সারা বাংলা

মানুষের সঙ্গে কম মিশতেন সাইফুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা : ঢাকার পান্থপথে আত্মঘাতী যুবক হাফেজ মো. সাইফুল ইসলাম গ্রামে গেলে মানুষের সঙ্গে কম মিশতেন। লেখাপড়ার কারণে সাইফুল বেশিরভাগ সময় গ্রামের বাইরে থাকতেন। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস ইউনিয়নের নোয়াকাঠি গ্রামের মানুষের কাছে সাইফুল ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত। তিনি কারো সঙ্গে তেমন মিশতেন না। দারিদ্র্যের কারণে বাকপ্রতিবন্ধী মা এবং ছোট দুই বোনকে রেখে সংসারে বাবাকে সহায়তা করতে কাজের সন্ধানে ঢাকায় যান সাইফুল। সাইফুল ইসলামের বাবা স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং তিনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাকে এবং সাইফুলের দুই বন্ধুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।   পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাইফুলের বাবা হাফেজ আবুল খায়ের স্থানীয় মাঠেরহাট জামে মসজিদে ইমামতি করেন। মা আসমা বেগম বাকপ্রতিবন্ধী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সাইফুল সবার বড়। বড় বোন সাবিয়া খাতুন ইরানী ডুমুরিয়া আলিয়া মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং ছোট বোন তামান্না খাতুন স্থানীয় মহিলা মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী।  সাবিয়া খাতুন ইরানী জানান, তার বড় ডুমুরিয়ার চুকনগর মাদ্রাসা থেকে হেফজ (কুরআন মুখস্ত) সম্পন্ন করেছেন। পরে উলা মজিদিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল, খুলনা আলিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করে বিএল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে তৃতীয়বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন। সাইফুল ইসলাম দৌলতপুরে হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করতেন। মাসে দুই-একবার বাড়ি আসতেন। তিনি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না।  বেশ কিছু দিন ধরে সাইফুল চাকরি খুঁজছিলেন। সর্বশেষ গত ৩ আগস্ট বাড়ি আসেন এবং পরের দিন বিকেলে চলে যান। এর বেশি কিছু তাদের জানা নেই।   স্থানীয় আরিফ ইসলাম জানান, আবুল খায়ের তার প্রতিবেশী। জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে স্থানীয় নোয়াকাঠি মোল্লাপাড়া জামে মসজিদের ইমাম পদ থেকে চাকরিচ্যুত হন। এরপর থেকে তিনি মাঠেরহাট জামে মসজিদে ইমামতি করছেন। জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করা নিয়ে বাবা ও ছেলের মধ্যে মতবিরোধ ছিল। নিহত সাইফুল ইসলামের চাচা আব্দুর রউফ মোল্লা নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দাবি করে বলেন, সাইফুল ভালো ছেলে। অভাবে পড়ে খুলনা থেকে ডুমুরিয়া পর্যন্ত পায়ে হেঁটে গিয়েছেন তিনি।   স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন বলেন, মসজিদের ইমাম আবুল খায়ের খুব ভালো মানুষ। মসজিদের আয়ে তার সংসার চলে। সাইফুল ইসলামের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় সকলে বিস্মিত হয়েছেন। গণমাধ্যমে খবর প্রচারিত হওয়ার পর এলাকার অনেকে তাদের বাড়িতে আসছেন।   সাইফুল ইসলামের সম্পর্কে জানতে তার দুই বন্ধু ঘোষগাতী গ্রামের সানি ও নোয়াকাঠি গ্রামের ঈষাণকে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। খুলনার পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্লা এ প্রতিবেদককে বলেন, সাইফুল ইসলাম ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত তার বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদসহ এ বিষয়ে আরো খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত তার জঙ্গি সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলেনি। সাইফুল ইসলাম সকালে ঢাকার পান্থপথের একটি হোটেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সময় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। রাইজিংবিডি/খুলনা/১৫ আগস্ট ২০১৭/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/বকুল