সারা বাংলা

সৌদিতে নিহত রবিনের বাড়িতে শোকের মাতম

নরসিংদী সংবাদদাতা : পয়লা বৈশাখে যখন চারদিকে মাতামাতি, নরসিংদীর আবুল হোসেন পরিবারে তখন কান্নার রোল। কারণ, মাত্র একদিন আগেই তারা হারিয়ে ফেলেছে প্রিয় কর্মক্ষম সন্তানটিকে। গত ১৩ এপ্রিল সৌদি আরবের রিয়াদে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত ৬ বাঙালির একজন নরসিংদীর রবিন। মাত্র তিন মাস আগে এনজিওসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা ঋণ করে রিয়াদে পাড়ি জমিয়েছিলেন রবিন। যাওয়ার পর মাত্র ১৫ দিন আগে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। দুই দিন আগে সর্বশেষ মা রিনা বেগমের সঙ্গে কথা বলেন রবিন। এ সময় সেখানে কাজ পাওয়ার বিলম্বে  থাকা খাওয়ার কষ্টের কথা জানিয়েছিলেন মাকে। কষ্টের পরও কাজ পাওয়ায় খুশি হয়েছিলেন তিনি। বেতন পাওয়া শুরু করে ঋণের ৬ লাখ টাকা পরিশোধের পর সংসারের অভাব দূর করবেন বলে আশা দিয়েছিলেন পরিবারকে। দু’দিন পরই রিয়াদে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে রবিনের মৃত্যুর খবর পায় পরিবার। এরপর থেকে বিলাপ করতে করতে শোকে স্তব্ধ হয়ে আছেন পরিবারের সদস্যরা। বাবা-মা, তিন ভাই ও এক বোনকে নিয়ে রবিনের অভাবগ্রস্ত পরিবার। রবিন সবার বড়। কোন রকমে সংসার চলছিল তাদের। ভাগ্য পরির্বতনে গিয়ে নিজেই এখন পরিবারের ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। নরসিংদী সদর উপজেলার কাঠালিয়ায় রবিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হৃদয় বিদারক দৃশ্য। বারান্দার মেঝেতে গড়াগড়ি করে হাউমাউ করে বিলাপ করছে তার মা। প্রতিবেশিরা বৃথা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পুত্র শোকে পাগল প্রায় নিহতের বাবা আবুল হোসেন। একদিকে ছেলে হারানোর বেদনা অন্যদিকে ঋণের বোঝা। শোকের মাঝেও নতুন এক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সংসারের এই অভিভাবক। কাঁদতে কাঁদতে বলেও ফেললেন,  ‘ছেলেটা আমাদের সুখি করতে গিয়ে আরো দু:খী করে দিলো। অভাবের সংসারে ঋণের বোঝা কিভাবে বইবো, ছেলের শোক কিভাবে সইবো!’ শোকে বিহব্বল বাবা আবুল হোসেনের দাবি, ‘প্রিয় সন্তানের মুখখানা যেন একবার দেখতে পাই। তাই সরকার যত দ্রুত সময়ের মধ্যে লাশ দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।’ রবিনের দাদা জাহাঙ্গীর হোসেন দ্রুত রবিনের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। অভাবগ্রস্ত পরিবারটির প্রতিও সদয় হওয়ার অনুরোধ জানান। রাইজিংবিডি/নরসিংদী/১৬ এপ্রিল ২০১৮/গাজী হানিফ মাহমুদ/টিপু