সারা বাংলা

খুলনার ট্যানারিতে সরাসরি চামড়া ক্রয়

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা : খুলনায় প্রথমবারের মতো সুপারটেক্স লেদার ট্যানারি সরাসরি কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয় শুরু করেছে। এবারের ঈদুল আজহার প্রথম দিনে তারা প্রায় ৩০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছে। পরিবেশ বান্ধব এই ট্যানারির প্রতিদিন তিন হাজার গরুর এবং দুই হাজার ছাগলের চামড়া প্রয়োজন। খুলনা মহানগরী থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ফুলতলা উপজেলার  উত্তরডিহি গ্রামে ভৈরব নদীর তীরে প্রায় ৩৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই ট্যানারি। মোট ৩২০ কোটি টাকার প্রকল্পে ২২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড খুলনা শাখা। বর্জ্য শোধানাগারের জন্য ইটিএন প্লান স্থাপন করা হয়েছে। ফলে চামড়া থেকে বের হওয়া বিষাক্ত পানি সরাসরি ট্যানারির শোধনাঘারে চলে যাবে।  সুপার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফিরোজ আহমেদ জানান, চামড়ার মূল্য যাতে না কমে এবং ভারতে চামড়া পাচাররোধে প্রকল্পের কাজ শেষে না হলেও এবার প্রথমবারের মতো চামড়া ক্রয় করেছেন। তিনি ঈদুর আজহার আগে খুলনাঞ্চলের ৬০০ মাদ্রাসা আর এতিম খানার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে চামড়া ক্রয়ের প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। যে কেউ যে কোনো পরিমাণ চামড়া নিয়ে গেলে নগদ টাকায় মূল্য পরিশোধসহ পরিবহন খরচও দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, গত কয়েক বছর ধরে মাদ্রাসাগুলোকে চামড়া নিয়ে বিপাকে এবং সঠিক মূল্য না পাওয়ায় তিনি এ সেক্টরে আসেন। তিনি বলেন, এক সময় চামড়া শিল্প দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত ছিল। তিনি জানান, এবার বাজারে লবণের মূল্য বৃদ্ধির আগেই তিনি লবণ কিনে মজুদ করেছেন। ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড খুলনার জোনাল হেড মাকসুদুর রহমান জানান, এবারের ঈদের চামড়া খরিদ করার জন্য ইসলামী ব্যাংক এই ট্যানারিকে চাহিদা অনুযায়ী বিনিয়োগ করেছে। তিনি জানান, পরিবেশ বান্ধব এই ট্যানারি খুলনা অঞ্চলের সব থেকে বড়। প্রকল্পের ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার শরীফ ফিদা জানান, ঈদের প্রথম দিনে তারা বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রায় ৩০ হাজার চামড়া নগদে ক্রয় করেছেন। ৮০০, ১২০০ এবং ১৮০০ টাকায় গরুর প্রতি চামড়া কিনেছেন। সঙ্গে পরিবহন ভাড়াও দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, চামড়া শিল্পে সাধারণত লাভের বড় অংশ মধ্যস্বত্বভোগীরা নিয়ে যেতেন। তবে তাদের সরাসরি ট্যানারিতে চামড়া ক্রয়ের কারণে আগামীতে মধ্যস্বত্বভোগী আর দালাল চক্রের কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে বলে ধারণা তার। তিনি জানান, তাদের ট্যানারিতে প্রথমে চামড়ায় লবণ লাগানোর পর কোল্ড স্টোরে রাখা হয়। তারপর চামড়ার পশম ছাড়িয়ে একবারে টেন্ড হয়ে বেরিয়ে আসে। এবার তিনি তিন লাখ গরুর এবং দুই লাখ ছাগলের চামড়া ক্রয় করবেন। ঈদুল আজহার দিনে আগে বিভিন্ন সড়কে সামিয়ানা টাঙিয়ে চামড়া কিনতে দেখে যেত। এবার খুলনার শেরে বাংলা রোড়ে মাত্র ৪/৫টি স্থানে ছাড়া কোথাও চামড়া ক্রয় করতে দেখা যায়নি। আর ২/৩ লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া সবোর্চ্চ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১২০০ টাকায়। ভ্যান, রিকশা, ইজি বাইকে করে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে বেশি দামের আশায় চামড়া নিয়ে আসেন নগরীর শেরে বাংলা রোড়স্থ চামড়ার আড়ৎগুলোতে। কিন্তু দাম শুনে বিক্রেতারা হতভম্ভ হয়ে পড়েন। অনেকে চামড়া ফেরত নিয়ে যাচ্ছে। আবার কোথাও কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেয়ে  আগের আড়তে নিয়ে আসছেন। শনিবার, রোববার ও সোমবার নগরীর শেরে বাংলা সড়কের আড়ৎ ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। চামড়ার দাম এক দিকে যেমন কমে গেছে, তেমনি লবণের মূল্য বৃদ্ধিতে বেকায়দায় পড়েছেন আড়ৎ মালিকরা। খুলনা চামড়া আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি আমানউল্লাহ জানান, ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় অনেক ট্যানারি চামড়া ক্রয় না করার এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাইজিংবিডি/খুলনা/০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/বকুল