সারা বাংলা

‘রোহিঙ্গাদের ওপর পশুর চেয়ে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে’

কক্সবাজার প্রতিনিধি : মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর পশু আর জন্তু-জানোয়ারের  চেয়েও নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে- বলে মন্তব্য করেছেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুল হুদা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চি ও সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী ভূমিকার কারণে মানুষকে জঙ্গলের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর পশু আর জন্তু-জানোয়ারদের চেয়েও নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে। রোববার বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত ‘বার্মায় গণহত্যা ও সন্ত্রাস তদন্তে নাগরিক কমিশন’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুল হুদা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আনান কমিশনের সুপারিশ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উত্থাপিত ৫ দফার আলোকে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ লক্ষ্যে কমিশন জোরালোভাবে কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের ভার দীর্ঘ দিন বহন করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়- মন্তব্য করে কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, “এক দেশের বিপদ বা এক দেশের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং ভরণপোষণ আমরা (বাংলাদেশ) বেশি দিন বহন করতে পারব না। আমাদের সেই ক্ষমতা নেই, আবার ক্ষমতা থাকলেও আমাদের যে ক্ষতি হবে তা দীর্ঘ দিন বহন করা সম্ভব হবে না।” রোহিঙ্গা ইস্যু বৈশ্বিক সমস্যা এবং তাদের মিয়ানমারের ফেরত পাঠানোর দায়িত্ব এখন বিশ্ব বিবেকের বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি শামসুল হুদা। তিনি বলেন, “অতিদ্রুত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে বিশ্ব বিবেক জাগতে হবে। এটার দায়িত্ব বিশ্ব বিবেকের। আমাদের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। আমাদের সরকার ও জনগণ এক বাক্যে বলেছি, যুদ্ধ নয়, শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলাপ-আলোচনা এবং কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব।” নাগরিক কমিশনের উদ্যোক্তা সংগঠন ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির’ সভাপতি শাহরিয়ার কবির রোহিঙ্গা নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সংযুক্ত করার দাবি জানান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রমের মাধ্যমে যে পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে, তা কোনোভাবেই কার্যকর ফল বয়ে আনবে না, যদি না এর সঙ্গে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে যুক্ত করা না যায়। “গণহত্যার সংখ্যাগুলো, নির্যাতনের পরিসংখ্যাগুলো নির্ধারণে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে যুক্ত করতে হবে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্যাতনের চিত্র ও পরিসংখ্যাগুলো উঠে আসবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যার প্রমাণের জন্যও এটা জরুরি।” শাহরিয়ার কবির বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ৫ দফা দাবির ভিত্তিতে রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারের নাগরিক, তারা যে গণহারে হত্যাসহ নানাভাবে নির্যাতনের শিকার এবং সেদেশে নাগরিক অধিকারহীন- তা প্রমাণের জন্য কমিশন কাজ করছে। এ লক্ষ্যে নাগরিক কমিশন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া ১০ হাজার রোহিঙ্গার জবানবন্দি সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, নাগরিক কমিশনের কার্যক্রমে যে চিত্র পাওয়া যাবে, তা পরবর্তীতে শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করা হবে।  এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সচিব সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, একই বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত আরেক বিচারপতি নিজামুল হক, কমিশন সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ ও মুহাম্মদ আলী সিকদার, পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিদর্শক নুরুল আনোয়ার, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়াসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার কমিশন সদস্যরা। রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/২২ অক্টোবর ২০১৭/সুজাউদ্দিন রুবেল/বকুল