সারা বাংলা

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নদীতে অবাধে মাছ শিকার

ভোলা সংবাদদাতা : ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরছে স্থানীয় জেলেরা।  এতে করে জাটকা সংরক্ষণ ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে টানা দুই মাসের অভিযান ভেস্তে যেতে বসেছে। তবে জেলেরা জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার ১৭ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো তারা সরকারি পুনর্বাসনের চাল পাননি। পেটের তাগিদে নদীতে নামতে বাধ্য হচ্ছেন। জাটকা সংরক্ষণ ও অন্য প্রজাতির মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত টানা দুই মাস ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে তেঁতুলিয়া নদীর ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চররুস্তম পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার ও মেঘনা নদীর ভোলার ইলিশা থেকে মনপুরার চরপিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটারে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে সরকার। এ সময় জাটকা ইলিশের বৃদ্ধি এবং পোয়া, বাটা, তপসিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ জোয়ারে ডিম ছাড়ার জন্য অভয়াশ্রমে চলে আসে। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর অভয়াশ্রমে মাছ শিকার করছে জেলেরা। গত বছর মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি কোস্টগার্ড ও প্রশাসনের তৎপরতায় সফলতা মিললেও এ বছর কতটা সফল হওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে চোখে পড়ার মতো তেমন কঠোরতা দেখা যায়নি। প্রশাসনের অভিযান চলছে একেবারে ঢিমেতালে। নদীর তীরবর্তী জেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর দুই মাসের অভিযানে মাছ ধরার অপরাধে অনেক জেলের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, এবার তেমন অভিযান দেখা যাচ্ছে না। ইলিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসান বলেন, মাছ ধরার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা চলছে, নদীর দিকে তাকালে তা বোঝার উপায় নেই। কোনো জেলেই মাছ ধরা থেকে বিরত নেই। জাল, ট্রলার নিয়ে অধিকাংশ জেলেকে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামন বলেন, গত বছর সদর উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করে প্রথম সপ্তাহে ৮৪ জন জেলেকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অথচ এ বছর অভিযান পরিচালনা করে এ যাবত ১১৯ জন জেলেকে আটক করলেও কারাদণ্ড না দেওয়ায় তারা কিছু টাকা জরিমানা দিয়ে আবার নদীতে মাছ ধরতে নেমে গেছে। কারাদণ্ড না হওয়ায় জেলেদের মাছ ধরা থেকে নিবৃত করা যাচ্ছে না। প্রত্যেক উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার ১৭ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো জেলেরা পুনর্বাসনের চাল পাননি। তাই জীবিকার সন্ধানে বাধ্য হয়ে জেলেরা নদীতে নামতে বাধ্য হচ্ছে। যারা নিষেধাজ্ঞার ভয়ে মাছ ধরছে না, তাদের পরিবারের সদস্যদের অর্ধাহারে-অনাহারে থাকতে হচ্ছে।  ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি এলাকার মো. বুট্ট মাঝি বলেন, নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, কিন্তু গরিব অসহায় জেলেরা কীভাবে চলবে, সেই দিকে কারো খেয়াল নেই। তবে ১২ ফেব্রয়ারির মধ্যে জেলার সাত উপজেলায় জেলেদের পুনর্বাসনের চাল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, তাদের কাছে চাল আসামাত্র তালিকা অনুযায়ী জেলেদের চার মাস হিসেবে ৮ হাজার ৩৪৪ মেট্রিক চাল সাত উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তাদের বরাবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত জেলেরা কেন চাল পায়নি, সেই সম্পর্কে তার কিছু জানা নেই। এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৃধা মো. মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ আগে প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বরাবর চাল পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কেন চাল বিতরণ করেননি, তা তিনি বলতে পারছেন না। সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, তারা কয়েক দিন রাজনৈতিক কারণে কিছুটা ব্যস্ত থাকায় জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করার সময় করতে পারেননি। জেলার নিবন্ধনকৃত ১ লাখ ৩২ হাজার জেলের মধ্যে ৫২ হাজার জেলের নামে চাল বরাদ্দ এসেছে জানিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, তারা তালিকা অনুযায়ী চাহিদা পাঠিয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে পুরাতন তালিকা অনুযায়ী ৫২ হাজার জেলের জন্য চাল পাঠিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা অপরিবর্তিত রয়েছে। রাইজিংবিডি/ভোলা/১৮ মার্চ ২০১৮/ফয়সল বিন ইসলাম নয়ন/বকুল