সারা বাংলা

‘খুব শিগগিরই নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি জাদুঘর’

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বলেছেন, হুমায়ূন আহমেদের ব্যবহৃত প্রচুর জিনিস আছে, সঙ্গে তার হাতে লেখা স্ক্রিপ্ট, বই, চশমা, কলমগুলো, গ্লাসগুলো, যে কাপে চা খেতেন, যে টেবিলে লিখতেন, এগুলো সংরক্ষণ প্রয়োজন। সেগুলো আমার কাছে, হুমায়ূন আহমেদের ভাই-বোনদের কাছে, তার সন্তানদের কাছে আছে। আমার ইচ্ছা নুহাশ পল্লীতে একটি হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি জাদুঘর করব। তিনি বলেন, এই প্রস্তাবটা নিয়ে আমি পরিবারের সাথে আলোচনা করেছি। আশা করছি- খুব শিগগিরই পারিবারিক সম্মতিতে আমরা নুহাশ পল্লীতে জাদুঘরটি স্থাপন শুরু করতে পারব।  সোমবার সকালে গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে প্রয়াত জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ’র ৬৯তম জন্মবার্ষিকীতে কবর জিয়ারত ও কেক কাটা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ সব কথা বলেন তিনি। এ সময় ছেলে নিষাদ ও নিনিত, অভিনেতা সৈয়দ হাসান সোহেল, নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারী, হুমায়ূন আহমেদের ভক্তবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।  

শাওন বলেন, ‘এই দিন হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে সবার একটা আয়োজন থাকে। আমাদের ভেতরের আয়োজন কিন্তু রোজ থাকে। আমরা এক সাথে যে কোন শ্যুটিং করলে আমরা হুমায়ূন আহমেদকে একইভাবে স্মরণ করি। যখন হুমায়ূন আহমেদের নাটক এক সঙ্গে দেখি তখন স্মরণ করি। জন্ম দিনে হয় কি- সারা বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে স্মরণ করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিউজে তাকালে যেমন হুমায়ূন আহমেদের জন্য শুভেচ্ছায় সবাই ভরিয়ে দেয়, সবাই প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করে। আমাদের তখন অনেক ভাল লাগে।’ নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে  হুমায়ূন আহমেদের ৬৯তম জন্মবার্ষিকী নুহাশ পল্লীতে পালিত হচ্ছে । নুহাশপল্লীর বৃষ্টি বিলাসে নুহাশ পল্লীর ভাস্কর আসাদ খানের দ্বিতীয় এক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী চলছে। সেখানে কাঠের ৬৯টি বিভিন্ন শিল্পকর্ম রয়েছে বলে নুহাশপল্লী সূত্রে জানা গেছে। নুহাশপল্লীর কেয়ারটেকার সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, স্যারের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার রাত ১২ টা ১ মিনিটে নূহাশপল্লীতে কেককাটা ও  এক হাজারের মতো মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। আজ সোমবার ভোর ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে নূহাশ পল্লীতে আসেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে তিনি হুমায়ূন আহমেদের কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ এবং ফাতেহা পাঠ করেন ও মোনাজাতে অংশ নেন। পরে হোয়াইট হাউজের সামনে কাটা হয় জন্মদিনের কেক।  

এদিকে সকাল থেকেই হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা নুহাশপল্লীতে আসেন। তাদের অনেকেই প্রিয় লেখকের কবরে ফুল দেন এবং নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থেকে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। আবার অনেকে ঘুরে ঘুরে হুমায়ূন আহমেদের হাতে গড়া নুহাশ পল্লী দেখেন। নুহাশপল্লীতে কথা হয় রাজশাহীর পুঠিয়া থানার পলোপাড়া গ্রামের মো. জামাল উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, তিনি স্থানীয় পলোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নুহাশ পল্লীতে আসার জন্য তিনি রোববার রাত ১১টার দিকে রাজশাহী থেকে বাসে চড়েন। সোমবার ভোর ৪টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রায় নামেন। পরে গাজীপুর চৌরাস্তা, হোতাপাড়া হয়ে নুহাশ পল্লীতে পৌঁছান সকাল ৭টার দিকে। স্যারের কবরে ফুল দেওয়ার জন্য তিনি রাজশাহী থেকে ফুলের তোড়া সঙ্গে নিয়ে আসেন। তিনি জানান, প্রতি বছরই তিনি জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকীতে নুহাশ পল্লীতে আসেন। স্যারের মৃত্যুর পর তিনি ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং জাতীয় ঈদগাহ মাঠে জানাজার নামাজে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি আরো জানান, হুমায়ূন আহমেদের লেখা অধিকাংশ বই তার সংগ্রহে আছে এবং সেগুলো তিনি পড়েছেন। 

   

রাইজিংবিডি/ গাজীপুর/ ১৩ নভেম্বর ২০১৭/ হাসমত আলী/রুহুল/টিপু