সারা বাংলা

গণধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : স্বামীর একাধিক বিয়ের প্রতিবাদ করায় টুম্পা খাতুনকে গণধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের নামে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার আশাশুনী উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেন সরদারের ছেলে শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেলা ও দায়রা জজ জোয়ার্দার আমিরুল ইসলাম অভিযোগ এজাহার হিসেবে গণ্য করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার আসামিরা হলেন- উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের গহর গাজীর ছেলে সাইফুল্লাহ গাজী (৩৮), একই গ্রামের ওমর আলী সরদারের ছেলে রিপন সরদার (৩০), এছহাক সরদারের ছেলে আবু মুছা (৩০), একই উপজেলার গদাইপুর গ্রামের মোজাহার সরদারের ছেলে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম, দুর্গাপুর গ্রামের করিম বক্সের ছেলে কামরুল ইসলাম (৪৫), তার ভাই আনারুল ইসলাম (৩৫), আছিরউদ্দিনের ছেলে লাভলু গাজী (৩৫), খালেক সরদারের ছেলে মহসিন সরদার (২৪), শহর আলীর ছেলে খায়রুল ইসলাম (২৮), চেউটিয়া গ্রামের লতিফ সরদারের ছেলে কবীর হোসেন (৩৬) ও খুলনা জেলা শহরের সোনাডাঙা গোবর চাকা মেইন রোডের আবুল হোসেনের ছেলে চিশতি ওরফে চুন্নু চোরা (৪০)। এ ছাড়া পাঁচজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বিবরণে জানা যায়, পাঁচ বছর আগে যাত্রাদলের নায়িকা হিসেবে আশাশুনী উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে অভিনয় করতে আসা গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার বটবাড়ী গ্রামের মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাসের মেয়ে সোমা বিশ্বাস (২৫) ধর্মান্তরিত হয়ে (ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর নাম টুম্পা খাতুন) একই উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের মাদকাসক্ত সাইফুল্লাহকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে দুই বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে। সাইফুল্লার প্রথম স্ত্রী বর্তমানে ইউপি সদস্য তমেনা। এ ছাড়া দুই মাস আগে খাজরা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে যাত্রা করতে আসা এক নারীকে এবং আড়াই মাস আগে আরেক যাত্রা দলের এক নারীকে বিয়ে করেন সাইফুল্লাহ। বর্তমানে তার স্ত্রী সংখ্যা ছয়জন। এ নিয়ে টুম্পার সঙ্গে সাইফুল্লার বিরোধ চলে আসছিল। প্রতিবাদ করায় টুম্পাকে মাঝে-মধ্যে নির্যাতন করতেন সাইফুল্লাহ। ধর্মান্তরিত হওয়ায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়ায় জোরালো প্রতিবাদ না করে সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে নির্যাতন সহ্য করতে থাকেন টুম্পা। গত ৯ জুন দিবাগত রাত ৩টার দিকে টুম্পা স্বামীর সঙ্গে বাগদা চিংড়ির হ্যাচারির বাসায় অবস্থান করছিলেন। এ সময় বাসার পাশে কয়েকজনের কথা শুনতে পান টুম্পা। বিষয়টি স্বামীকে জানালে বাইরে থাকা ওই সব লোকদের উদ্দেশ করে সাইফুল্লাহ বলেন, ‘তোদের যা বলেছি, সেই অনুযায়ী কাজ কর।’  এর পর ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমসহ কয়েকজন টুম্পাকে ধর্ষণ করেন। পরে টুম্পার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। ১০ জুন টুম্পাকে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ও পরে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ জুন সকালে টুম্পা খাতুন মারা যান। নিজেদের বাঁচাতে আসামিরা পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশে টুম্পা খাতুনের লাশ পিরোজপুরে দাফন করেন। মামলায় মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে নিরূপণ করার জন্য লাশ কবর থেকে তুলে ময়না তদন্ত করার কথা বলা হয়েছে। মামলার বাদী নিজেকে নিহত টুম্পা খাতুনের ধর্ম ভাই বলে উল্লেখ করেছেন। আশাশুনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীনুল ইসলাম শাহীন জানান, মামলার নথি পাওয়ার পর তা রেকর্ড করে আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাইজিংবিডি/সাতক্ষীরা/১৩ জুলাই ২০১৭/এম.শাহীন গোলদার/বকুল