সারা বাংলা

গাজীপুরে পুলিশকে জিম্মি করে টাকা আদায়, গ্রেপ্তার ৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর : গাজীপুরে এক পুলিশ সদস্যকে জিম্মি করে আটকে রেখে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া, আরো টাকা দাবি, টাকা না দিলে হত্যার হুমকির অভিযোগে দুই নারীসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া কয়েকটি মোবাইলফোন সেট, একটি ল্যান্স ক্যামেরা, সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনের কয়েকটি আইডি কার্ড, মোবাইলফোন সিম কার্ড, অলিখিত চেক, লিখিত-অলিখিত স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা থানার বাড়াইপাড়া এলাকার সোলেমান গণির ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম (২৪), শেরপুর সদরের সন্নাসীচর এলাকার ইসমাইল আলীর ছেলে মো. আইয়ুব আলী (২৮), জামালপুরে মেলান্দহ থানার ঢালুয়া বাড়ি গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে মো. এরশাদ আলী (২৮), একই থানার ঝাউপাড়া টোক্কারচর গ্রামের মাসুদ রানার স্ত্রী রত্না বেগম (৪৫), টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি থানার বলিভদ্র গ্রামের মো. শাহজাহান আলীর ছেলে মাসুদ রানা (৩০), বরিশালের গৌরনদী থানার হোসনাবাদ গ্রামের মো. শাহ আলম সরকারের ছেলে মো. শামীম হোসেন (৪৫) ও গাইবান্দার সাঘাটা থানার বোনারপাড়া গ্রামের হামিদুলের মেয়ে রূপা বেগম (২০)।

 

বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ও তার সহযোগীরা গাজীপুরের টঙ্গী, চান্দনা চৌরাস্তা ও কোনাবাড়ি এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ রাস্তা থেকে সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে জিম্মি করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে নগদ টাকা পয়সা ও মোবাইলফোন সেটসহ মূল্যবান জিনিস লুট করে আসছিল। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাত্রীরা গাজীপুরের ওইসব এলাকায় বাস থেকে নামলে কৌশলে তাদের জিম্মি করে ভাড়া বাসায় নিয়ে আটকিয়ে ফেলত। পরে তারা ভিকটিমের বাড়িতে ফোন দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে ছেড়ে দিত।

 

জয়দেবপুর থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম জানান, জয়দেবপুর থানার ভোগড়া পুলিশ ফাঁড়িতে গাজীপুর পুলিশ লাইনসের রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স (আরআরএফ) সদস্য মো. আমীর হোসেন বুধবার দুপুরে তার পূর্বপরিচিত  মোসা. শ্যামলার সঙ্গে দেখা করতে চান্দনা চৌরাস্তা সংলগ্ন বর্ষ সিনেমা হলের সামনে যান। কথা আছে বলে আমীরকে ভোগড়া এলাকার কাজিমুদ্দিন স্কুল সড়কের শাহ আলমের বাড়ির তৃতীয় তলায় একটি রুমে নিয়ে যান শ্যামলা। সেখানে রূপার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তার সঙ্গে কথা বলার সময় দুপুর ১টার দিকে ভাড়াটিয়া পরিচয়ে সোহেল ও তার সঙ্গে আরো এক ব্যক্তি ওই রুমে প্রবেশ করেন। এর কিছুক্ষণ পর সাংবাদিক পরিচয়ে জাহাঙ্গীর আলম পাঁচ/ছয়জন লোক নিয়ে ওই রুমে প্রবেশ করেন। এ সময় জাহাঙ্গীর রূপার সঙ্গে আমীরের ছবি তোলেন। এক পর্যায়ে তারা তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেবেন এবং খুন-জখমের ভয় দেখিয়ে তার সঙ্গে থাকা ৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে লিখিত ও অলিখিত কয়েকটি স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেন এবং আরো ৮০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ১০ হাজার টাকা কমিয়ে ৭০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে তাকে ২০ মিনিটের মধ্যে টাকা আনিয়ে দিতে বিকাশ নম্বর দেন, অন্যথায় তাকে খুন-জখমের হুমকি দেন। মো. আমীর হোসেন এসএমএসের মাধ্যমে তার পরিচিত জাকির নামের একজনকে দুটি বিকাশ নম্বর পাঠান। পরে জাকির পুলিশের সহায়তা নিয়ে বিকেলে সাড়ে ৪টার দিকে ভিকটিমকে উদ্ধার করেন এবং পুলিশ অভিযুক্তদের আটক করেন। পুলিশ সুপার আরো জনান, অভিযানকালে আটককৃতদের কাছে থেকে আটটি মোবাইলফোন সেট, একটি লেন্স ক্যামেরা, সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনের কয়েকটি আইডি কার্ড, ১০টি বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইলফোন সিম কার্ড, তিনটি অলিখিত চেক, ১০টি লিখিত অলিখিত স্ট্যাম্প ও ছিনতাইকৃত ৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে জয়দেবপুর থানায় মামলা হয়েছে।

   

রাইজিংবিডি/গাজীপুর/২১ ডিসেম্বর ২০১৭/হাসমত আলী/সাইফুল