সারা বাংলা

অনিশ্চয়তা যাদের চিরসঙ্গী

সাফিউল ইসলাম সাকিব, সাভার : ২৪ এপ্রিল ২০১৩ সালের আগের দিনও রেহানা (৩০) ছিলেন আত্মনির্ভরশীল। নিজের উপার্জনেই সংসার চালাতেন। স্বপ্ন দেখতেন সুদিনের। যশোর থেকে আসা এই পোশাক কর্মীর সব স্বপ্ন এখন ধুলিসাৎ হয়ে গেছে রানা প্লাজা নামক মৃত্যুকূপে। রেহানা এখন পঙ্গু। শরীর থেকে হারিয়ে গেছে একটি পা। অনিশ্চিত তার গন্তব্য। সাভারের সিআরপি হাসপাতালের পাশেই রেহানার বসবাস। রেহানা বলেন, ভাই পঙ্গু জীবন খুবই যন্ত্রনার। সংসারের বোঝা আমি। নিজের কাজ নিজে করতে পারলেও খুশি থাকতাম। চার বছর আমার কাছে চল্লিশ বছরের সমান। আমার দিন এখন আর যায় না।

 

রানা প্লাজার তিন তলায় কাজ করতেন শহিদুল। তিনি হারিয়েছেন একটি হাত। সুইং অপারেটরের কাজ জানা এই শহিদুলের অর্জিত অভিজ্ঞতা বিফলে গেছে। এক হাত দিয়ে সুইং এর কাজ করা সম্ভব নয়। তাই শহিদুল এখন বেকার। বেকার শহিদুল এখন পরিবারের বোঝা। তবে সাহায্য চান না শহিদুল। শহিদুলের দাবি পুনর্বাসন। পঙ্গু শহিদুল চান তার উপযুক্ত কাজ। কিন্তু গত চার বছরে কেউ এগিয়ে আসেনি শহিদুলের দাবি পূরণে। সাদ্দাম নামের আরেকজনের গল্পটাই ভিন্ন। রানা প্লাজার শ্রমিক না হয়েও এই ঘটনায় তিনি একটি হাত হারিয়েছেন। চোখের সামনে মারা গেছে তিন সহকর্মী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, রানা প্লাজা পাশের যে ভবনটিতে ধসে পড়েছে ওই ভবনটিতে নেসলে বাংলাদেশ নামের একটি কোম্পানির বিক্রয় শাখার অফিস ছিল। ওই কোম্পানির বিক্রয় কর্মী ছিলাম আমি। নিয়মিত অফিসে যাতায়াত ছিল । দুর্ঘটনার দিন আমিসহ ২৪ জন কর্মী ছিলেন সেখানে। রানা প্লাজা ধসে আমাদের অফিসের ওপর পড়লে আমরা সবাই আটকা পড়ি। সেদিনই আহত অবস্থায় উদ্ধারকর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেন। সেখান থেকে চারদিন পর রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে নেওয়া হলে আমার একটি হাত কেটে ফেলেন চিকিৎসকরা।

 

সাদ্দাম হোসেন বলেন, রানা প্লাজার শ্রমিকদের মত ক্ষতিপূরণ কিংবা সাহায্য সহযোগিতা কিছুই জোটেনি কপালে। কিন্তু একই ঘটনায় আমি আজ পঙ্গু। রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সরকারি হিসাবেই প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ১১৩৬ জন। এ ঘটনায় পঙ্গু হয়েছেন কয়েকশত মানুষ । যাদের সবার জীবন এখন অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে।

   

রাইজিংবিডি/সাভার/ ২৪ এপ্রিল ২০১৭/ সাফিউল ইসলাম সাকিব/রুহুল