সারা বাংলা

তাজরীন ট্র্যাজেডির ৫ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার : আজ ২৪ নভেম্বর, দেশের পোশাক খাতের জন্য এক দুঃসহ স্মৃতির দিন। পাঁচ বছর আগে এ দিনে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনস নামের পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে সরকারি হিসাবে নিহত হয় ১১৩ জন শ্রমিক আর আহত হয় অন্তত তিন শতাধিক শ্রমিক। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ বছর অতিবাহিত হতে চললেও এখনো হতাহত শ্রমিক ও তাদের স্বজনদের দাবি-তারা কোনো আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও সঠিক পুনর্বাসন পাননি। এমনকি ঘটনাটির বিচার কাজও এখনো শেষ হয়নি। নানা জটিলতায় বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে এই মামলার বিচার কাজ। এর পেছনে তাজরীন ফ্যাশনসের মালিক দেলোয়ার হোসেনের প্রভাবকেই দায়ী করে থাকেন শ্রমিক নেতারা। বাংলাদেশ ইন্ড্রাসট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই শাখার সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, তাজরীন ফ্যাশনসের মামলা পাঁচ বছর ধরে ঝুলে থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনা মুনাফালোভী মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতাকে আরো বাড়িয়ে তুলবে। যদি এই মামলাটির দ্রুত বিচার শেষ হয় তাহলে তাজরীনের মত ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব। কি হয়েছিল সেদিন? আহত শ্রমিকদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, ওই দিন  সন্ধ্যার দিকে  আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে অবস্থিত তোবা গ্রুপের মালিকানাধীন তাজরীন ফ্যাশনস পোশাক কারখানাটির  নিচ তলার তুলার গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা পুরো ৮তলা কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কারখানাটির  সহস্রাধিক শ্রমিক জীবন বাঁচাতে ভবন থেকে নামার চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুন লাগার বিষয়টিকে গুজব হিসেবে উড়িয়ে দিয়ে বাহির হওয়ার পথে তালা দেয় নিরাপত্তা কর্মীরা। এতেই প্রাণহানির ঘটনা বেড়ে যায় এই অগ্নিকাণ্ডে। বাধ্য হয়ে ভবনটির  ছাদ থেকে লাফিয়ে কিংবা ভবনের পাইপ বেয়ে নিচে আসার সময় জীবন হারাতে হয় শ্রমিকদের। কেউবা কারখানার ভেতরে আটকা পড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যান। ঘটনার পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইন্সুরেন্স কোম্পানির পলিসির টাকা পেতে ইচ্ছাকৃতভাবে কারখানায় আগুন দেওয়া হয়-এমন অভিযোগ করতে থাকেন শ্রমিক নেতারা। এরপর আশুলিয়া থানায় দুইটি মামলা দায়ের হলে কারখানাটির মালিক দেলোয়ার হোসেনসহ দায়ী কর্মকর্তারও গ্রেপ্তার হন। অগ্নিকাণ্ডের পরপরই সরকার ও বিজিএমইএ নিহত শ্রমিক পরিবারের মধ্যে এবং আহত শ্রমিকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী দেয়াও হয় ক্ষতিপূরণ। বিজিএমইএ’র দাবি, নিহত প্রত্যেক পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সাত লাখ টাকা করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে গুরুতর আহত ৯০ জনকে এক লাখ টাকা করে দিয়েছে বিজিএমইএ। নিহত ৬০ শ্রমিক পরিবারকে মাসিক বেতন দেওয়া হচ্ছে এখনো। আহতদের চিকিৎসা শেষে বিভিন্ন কারখানায় চাকরি দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো অনেক আহত শ্রমিক কোনো আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাননি বলে অভিযোগ করেন। রাইজিংবিডি/ সাভার/ ২৪ নভেম্বর ২০১৭/ সাফিউল ইসলাম সাকিব/রুহুল