সারা বাংলা

যেখানে আ.লীগের মনোনয়ন পেলে নিশ্চিত মেয়র

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : ঘোষিত হয়েছে কোটালীপাড়া পৌরসভার নির্বাচনী  তফসিল। আগামী ২৯ মার্চ এই পৌরসভার ভোট। ১ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা দেবার শেষ দিন। তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রায় হাফ ডজন প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে  শুরু করে দিয়েছে দৌঁড়ঝাঁপ। অন্যদিকে ভোটারদের মধ্যেও বিরাজ করছে সেই নির্বাচনী আমেজ। ১৯৯৭ সালে ঘাঘর ইউনিয়নের কিছু অংশ নিয়ে কোটালীপাড়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন এর আয়তন ছিল ২.০৬ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৯৯ সালে কোটালীপাড়া পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এটি তৃতীয় শ্রেণির হলেও এখন পৌরসভাটি ১ম শ্রেণির আওতাভুক্ত। আইনি জটিলতার কারণে দীর্ঘ ৭ বছরের মাথায় ৪র্থবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা হওয়ার কারণে এখানে যিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন তিনি নিশ্চিত মেয়র নির্বাচিত হবেন। তাই এখানে মেয়র প্রার্থী হিসাবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা সবাই আওয়ামী ঘরানার। অন্য কোন দলের প্রার্থী বা স্বতন্ত্র কোন প্রার্থীর নামও শোনা যাচ্ছে না। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা হলেন- বর্তমান পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম অহিদুল ইসলাম, সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ কামাল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক হাওলাদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা কমল সেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নারায়ন চন্দ্র দাম, উপজেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী রাফেজা বেগম ও অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন সরদার। এ সকল প্রার্থীদের প্রত্যেকেরই ধারণা, আওয়ামী লীগ থেকে তিনিই মনোনয়ন পাবেন। সম্ভাব্য এ সকল প্রার্থীর ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে গোটা পৌরসভা। প্রতিদিনই প্রার্থীদের সমর্থনে চলছে মিছিল, মিটিং, শোভাযাত্রা। তবে এ সকল প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে না গিয়ে মনোনয়ন পেতে ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন। কিন্তু, এখানের মনোনয়নের বিষয়টি সম্পূর্ন নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর। এই পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ কামাল হোসেন নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৫ সালের নির্বাচনে এইচ এম অহিদুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১১ সালের নির্বাচনেও দ্বিতীয় বারের মতো এইচ এম অহিদুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হন। পরপর দু’বার নির্বাচিত হয়ে মেয়র এইচ এম অহিদুল ইসলাম পৌরসভায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন বলে দাবি তার। অপরদিকে প্রথম পৌর মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে শেখ কামাল হোসেন পৌরসভার অবকাঠামোগত নানা উন্নয়ন করেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তৃতীয় দফা নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ঘাঘর ইউনিয়ন পরিষদ পৌরসভায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এর বর্তমান আয়তন হয় ১০.৯৭ বর্গ কিলোমিটার । লোক সংখ্যা ২০ হাজার। মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৩ শত ১৫ জন। মেয়র এইচ এম অহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পৌরসভাকে সড়ক বাতি দ্বারা আলোকিত ও নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ একটি আধুনিক পৌরসভায় রুপান্তর করেছি। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলক স্থাপন, আধুনিক নিউ কিচেন মার্কেট ও সুপার মার্কেট, পৌর বাস টার্মিনাল, পৌরসভার প্রতিটি বাড়ি বাড়ি পাকা ও আধা পাকা রাস্তা, আধুনিক ঈদগাহ, মসজিদ, মন্দির, শ্মশান ঘাট, কবরস্থান, ড্রেন, গণশৌচাগার, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডাস্টবিন ও ব্রিজ নির্মাণ করেছি।আশাকরি আমার কাজের মূল্যায়ন হিসেবে আগামী নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেবেন।’ সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি পৌরসভার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে পৌরসভার অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন করেছি।আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমি মনে করি জননেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন।’ অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন সরদার জানান, তিনি ১৯৭৮ সাল থেকে এলাকায় নানা সামাজিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন।তিনি ১৯৮৭ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর পক্ষে কাজ করায় এবং এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কাজী মন্টুর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তার বাড়ি ঘর সে সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি সব সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন।তার আত্মবিশ্বাস নেত্রী তাকেই কোটালীপাড়া পৌর সভায় মেয়র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেবেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে ঘাঘর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক হাওলাদারও আশাবাদি। তিনি বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় আমি ঘাঘর ইউনিয়নের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি।এই কাজের মূল্যায়ন হিসেবে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে এটা আমার বিশ্বাস।’ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নারায়ন চন্দ্র দাম জানান, ছাত্র জীবনে তিনি ছাত্রলীগ করেছেন। দীর্ঘদিন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক হিসেবে আছেন। এ ছাড়াও তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘আমি আমার নিজস্ব অর্থায়নে পৌরসভায় অনেক সেবা মূলক কাজ করেছি। আমি আশাবাদি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক বলেন, ‘নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি নির্বাচন করবো। আমাকে মনোনয়ন না দিলে নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিবেন আমি তার নির্বাচন করবো।’ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী রাফেজা বেগম বলেন, ‘বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়ণ নিয়ে কাজ করছে। সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিবেন। আমি নির্বাচিত হলে নারী উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করবো।’ আগামী ২৯ মার্চ কোটালীপাড়া পৌর নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে জানান গোপালগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার মুন্সী ওহিদুজ্জামান । রাইজিংবিডি/গোপালগঞ্জ/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/বাদল সাহা/টিপু