সারা বাংলা

বীরাঙ্গনা কাকন বিবির রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট : হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেওয়া বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা নুরজাহান কাকন বিবিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের লক্ষীপুর স্কুলমাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পুলিশের একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার বরকত উল্যাহ খান এবং দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে উপজেলার জিরারগাঁও কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড জেলা ইউনিট, উপজেলা ইউনিটসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা কাকন বিবির মরদেহে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জানাজার পূর্বে দেওয়া বক্তব্যে জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, স্বাধীনতার মাসে আমরা একজন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হারিয়েছি। তার খেতাবটি এখনও গেজেট আকারে হয়নি। কিন্তু আমরা সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তার অবস্থা আশংকাজনক শোনার পর আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি দ্রুত তার নাম গেজেট আকারে করা হবে। এর আগে বুধবার রাত সোয়া ১১টার দিকে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. দেবব্রত রায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর। তিনি শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত সোমবার এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমুল ইসলামের অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন এবং আইসিইউতে ডা. সব্যসাচী রায়ের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার ফুসফুসের একাংশ কাজ করছিল না বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। এর আগে গত বছর জুলাইয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর কয়েকদিন হাসপাতালে ছিলেন শতবর্ষী কাকন বিবি। কাকন বিবির জন্ম ১৯১৫ সালে। অবিভক্ত ভারতের মেঘালয়ের নেত্রাই হাসিয়া পল্লীতে তিনি জন্মেছিলেন। কাকন বিবির স্বামী সাঈদ আলীও প্রয়াত। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারবাজার থানার জিরারগাঁও গ্রামে। ১৯৭১ সালে তিন দিন বয়সী মেয়ে সখিনাকে রেখে যুদ্ধে চলে যান কাকন বিবি। জুনে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন তিনি। বাঙ্কারে আটকে দিনের পর দিন তাকে নির্যাতন করে পাকিস্তানি সেনারা। ছাড়া পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর কাছে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেন। রহমত আলীর দলের সদস্য হয়ে সশস্ত্র যুদ্ধ করেন তিনি। একই সঙ্গে চালিয়ে যান গুপ্তচরের কাজ। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে টেংরাটিলার সম্মুখযুদ্ধে কয়েকটি গুলি তার শরীরে বিদ্ধ হয়। ঊরুতে কয়েকটি গুলির দাগ এখনো আছে। তিনি নয়টি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৬ সালে তাকে বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার। রাইজিংবিডি/সিলেট/২২ মার্চ ২০১৮/নোমান/মুশফিক