সারা বাংলা

চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বাধুনিক কার শেডের যাত্রা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : আমদানি করা প্রায় ৩০০ গাড়ি রাখার ধারণক্ষমতা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বাধুনিক কার শেড চালু হয়েছে। একই সঙ্গে আমদানিকরা প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি পরিবহনের জন্যে চট্টগ্রাম বন্দর ইকুইপমেন্টে যুক্ত হলো অত্যাধুনিক দুটি কার ক্যারিয়ার।  বন্ডেড এরিয়া ঘোষণা না হওয়া সংক্রান্ত জটিলতার ফলে নির্মাণের দীর্ঘ তিন বছর পর বৃহস্পতিবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্দরের এই কার শেড ও কার ক্যারিয়ার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল খালেদ ইকবাল। আজ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়ি জাহাজ থেকে নামানোর পর কার ক্যারিয়ারের মাধ্যমে সরাসরি নতুন এই কার শেডে রাখা হবে এবং কার শেড থেকে কাস্টমস, শুল্কায়নসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে কার শেড থেকেই আমদানিকারককে ডেলিভারি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বন্দর চেয়ারম্যান। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতর আমদানি করা গাড়িসমূহ রাখার ফলে বিশাল এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে কন্টেইনার রাখার ইয়ার্ড করা যাচ্ছে না। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিভিন্ন সময় কন্টেইনার জটের সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে আমদানি করা মূল্যবান গাড়িগুলোর অধিকাংশ খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্দরের অভ্যন্তরে খোলা আকাশের নিচে আমদানি করা দামি ও মূল্যবান গাড়িগুলো দিনের পর দিন ফেলে রাখার ফলে এসব গাড়ির সুরক্ষা হয় না। বৃষ্টিতে ও রোদে গাড়িগুলো বিবর্ণ হয়ে পড়ে। এসব গাড়ি থেকে ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশসহ মূল্যবান মালামাল চুরি হওয়ার ঘটনাও ঘটে।

এই অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতর জায়গা সংকট এবং গাড়ির সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বন্দর ব্যবহারকারী ও গাড়ি আমদানিকারক সমিতি বারভিডার পক্ষ থেকেও বন্দরের বাইরে আলাদা কার শেড নির্মাণের দাবি ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বন্দর স্টেডিয়ামসংলগ্ন এলাকায় প্রায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক কার শেড নির্মাণ করা হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ কার শেড নির্মাণ করলেও বিনিয়োগ বোর্ড ওই কার শেডকে বন্ডেড এরিয়া হিসেবে ঘোষণা না করায় এতদিন এই কার শেডটি চালু করা যায়নি। সর্বশেষ গত মাসে বিনিয়োগ বোর্ড কার শেড এলাকাটিবে বন্ডেড এরিয়া ঘোষণা করে। এর পর বৃহস্পতিবার থেকে এই কার শেড আনুষ্ঠানিক যাত্রা করল। কার শেডের কার্যক্রম চালুর এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন পরিকল্পনা) জাফর আলম, চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার আবদুল্লাহ খান, চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক নুরুন নেওয়াজ খান, জুনিয়র চেম্বার নেতা নিয়াজ মাহমুদ এলিট। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী এবং কার আমদানিকারক বারভিডার নেতারা। নতুন কার শেড চালু করে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল খালেদ ইকবাল বলেন, এই কার শেড চালুর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর আধুনিক বন্দর হিসেবে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল। সারা বিশ্বের বন্দর সমূহের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ৭৬তম র‌্যাংকিং-এ অবস্থান করছে। আমরা আশা করছি আগামী তিন বছরের মধ্যে এই বন্দর বিশ্বের ৫০তম বন্দর হিসেবে র‌্যাংকিং-এ উঠে আসবে। বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, এই কার শেডটি প্রাথমিকভাবে ৩০০ গাড়ি রাখার ধারণক্ষমতা নিয়ে চালু করা হয়েছে। তবে এটির অবকাঠামো এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে পর্যায়ক্রমে কমপক্ষে ২ হাজার ৭০০ গাড়ি রাখা সম্ভব হবে। কার ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে খালেদ ইকবাল জানান, প্রাথমিকভাবে বন্দরে দুটি কার ক্যারিয়ার যুক্ত হয়েছে। পরবর্তীতে আরো তিনটি কার ক্যারিয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই বন্দর ইকুইপমেন্টে যুক্ত হবে। এই কার ক্যারিয়ারের মাধ্যমে বন্দরে জাহাজ থেকে আমদানি করা কার নামানোর পর এসব কার বন্দরের বাইরের কার শেডে পরিবহন করে নিয়ে আসা হবে। এ ছাড়া কার আমদানিকারকেরা চাইলে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ঢাকা কিংবা দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের কার নিয়ে যেতে পারবেন।  রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/১৮ মে ২০১৭/রেজাউল/এসএন