সারা বাংলা

নারীদের মাঠে যাওয়া বন্ধ!

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : স্বামী রৌদ্রে পুড়ে মাঠে কাজ করেন আর স্ত্রী তার খাবার নিয়ে যান- এটা গ্রামবাংলার প্রাচীন চিত্র। তবে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে স্বামীকে খাবার দিতে যাওয়া, গবাদিপশু চড়ানো ও ঘাস কাটাসহ কোনো কারণেই নারীরা মাঠে যেতে পারবে না। এমন আইন তৈরি করেছে স্থানীয়রা। গত ৮ ডিসেম্বর শুক্রবার জুমার নামাজের পর কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর জামে মসজিদে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা করা হয়, নারীদের আর মাঠে যাওয়া যাবে না। মসজিদের পেশ ইমাম আবু মুছা ওই বৈঠকের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং নামাজের পর সবাইকে মসজিদে বসার জন্য ঘোষণা দেন। পরে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের শুরুতেই পেশ ইমাম আবু মুছা নারীদের ইচ্ছেমতো মাঠে যাতায়াত বন্ধের বিষয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, নারীরা মাঠে গিয়ে উঠতি ফসলের ক্ষতি করে, নিজেরা নানা অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত হয় এবং মাঠে নারীদের একা পেয়ে অনেকে অসমাজিক কাজের প্রতি উৎসাহী হয়ে ওঠে। তিনি আরো বলেন, ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী নারীদের পর্দায় রাখা আমাদের ইমানি দায়িত্ব। এ ব্যাপারে কল্যাণপুর জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান জানান, এ বিষয়ে আগে কখনো কোনো আলোচনা হয়নি। জুমার নামাজের পরপরই মসজিদের পেশ ইমাম আবু মুছা সবার উদ্দেশে বলেন, নামাজের পর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে, সবাই বসে যাবেন। নামাজের পর আবু মুছা কল্যাণপুর গ্রামের নারীদের মাঠে যাওয়ার বন্ধের বিষয়ে কথা উত্থাপন করেন। অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বলেন, গ্রামাঞ্চলে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কৃষিকাজে সহযোগিতা করে থাকেন। আর আমাদের এগিয়ে যেতে হলে অবশ্যই নারীদের সব ক্ষেত্রে অবাধ যাতায়াতের পরিবেশ আমাদেরকেই করতে হবে। তাই নারীদের মাঠে যাতায়াত বন্ধ করা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। কিন্তু এখানে নারীদের গৃহবন্দি করার গভীর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে। সেই সঙ্গে নারীদের মাঠে যাওয়া বন্ধের ব্যাপারে মসজিদে বৈঠক এবং এ সংক্রান্ত ঘোষণা মসজিদের মাইকে প্রচার না করে গ্রামের যে কোনো স্থানে বৈঠকে আয়োজন করা উচিত ছিল। এ ব্যাপারে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহীনুজ্জামান জানান, বিষয়টি শুনেছি এবং ওই মসজিদের ইমামকে তার কার্যালয়ে আসতে বলা হয়েছে। রাইজিংবিডি/কুষ্টিয়া/১২ ডিসেম্বর ২০১৭/কাঞ্চন কুমার/মুশফিক