সারা বাংলা

শৈশবে বাদামের ডালা ওদের কাঁধে

জাবি সংবাদদাতা : সবে দুপুর গড়িয়ে বিকেল শুরু। ঘড়ির কাঁটা বলছে, বিকেল ৩টা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যিালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের চত্বরে বসে আড্ডা দিচ্ছেন কয়েক শিক্ষার্থী। একটি ছেলে এগিয়ে গিয়ে তাদের উদ্দেশে আবেদন, ‘বাদাম! বাদাম নেবেন ভাই?’ মনে হচ্ছে, বাদাম বিক্রির খুব তাড়া তার। আর হবেই না কেন? রাত ৯টার মধ্যে বাদামের পাত্র ফাঁকা করে বাসায় ফিরতে হবে তার। ছেলেটার বয়স ৭/৮ বছর। সে ক্যাম্পাসে বাদাম বিক্রেতা। সম্প্রতি কথা হয় তার সঙ্গে। নাম সাজ্জাদ। সাজ্জাদ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে ক্যাম্পাসে বাদাম বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়ে। আর রাত ৯টার মধ্যে বাসায় ফেরে। কোনো দিন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আয় হয়। আবার কোনো দিন ২০ টাকাও বিক্রি হয় না। সাজ্জাদ জানায়, লেখাপড়া করতে তার ভীষণ ভালো লাগে। তবে বাদাম বিক্রি করে পড়াশোনার তেমন সময় পায় না। বিকেলে তার অনেক বন্ধুই খেলা করে। কিন্তু তার সেই সুযোগ নেই। এতে মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়। কিন্তু একদিনের ফুসরৎ নেই তার। বাবা-মার আয় দিয়ে সংসার চলে না। তাদের সহযোগিতা করতে হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাজ্জাদের মতো ২০-২৫ জন শিশু আছে, যারা বাদাম, চা কিংবা সিগারেট বিক্রি করে দরিদ্র বাবা-মাকে সংসার চালাতে সাহায্য করে। এরা সবাই ক্যাম্পাসের পাশের এলাকায় বসবাস করে। দুপুর হলেই ক্যাম্পাসে চলে আসে। কোনো দিন বিক্রি ভালো হয়। আবার কোনো দিন খালি হাতে ফিরতে হয়। এ সকল শিশুর অনেকে স্কুলে যায়। এদের অনেকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে। দুই বেলা দু’মুঠো খাবারের যোগাড় করতে এই বয়সে কাঁধে ঝুলাতে হয়েছে বাদামের ডালা, অথচ এই সময়টা দূরন্তপনায় মেতে থাকার কথা ছিল তাদের। রাইজিংবিডি/জাবি/৭ ডিসেম্বর ২০১৭/তহিদুল ইসলাম/বকুল