তৃপক্ষগুলো নানাভাবে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নিয়মমাফিক বৃষ্টির সাথে রয়েছে চা-পাতা উৎপাদনের সম্পর্ক। অতি বৃষ্টি হলে হবে না। নিয়ম অনুয়ায়ী বৃষ্টির সাথে উৎপাদনের ভাল-মন্দ নির্ভর করে। এছাড়াও চা-পাতার উৎপাদন বাড়াতে বাগান কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শ্রমিকদের আন্তরিকতা বিরাট ভূমিকা রাখে। যাই হোক বৃষ্টির সাথে সম্পর্ক রেখে হবিগঞ্জের প্রায় ছোট বড় ৪০টি বাগানে চা-পাতার উৎপাদন চলছে। চুনারুঘাটের চন্ডিছড়া চা-বাগানের ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সময়মত বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। তাই জেলায় প্রথমেই আমরা উৎপাদন শুরু করতে পেরেছি।’

ফ্যাক্টরিতে চা পাতার উৎপাদন পর্যবেক্ষণ

তিনি জানান, গড়ে ২৫ দশমিক ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তাই চা বাগানে এখন সবুজ জেগে উঠেছে। যা দৃষ্টি ও হৃদয়কে দারুণভাবে মুগ্ধ করছে। এভাবে বৃষ্টিপাত হলে, চা-পাতা উৎপাদনে সহায়ক হবে। এরজন্য তাপমাত্রা চাই ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে। তা না হলে সমস্যা তৈরি হবে। দেউন্দি চা-বাগানের শ্রমিক শান্তি রাণী গৌড় বলেন, ‘বছর পর বছর ধরে গাছ থেকে চা-পাতা সংগ্রহ করছি। এটা আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। সব একই রকম লাগে। তবে বৃষ্টির পরে যে কুঁড়িগুলো বের হয় তা চকচকে সবুজ থাকে। তিনি জানান, প্রায় দু’মাস আগে চা-গাছের উপর কাটা হয়েছে। নিয়মিত বৃষ্টি পেয়ে গাছে কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করেছে। যে চা গাছের কুঁড়িগুলো অন্যগুলোর থেকে বেশি বড় হয়ে গেছে, সেগুলোকে ইতোমধ্যে তোলা হয়ে গেছে। এভাবে উত্তোলন চলছে। হবিগঞ্জ জেলার আমতলী চা-বাগানের ম্যানেজার কাজী মাসুদুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টি দেখা মিলেছে। উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে পুরোদমে উৎপাদন শুরু হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘নতুন কুঁড়ির জন্য আমরা আকাঙ্ক্ষায় থাকি। আমরা যারা চা বাগানে কাজ করি তারা এমন আশা নিয়ে অপেক্ষায় থাকি যে কখন কুঁড়ি গজাবে, তখন গাছ সবুজ হবে।’ তিনি বলেন,  ‘বসন্ত এলে চারপাশের সবুজ প্রকৃতি দেখে হৃদয়ে যেভাবে দারুণ অনুভূতি হয়, ঠিক তেমনি বৃষ্টির পর চা গাছে নতুন কুঁড়িতে ভরে উঠতে দেখলে আমাদেরও হৃদয়ও গভীর আনন্দিত হয়ে উঠে। এই নতুন কুঁড়িই তো আমাদের চা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখবে। হবিগঞ্জে সঠিক সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় চা-পাতা উৎপাদনে শুভ ইঙ্গিত।’ জগদীশপুর, রশিদপুর, লালচান্দসহ বিভিন্ন বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপকালে তারা জানান, ‘বৃষ্টির দেখা পাওয়ায় উৎপাদন শুরু হয়েছে।’ বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) সূত্র জানায়, আগাম বৃষ্টিপাত চায়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী। চা-শিল্পের ১৬২ বছরের ইতিহাসে গত চা উৎপাদন মৌসুমে দেশে সর্বোচ্চ ৮৫.০৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/১৯ মার্চ ২০১৭/মামুন চৌধুরী/টিপু