সারা বাংলা

উত্তরাঞ্চলে ৪ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর : শীতের সকালে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল রংপুর বিভাগের আট জেলা। শনিবার সকাল ৭টার দিকে এ ভূকম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৫। ঢাকা আবহাওয়া অফিসের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ মুমনুল ইসলাম জানান, রাজধানী ঢাকা থেকে ২৭২ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের আসাম প্রদেশের গোয়াহাটি জেলার গৌরীপুর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে মাটির ১০ কলোমিটার গভীরে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। রংপুরের উত্তর-পূর্ব দিকে ৮৭ কিলোমিটার দূরে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। বাংলাদেশের  রংপুর বিভাগ ও ভারত সীমান্তের কিছু স্থানেও ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ,নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলাসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় এ ভূকম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ক্ষক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে প্রচণ্ড শীতের সময় ভূমিকম্পের আতঙ্কে অনেকেই ঘর থেকে বের হয়ে উন্মুক্ত স্থানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। হাসপাতালগুলোতে রোগীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে তারা হুড়োহুড়ি করে বের হন। অনেকেই ভোরবেলা রাস্তায় এসে জড়ো হতে দেখা গেছে। আবহাওয়া অফিসের মতে, ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত রংপুরসহ সারা দেশে ভূমিকম্প হয়েছে দেড় শতাধিক। ভূমিকম্পের রেড জোনে রয়েছে উত্তরের রংপুরসহ সিলেট, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম। এ ছাড়াও বেশক’টি জেলাও ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আবহাওয়া অফিস ও ঐতিহাসিকদের সূত্রে জানা গেছে, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে সর্বশেষ বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছিল ১২০ বছর আগে ১৮৯৭ সালের ১২ জুন বিকেল ৫টায়। দিনটি ছিল রংপুরসহ আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মানুষের কাছে বেদনাদায়ক দিন। ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ৫ মিনিট। ভূমিকম্পের ফলে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল দেখা দেয়। আবার কোথাও কোথাও ৫ থেকে ৭ ফুট গর্তের সৃষ্টি হয়। গর্ত থেকে র্নিগত বালি পানি, জলাশয় ও নিম্নভূমির গভীরতা হ্রাস করে। হাজার হাজার একর চাষের জমি অযোগ্য হয়ে পড়ে। সে সময় বহু সরকারি-বেসকারি ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। সে ভূমিকম্পে বৃহত্তর রংপুরের অনেক নদী-নালার গভীরতা ও প্রশস্ততা কমে যায়। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরীর গিরাই নদী, উলিপুরের বামনি ও বুড়ি তিস্তা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সরাই ও মানাস নদী, গোবিন্দগঞ্জের নাহালিয়া ও আখিরা নদী এবং রংপুর শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ঘোষ খাল বর্তমানে শ্যামাসুন্দরী খাল হিসেবে পরিচিত প্রায় ভরাট হয়ে যায়। ঐতিহাসিকদের তথ্য মতে, সে সময় মানুষ মারা যায় সাড়ে ৪শর ওপর। এদিকে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন ফায়ার সাভির্সগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিস অফিসগুলোতে দুর্যোগ মোকাবিলায় সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় এবারে নগণ্য। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার সামর্থ্য কোনো ফায়ার স্টেশনের নেই। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলে প্রায় ১০ হাজার বহুতল ভবনে দুর্যোগ মোকাবিলার কোনো প্রকার প্রস্তুতি নেই। এসব ভবন নির্মাণে ফায়ার সার্ভিসের কোনো নীতিমালা মানা হয়নি। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এসব ভবন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভূমিকম্প বিশারদ মুমনুল ইসলামের মতে, ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ রিখটার স্কেলে ওঠলে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এখন থেকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সচেতনতা গড়ে তুলতে না পারলে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। রাইজিংবিডি/রংপুর/২০ জানুয়ারি ২০১৮/নজরুল মৃধা/সাইফুল