সারা বাংলা

ফুচকা বিক্রেতা থেকে চিত্রশিল্পী

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা : পেশায় ফুচকা বিক্রেতা। পেশার বাইরেও আরো একটি পরিচয় রয়েছে তার। তিনি একজন চিত্রশিল্পী। এই চিত্রশিল্পীর নাম আব্দুল আজিজ। দিন শেষে রাতে সময় কাটান কাঠ পেন্সিলে নানান ছবি এঁকে। কাঠ পেন্সিলে আঁকা অর্ধশতাধিক চমৎকার শিল্পকর্ম রয়েছে তার। ঠাকুরগাঁও শহরের সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পাশের একটি ছোট ফুচকার দোকান তার। এটাই তার জীবিকা নির্বাহ’র উপায়। এখানে শিক্ষার্থী, অভিভাবকের কাছে আজিজ ভাই নামে পরিচিত তিনি। এখানে ব্যবসার সাথে জড়িয়ে আছেন সেই ১৯৭৯ সাল থেকে। আব্দুল আজিজের স্বপ্ন ছিল তার আঁকা শিল্পকর্মগুলো প্রদর্শনীর।কিন্তু অর্থাভাবে ছবিগুলোর প্রদর্শনী করা সম্ভব হচ্ছিল না তার।

 

আব্দুল আজিজের সুপ্ত প্রতিভার কথা জানতে পারেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল। জানতে পারেন আজিজের ইচ্ছেটির কথাও।আজিজ জানিয়েছেন, ঠাকুরগাঁওয়ের বই মেলায় শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে দিয়ে তার স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘আজিজ এর প্রতিভা হচ্ছে একটি ছাই চাপা আগুন। এটা যে কোন সময় বের হয়ে আসত। আজিজ ভাইকে দেখে আমরা শিক্ষা নেবো যে, চেষ্টা থাকলে প্রতিভা বিকশিত হবেই।’ বই মেলায় তার আকাঁ চিত্র প্রদর্শনী দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে সকল বয়সের মানুষ। আজিজের অসাধারণ প্রতিভা দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন ফুচকা বিক্রেতার এমন প্রতিভায় অনেকেই অবাক। এর আগে ছোট পরিসরে তার ছবি নিয়ে একক চিত্র প্রদর্শনী হয়েছে। কিন্তু এবারই প্রথম এত বড় পরিসরে তার ছবির প্রদর্শনী হচ্ছে। আর এতে তিনি খুবই উচ্ছ্বসিত।

 

আলাপকালে চিত্রশিল্পী আজিজ বলেন, ‘আমি নাইট স্কুলে পড়ালেখা করেছি। দিনের বেলা কাজ করে রাতে পড়তে যেতাম। বাবা যুদ্ধে মারা যান। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। সংসার মূলত বড় ভাই চালাতেন।’ পরবর্তীতে ঠাকুরগাঁও রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ঢাকায় চলে যান। একটি ফাস্টফুডের দোকানে কাজ নেন ও রাতে পেন্সিল আর কাগজ নিয়ে ছবি এঁকে সময় কাটান। মন না টেকায় ঠাকুরগাঁওয়ে ফিরে যান। দোকান দেন ফুচকা-চটপটির। আজিজের ইচ্ছে এখন ঢাকায় তার শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর। তিনি বলেন, ‘এখন ঢাকায় একটি প্রদর্শনী করতে পারলে আমার সব ইচ্ছে ও স্বপ্ন পুরণ হবে।’ রাইজিংবিডি/ঠাকুরগাঁও/১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/তানভীর হাসান তানু/টিপু