সারা বাংলা

এক কলেজে দুই অধ্যক্ষ!

জামালপুর সংবাদদাতা : জামালপুরের নান্দিনা শেখ আনোয়ার হোসাইন কলেজে এখন দুজন অধ্যক্ষ। আর তা নিয়ে স্থানীয়ভাবে নানা রকমের আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আশরাফ হোসেন তরফদারের অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও পর পর তিন বছর সময় বাড়িয়ে অতিরিক্ত পাঁচ বছর এই পদে বহাল থাকেন। চাকরির বয়স ৬৫ অতিক্রম করায় ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে অবসর যেতে বাধ্য হন তিনি। ফলে অধ্যক্ষের পদটি শূন্য হওয়ায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দেলোয়ার হোসেন নামের একজনকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজে নতুন অধ্যক্ষ থাকার পরও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আশরাফ হোসেন তরফদার নতুন অধ্যক্ষকে দায়িত্ব না দিয়ে এখনও তিনি বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কলেজের বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী ৯ মার্চ এই কলেজে উপাধ্যক্ষ নিয়োগের পর পর্যায়ক্রমে বাংলা বিভাগে ৩জন, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে ২জন, মার্কেটিং বিভাগে ২জন, ব্যবস্থাপনা বিভাগে ২জন, প্রাণি বিজ্ঞান বিভাগে ২জন ও রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে ২জন শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করবে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কথা রটেছে, এই নিয়োগের কারণেই কলেজের অধ্যক্ষ জটিলতা। এই নিয়ে কলেজ শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও বিভিন্ন মহলে নানা গুঞ্জন চলছে। এসব বিষয়ে সরেজমিনে জানতে শনিবার সকালে কয়েকজন সংবাদ কর্মী কলেজে যান। এসময় কথা হয় ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্র ও কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ‘কিসের জন্য এসেছেন, শিক্ষক নিয়োগে আপনাদের প্রার্থী আছে? আশরাফ স্যারের মেয়াদ শেষ হলেও তিনি জুন মাস পর্যন্ত থাকবেন। নতুন প্রিন্সিপালও আছে। নিয়োগের ব্যাপারে আশরাফ স্যারের সাথে কথা বলেন, তিনিই সব।’ কলেজের প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে দেখা যায়, অধ্যক্ষের অফিস রুমের দরজায় আশরাফ হোসেন নামে অধ্যক্ষের নেমপ্লেট। রুমের ভিতরে গিয়ে দেখা যায় অধ্যক্ষের চেয়ারে বসে আছেন আশরাফ হোসেন তরফদার। অধ্যক্ষের নামের বোর্ডেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নাম রয়েছে আশরাফ হোসেন তরফদার। যোগদানকৃত অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেনের নাম নেমপ্লেট ও বোর্ডে নাম নেই। অধ্যক্ষের টেবিলের সাইডে বসে আছেন তিনি। অধ্যক্ষের সামনে কথা হয় তার সাথে তবে তার কোন অভিযোগ-অনুযোগ নেই। অধ্যক্ষের রুমে কথা বলার সময় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও কলেজের কেরানী দেলোয়ার হোসেন মানিক অধ্যক্ষকে প্রশ্ন করতে দেখে তিনি সংবাদ কর্মীদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যান। বলেন, ‘অন্যসব কলেজের চেয়ে আমাদের কলেজের নিয়ম একটু আলাদা। আমরা আশরাফ স্যারকে কলেজ পরিচালনা কমিটিতে রেজুলেশন করে রেখেছি। আমরা কাকে চেয়ারে রাখবো না রাখবো সেটা আমরা বুঝবো। আপনাদের কি ?’ নতুন অধ্যক্ষকে দায়িত্ব না দেওয়া এবং কলেজের নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে যে গুঞ্জন রয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বয়স ৬৫ বছর পেরিয়ে গেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী অধ্যক্ষ পদে থাকার সুযোগ নেই। কলেজ পরিচালনা কমিটি নতুন অধ্যক্ষকে সহযোগীতা করার জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে।’ কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী আলহাজ রেজাউল করিম হীরা এমপি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বড় কলেজের অনেক বিষয়াদি থাকে, নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগের পরও আশরাফ হোসেন তরফদারকে কমিটি থেকে দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ বিষয়টি আমার জানা নেই, ফাইলপত্র দেখে বলতে পারবো।’ রাইজিংবিডি/জামালপুর/৪ মার্চ ২০১৮/সেলিম আব্বাস/টিপু