সারা বাংলা

ড্রামে পাওয়া লাশের রহস্য উন্মোচন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে অমিত মুহুরীর সঙ্গে ইমনের বন্ধুত্ব এবং বাসায় যাতায়াত ছিল। বাসায় গেলে অমিত মুহুরীর স্ত্রীর সঙ্গেও কথোপকথন হতো ইমনের। এই কথোপকথন কাল হলো তার। স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া রয়েছে- এমন সন্দেহ থেকে এক সময়ের দুর্ধর্ষ ক্যাডার অমিত মুহুরী বন্ধু ইমনকে হত্যা করে লাশ ড্রামে ভরে সিমেন্ট ঢালাই করে স্থানীয় পুকুরে ফেলে দেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশ এই খুনের রহস্য উন্মোচন করে গ্রেপ্তার করেছে দুইজনকে। নগরীর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন জানান, চট্টগ্রাম নগরীর এনায়েত বাজার এলাকার রানীর দিঘীতে ড্রামের ভেতরে পাওয়া লাশের রহস্য উম্মোচন হয়েছে। মিলেছে নিহত যুবকের পরিচয়। হত্যাকাণ্ডের শিকার এই যুবকের নাম ইমরানুল করিম ইমন (২৬)। তিনি রাউজান পৌরসভার রেজাউল করিমের ছেলে। নিহত ইমন ছিলেন স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। নগরীর কোতোয়ালি থানার নন্দনকান ৩নম্বর গলির হরিশদত্ত লেইনের যুবলীগ নেতা (বর্তমানে বহিষ্কৃত) অমিতের বাসার বাথরুমে ইমনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় অভিযান চালিয়ে শফিকুর রহমান প্রকাশ শফি (৪৬) ও ইমাম হোসেন মজুমদার প্রকাশ শিশিরকে (২৭) গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অমিতের নাম জানিয়েছেন।  জসিম উদ্দিন জানান, গত ১২ আগস্ট গভীর রাতে স্থানীয় রানীর দিঘীতে একটি ড্রাম ফেলে দেওয়ার সময় আড়াল থেকে তিন ব্যক্তি তা দেখে ফেলেন। এর পর দিন পুলিশকে খবর দিলে দুপুরে পুকুর থেকে সিমেন্ট ঢালাই করা ড্রাম উদ্ধার করা হয়। ড্রামের সিমেন্টের স্তর ভেঙে এক যুবকের লাশ পাওয়া যায়। লাশের পরিচয় এবং হত্যাকাণ্ড ছিল রহস্যাবৃত। গত বুধবার চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লা থেকে পুলিশ হত্যায় জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করার পর এই রহস্য উন্মোচন হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানায়, নিহত যুবক ইমরানুল করিম ইমনের সঙ্গে অমিত মুহুরীর ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেই সুবাদে ইমন প্রায়ই অমিত মুহুরীর নন্দন কাননের বাসায় যেতেন এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা হতো। এতে অমিতের মনে সন্দেহ হয়, তার স্ত্রীর সঙ্গে ইমনের পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। এই সন্দেহ থেকেই ইমনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন অমিত। হত্যার পরিকল্পনা করে গত ৮ আগস্ট রাতে ইমনকে তার বাসায় ডেকে নেয় অমিত মুহুরী। সেখানে কয়েকজন যুবক অপেক্ষায় ছিলেন। বাসায় যাওয়ার পর প্রথমে ইমনকে নির্যাতন চালিয়ে বাথরুমে বন্দি করা হয়। এক রাত বাথরুমে আটকে রাখার পর দিন ইমনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। হত্যার পর লাশ তিন দিন বাথরুমে রেখে ১২ আগস্ট গভীর রাতে ড্রামে ভরে মুখ সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে দেওয়া হয়। এরপর ড্রামটি রানীর দিঘীতে ফেলে দেন। পুলিশ এ নিয়ে অনুসন্ধান করতে নানা কৌশল অবলম্বন করে বুধবার রাতে দুইজনকে গ্রেপ্তারের পর খুনের রহস্য উন্মোচন হয়। তবে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী অমিত মুহুরী এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, অমিত মুহুরীর বিরুদ্ধে নগরীর কোতোয়ালিসহ কয়েকটি থানায় একাধিক হত্যাসহ অন্তত ১২টি মামলা রয়েছে। একটি হত্যা মামলায় তাকে ২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর নগর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে অমিত আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে যান। রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/১ সেপ্টেম্বর ২০১৭/রেজাউল/বকুল