সারা বাংলা

ভালো নেই পেট্রোল বোমায় হতাহতের পরিবার

মাগুরা প্রতিনিধি : ২১ মার্চ রাত মাগুরাবাসীর জন্য কালরাত। ২০১৫ সালে এই রাতে মাগুরা-যশোর মহাসড়কের মঘিররঢাল এলাকায় বালুর ট্রাকে দুটি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে দগ্ধ হন ট্রাকের চালকসহ ৯ শ্রমিক। এদের মধ্যে পাঁচজন ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে মারা যান। বাকি চারজন বেঁচে থাকলেও হারিয়েছেন কর্মক্ষমতা। হতাহত এসব শ্রমিকের ৮ জনের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার  মালিকগ্রামে। অন্য একজনের বাড়ি ফরিদপুরের কুমারখালী উপজেলায়। দুই বছর আগের এই দিন সন্ধ্যায় কয়েকজন শ্রমিক শালিখা উপজেলার ভাটোয়াইল গ্রামে বালি নামিয়ে ট্রাকযোগে মাগুরা ফেরার পথে মাগুরা-যশোর মহাসড়কের মঘিরঢাল এলাকায় পেট্রোল বোমা হামলার শিকার হন। এই শ্রমিকদের একজন মতিন। মাগুরা সদর উপজেলার মালিকগ্রামে মতিনের বাড়ি। সেখানে ছেলের স্মৃতি আগলে কোনোমতে দিনাতিপাত করছেন মা শাকিরন। তিনি বলেন, ‘সরকার বাড়ি, নগদ ১০ লাখ টাকা দিয়েছে। এখন তারা কিছুটা সচ্ছল। কিন্তু ঘুমাতে পারেন না তিনি। চোখ বুজলেই ছেলের চেহারা ভেসে ওঠে।’ হতাহত শ্রমিক পরিবারের দিন কেমন কাটছে তা জানতেই মঙ্গলবার সকালে মালিকগ্রামে গেলে কথা হয় তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। তারা জানান, একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে  তাদের কষ্টে কাটছে দিন। একই পরিবারের সদস্য রওশন ও  মতিন ওইদিন মারা যান। তারা সম্পর্কে ভাই ও ভাইয়ের ছেলে। কথা হয় রওশনের স্ত্রী শুকুরনেছার সঙ্গে। তিনি তিন ছেলে নিয়ে বসে আছেন। বড় ছেলের বয়স ১১ বছর। ছোট দুই ছেলে ইস্রাফিল ও ইব্রাহিমের বয়স ৯ ও ৩ বছর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামী মারা যাওয়ার পর খুব কষ্টে আছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘সবাই ভুলে গিলিও আমরা ভুলি কেমমাইয়ে। এসব লেহে আর কি হবি ? ক্ষতি যা হইছে আমার। আমারই চিরকাল বয়ে বেড়াতে হবি।’ নিহত মতিনের বাবা টোকন বিশ্বাস বলেন, ‘লায়েক ছাওয়ালরে পুড়ায় মারল। কোনু বিচার পালাম না। নিজির আয় নাই । কষ্ট করে  খাতি হয়।’ নিহত শ্রমিক আরব আলীর বাবা ইলিয়াস আলী বলেন, ‘সরকার সাহায্য দেছে। নগদ টাহা ভাঙ্গে খালি কয়দিন যায়? আমাগের কাজ করার কেউ নাই। তাই আমরা ছাওয়াল-পাওয়াল নিয়ে কষ্টে আছি।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেট্রোল বোমা ট্র্যাজেডিতে হতাহত ৯ শ্রমিকের পরিবারের অন্যদেরও দিন কাটছে কষ্টে। মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, পেট্রোল বোমা হামলা মামলায় কয়েকজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মাগুরা জেলা প্রশাসক মাহাবুবর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, মালিকগ্রামে পেট্রলবোমা হামলায় হতাহত শ্রমিকদের সরকার সাহায্য প্রদান করেছে।নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ টাকা ব্যয়ে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে দেওয়া হয় ১০ লাখ করে টাকা। এ ছাড়া আহতদের পরিবারকেও বাড়ি ও ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বালুর ট্রাকে দুর্বৃত্তদের পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় জেলা বিএনপির ৫৬ নেতা-কর্মীর নামে মামলা করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই সময় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে  পুলিশ আটক করে। এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফিরোজুর রহমান জানান, মামলাটির চার্জ গঠনের দিন নির্ধারণ হয়েছে আগামী ২৮ মার্চ। রাইজিংবিডি/মাগুরা/২১ মার্চ ২০১৭/মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন/রিশিত