সারা বাংলা

হিন্দু-মুসলিম জটিলতায় লাশ সাড়ে ৩ বছর হিমঘরে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর : রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের হিমঘরে সাড়ে তিন বছর এক নারীর লাশ পড়ে আছে। এই লাশের দুইজন দাবিদার হওয়ায় আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। মেয়ের লাশ নিয়ে সৎকার করতে চেয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি, অপরদিকে পুত্রবধূর লাশ নিয়ে দাফন করতে চেয়েছেন এক মুসলিম ব্যক্তি। নীলফামারী জজ আদালতের পিপি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বামনিয়া ইউনিয়নের অক্ষয় কুমার রায়ের মেয়ে নিপা রাণী রায়। নিপা রাণীর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী বোড়াগাড়ি ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার জহুরুল ইসলামের ছেলে হুমাযুন কবির রাজুর প্রেম হয়। তারা ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের পর মেয়ের বাবার অভিযোগে ছেলে-মেয়ে দুইজনকেই জেলহাজতে নেওয়া হয়। পরে তারা মুক্তি পান। মুক্তির কয়েক দিন পর নিপা বিষপানে আত্মহত্যা করেন। এর ৫৪ দিন পর হুমাযুন কবির রাজু বিষপানে আত্মহত্যা করেন। নিপা রাণীর লাশটি ময়না তদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আনা হলে তখন থেকে সেটি হিমঘরে পড়ে আছে। মেয়ের লাশ দাবি করেন বাবা অক্ষয় কুমার মাস্টার, অপরদিকে বৌমার লাশ দাবি করেন জহুরুল ইসলাম মেম্বার। অক্ষয় কুমার মাস্টার নীলফামারী সদর আদালতে মেয়ের লাশ চেয়ে মামলা করেন। মামলার রায়ে তিনি হেরে যান। পরবর্তীতে তিনি সাব জজ আদালতে আপিল করেন। সেখানে জহুরুল ইসলাম হেরে যান। এরপর জহুরুল ইসলাম হাইকোটে আপিল করেন। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। মামলা ও আইনগত জটিলতার কারণে প্রায় সাড়ে তিন বছর লাশ হিমঘরে পড়ে আছে। এদিকে, এক সপ্তাহ হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয় ও ওয়ার্ড মাস্টারের দপ্তরে ধর্না দিয়েও লাশের কোনো ফাইল কিংবা তথ্য পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মওদুদ আহমেদের দপ্তরে গেলে তিনি ওয়ার্ড মাস্টার হাসানকে ডেকে নিপা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দিতে বলেন। পরবতীতে ওয়ার্ড মাস্টার হাসানের পেছনে এক সপ্তাহ ঘুরেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। নীলফামারী জজ আদালতের পিপি অক্ষয় কুমার মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় হিমঘরে নিপার লাশ পড়ে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, মামলা সংক্রান্ত জটিলতা ও দুই পরিবারের জেদাজেদির কারণে লাশ প্রায় সাড়ে তিন বছর রমেক হাসপাতালের হিমঘরে পড়ে আছে। তিনি দীর্ঘ দিন হয়ে যাওয়ায় রমেক হিমঘরে লাশ ঠিকভাবে আছে কি না এ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন। ছেলের বাবা জহুরুল ইসলাম জানান, নীলফামারী আদালতে নিপা এফিডেভিট করে মুসলিম হয়ে তার ছেলেকে বিয়ে করে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তারা দুইজনই মারা গেছে। তিনি তার পুত্রবধূর লাশ দ্রুত দাফনের অনুমতি চান। ডোমার উপজেলার বামনিয়া ইউনিয়য়ের ওয়ার্ড সদস্য খুরশিদ আলম তিতাস  ও বোদাগাড়ী ইউপি সদস্য রাশেদুজ্জামান জানান, আইনি জটিলতায় প্রায় সাড়ে তিন বছর লাশ হিমঘরে পড়ে থাকাটা দুঃখজনক। রাইজিংবিডি/রংপুর/৩১ মে ২০১৭/নজরুল মৃধা/বকুল