সারা বাংলা

ঐতিহাসিক চুকনগর গণহত্যা দিবস আজ

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা : আজ খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ঐতিহাসিক চুকনগর গণহত্যা দিবস । ১৯৭১ সালের ২০ মে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা চুকনগরে কয়েক হাজার মানুষকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে পাকবাহিনী ও তার দোসররা বাঙ্গালী জাতির উপর নির্বিচারে ঝাঁপিয়ে পড়ে সারাদেশে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অনেকেই জীবন বাঁচানোর তাগিদে ভারতে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। তেমনি মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বৃহত্তর খুলনার বাগেরহাট, রামপাল, মোরেলগঞ্জ, কচুয়া, শরণখোলা, মংলা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, চালনাসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েক লাখ মানুষ ভারতে যাবার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ১৯ মে রাতের মধ্যে সবাই চুকনগরে এসে পৌঁছায়। খুলনা জেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার  দূরে অবস্থিত এই চুকনগর। ওই রাতে চুকনগরের পাতোখোলা বিল, মন্দিরসহ বিভিন্নস্থানে সমবেত হয় কয়েক হাজার মানুষ । কিন্তু পাকবাহিনীর হামলার আশংকায় পরদিন ২০ মে চুকনগর ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। কেউ কেউ সকালের দিকে যাত্রাও শুরু করে। বাকিরাও রওনার প্রস্তুতি নেয়। ঠিক এমন মুহুর্তে পাক বাহিনীর ১টি ট্রাক ও ১টি জিপ চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়ক ধরে মালতিয়া মোড়ের ঝাউতলা নামক স্থানে এসে  থেমে যায়। এ সময় রাস্তার পাশে পাট ক্ষেতে কাজ করছিল চিকন আলী মোড়ল (৭০) নামের এক বৃদ্ধ। গাড়ির শব্দে সে উঠে দাঁড়ালে পাকবাহিনী  প্রথমে তাকেই গুলি করে হত্যা করে। এরপরই শুরু হয় পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ। ঢুকে পড়ে চুকনগরে। শুরু হয় গুলি আর গুলি। নারী-পুরুষের চিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। চারিদিকে শুধু কান্নার শব্দ। এরপর সবকিছুই এক সময় নীরব হয়ে যায়। চারিদিকে শুধু লাশ আর লাশ। কোথাও লুকিয়ে ওদের হাত থেকে কেউ রক্ষা পায়নি। চুকনগর  পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে । সেদিন চুকনগরে কত মানুষ হত্যাকান্ডের শিকার হন তার কোন সঠিক হিসাব ছিল না। তবে তখনকার লাশ বহনকারী ২২ জন শ্রমজীবীর অন্যতম সদস্য আব্দুল জব্বার ও শের আলী সরদারসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, তারা ৪,৪০০ পর্যন্ত গণনার পর আর হিসাব ঠিক রাখতেতে পারেননি। তবে ১০-১৫ হাজারের মত মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল পাক হানাদার বাহিনী। প্রতি বছর দিনটিকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয়। এবারও দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসন ও গণহত্যা-৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৯টায় ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসন চুকনগর গণহত্যা-৭১ স্মৃতি বধ্যভূমিতে পুস্পমাল্য অর্পণ। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে ১০ হাজার মোমবাতি প্রজ্জলন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাইজিংবিডি/খুলনা/২০ মে ২০১৭/ মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/টিপু