সারা বাংলা

কুষ্টিয়া সীমান্তের ৪৬ কিলোমিটারই মাদকের

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা: কুষ্টিয়া জেলার ৪৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভারতীয় সীমান্ত। ভারত থেকে ফেন্সিডিল মদ গাজা এসব এই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ সীমানায় প্রবেশ করে। সাম্প্রতিক সময়ে ইয়াবাও এই রুট দিয়ে আসছে। বলা যায়, কুষ্টিয়ার ভারত সীমান্তের ৪৬ কিলোমিটারই মাদক ব্যবসায়ীদের আপনভূবণ। কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলার নাম দৌলতপুর। জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা। মাদকের বড় বড় ব্যবসায়ীরা রয়েছেন এই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ায় এদের তৎপরতা এখন কম। এখানের সীমান্ত দিয়ে মাদক হরহামেশাই শহরের দিকে চলে আসে। দেশের গোয়েন্দা সংস্থাও এখানকার মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে অবহিত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন প্রতিবেদনে এখানকার অনেক মাদক ব্যবসায়ী ও আশ্রয় প্রশ্রয়কারীদের নামের তালিকা রয়েছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি পুলিশ-বিজিবি কর্মকর্তাদের নামের তালিকাতেও উঠে এসেছে তাদের নাম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সীমান্তে মাদকের অন্যতম রুট হল জামালপুর। এছাড়া এই সীমান্তের চিলমারী, চর চিলমারী, বাংলাবাজার, ফিলিপনগরের আবেদের ঘাট, মহিষাকুন্ডি, ভাগজোত মোড়, প্রাগপুর, বিলগাথুয়া, জামালপুর ও ঠোটারপাড়া রুট দিয়েই মাদক বেশি আসে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় জামালপুর এলাকার বেশ কয়েকজনই ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। এই গ্রামে বাইরের কোন মানুষ সহজেই প্রবেশ করতে পারে না। কেউ যেতে চাইলে তার পেছনে মাদক ব্যবসায়ীদের সোর্স লেগে যায়। তার গতিবিধি নজরে রাখে। কোন নতুন মুখ দেখলেই মাদক ব্যবসায়ীরা সর্তক হয়ে যান। এই গ্রামে প্রায় তিন বছর আগে মাদক ব্যবসায়ী, বিজিবি ও পুলিশের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছিল। তারপরও কেউ ধরা পড়েনি। সীমান্তবর্তী এলাকায় গ্রামের বাঁশবাগানের মধ্যে মাদক কেনাবেচা হয়। মাদক ব্যবসায়ীরা কেনাবেচা করে সীমান্তে শুন্যরেখায় গিয়ে বসে থাকে। সেখানে কেউ যেতে পারে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় জামালপুর এলাকায় অন্যতম মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে লাবু, হাবু, হ্যাবল, ছেনু মন্ডল, মতিন, হাবিল, লালু, মদন। পার্শ্ববর্তী মুন্সিগঞ্জ গ্রামের মোকাদ্দেস আলী। এদের মধ্যে লাবু, হাবু স্থানীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া এক পরিবারের নারী সদস্যসহ বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত। এদের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। ওই গ্রামের অন্তত ২০ মাদক ব্যবসায়ী রয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় জেলার বিভিন্ন এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম হল- চাউলের বর্ডার এলাকার নিজাম উদ্দিন, আসাদুল মালিথা হোববা,  কুষ্টিয়া রাজারহাট খুকা (গড ফাদার), মুন্না ওরফে ফুটু, লিটু, পিয়াস, কাজল, রাসেল, শ্যামল হোসেন, আলমগীর হোসেন, শাহিনুর রহমান, আমিরুল ইসলাম, রাসেল আহমেদ, রাজারহাট আব্দুল আজিজ সড়কের খসরু, রাজারহাট দেশওয়ালীপাড়ার লাল্টু মিয়া, রাজারহাট বিবি রোডের বশির আহম্মেদ, আসাদুল ইসলাম, দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী তালতলা বিজি বিশ্বাস, পাকুড়িয়া হাবল, খলিসাকুন্ডি আলিমুর রহমান, কামাল, খলিসাকুন্ডি হাটপাড়া মইনদ্দিন, মিলন, পাকুড়িয়া ভাঙ্গাপাড়া ইমদাদুল, জামালপুর লালু, মদন, রবি, দাড়েরপাড়া ইয়াকুব হোসেন, আয়নাল মন্ডল, বৈরাগীর চর মনতাজ মন্ডল, ফিরোজ, মাঝদিয়াড় এনামুল হক, কল্যানপুর হোগলবাড়ীয়ার উজ্জল হোসেন, তারাগুনিয়ার শহীদ ইসলাম, পাকুড়িয়ার হাবু, লাবু, শাহ আলম, চরদিয়াড় এলাকার হাসানুর মেম্বর,  বিলগাথুয়া গ্রামের ফরিং, গাছেরদিয়াড়ের সম্রাট, ভাঙ্গাপাড়ার মিঠু মন্ডল, বাগুয়ান এলাকার মুস্তাক, আমদহ মধ্যপাড়ার মাসুম বিল্লাহ, ইসলামপুরের জাবেদ আলী, উজ্জল, চরদামুকদিয়া গ্রামের আলাউদ্দিন, রেফায়েতপুরের মন্টু,  হোগলবাড়ীয়ার রুবেল লস্কর, আমিরুল ইসলাম, পলাশ, রুবেল হোসেন, জিনার, মুকুল মোল্লা, পিন্টু, কল্যাণপুর জদ্দারপাড়ার রতন আলী, কল্যাণপুর মন্ডলপাড়ার মাসুদ রানা, ফিলিপনগরের তুহিন, বাবু, সাজুল, চরসাদীপুর ফিলিপনগর শরীফ কায়ি, জামালপুর প্রাগপুরের কুদু মন্ডল, জামালপুর মধ্যপাড়ার মতিন, হাবিল, প্রাগপুরের সাজিদ, মামুন মিয়া, হাসান,  ভাগজোত কাস্টমমোড় সায়েম উদ্দিন, পশ্চিম বাহিরচর আবু হাসান, রফিক, ইনতাদুল, আনারুল, ইসলামপুর ফিলিপনগর আকরাম  হোসেন মেম্বর, মরিচা ইউনিয়নের উজ্জল, কারীতলা মরিচা লিয়াকত মেম্বর, হোগলবাড়ী কল্যাণপুর মকলেছ, খাইরুল,  হোগলবাড়ী কল্যাণপুর বটতলা ছপের হোসেন,  হোগলবাড়ীয়া  সোনাইকুন্ডি বাজারের একরাম আলী, পাকুড়িয়া রিপন আলী, মহিষকুন্ডি মাঠপাড়া আজমত, গদা, আল্লারদরগা জ্যোতি,  টলটলিপাড়া মুকুল হোসেন, কুষ্টিয়া শহরের পূর্ব মজমপুরের সুজন, কুষ্টিয়া ছেউরিয়ার শামীম আহম্মদ, দুলালী, সালেহা বেগম, মানিক মিয়া, আব্দুর রহিম, ছেউরিয়া মন্ডলপাড়ার নাজিরুল ইসলাম, নাজমুল ইসলাম, কালু মিয়া, পারভেজ হোসেন, আব্দুস সালাম, মিরাজ হোসেন, রিপন হোসেন, মহিদুল ইসলাম, ছেউরিয়া ফকিরপাড়া রাজিবা রাব্বু, ছেউরিয়া ভাটাপাড়া আসাদুল, ছেউরিয়া লালন মাজার ময়েজ উদ্দিন, ছেউরিয়া হোসেনাবাদ সোহরাব হোসেন, পশ্চিম ছেউরিয়া মনসুর আলী,  কুমারখালী উলিপাড়া বিল্লু হোসেন, শেরকান্দি রফিকুল, কুমারখালী থানা দওপাড়া অশিত কুন্ডু,  মিরপুর উপজেলা বড়বাড়িয়া পূর্বপাড়া হাসেম,সদরপুর বারিক, মিরপুর আর্দশপাড়া আলম বিশ্বাস, সুলতানপুরের রিগান, হিরক জোয়ার্দ্দার, গোবিন্দগুনিয়ার মিন্টু,  কুষ্টিয়া মিললাইন এলাকার হাবিব শেখ, লাহিনীপাড়ার মোয়াজ্জেম হোসেন, আড়ুয়াপাড়ার আজিজুল বারী, আশরাফুল ইসলাম, আড়ুয়াপাড়া মীর মোশারফ হোসেন সড়কের রশিদ শেখ, কামরুল ইসলাম, রাজু শেখ, ওহিদুল শেখ, আড়ুয়াপাড়া মহিদ সাবদুল লেনের অসিত কুন্ডু, বাহাদুর আলী লেনের শ্যামল, কালিশংকরপুর এলাকার তানভীর তৌহিদ, থানাপাড়ার ছানোয়ার হোসেন, কুঠিপাড়ার সবুজ হোসেন, পশ্চিম মজমপুরের ইয়াদুল ইসলাম, উদিবাড়ীর পিপলু, খোকসার বিলজানি এলাকার গালিম, কমলাপুরের রাজু, গোপগ্রামের রাজু, ভেড়ামারার মির্জাপুরের রুস্তম মন্ডল, ফকিরাবাদের আসাদুজ্জামান, সাতবাড়িয়ার আব্দুল মজিদ অন্যতম। মাদকের স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে, চাউলের বর্ডার, রাজারহাট, রাজার হাট মেইন রোড, চৌড়হাস মোড়, লালন শাহ মাজার, মন্ডলপাড়া, ছেউড়িয়া, ফকিরপাড়া, ভাটাপাড়া, আবদুল আজিজ সড়ক, বিবিরোড, লাইহনী বটতলা, দত্তপাড়া মোড়, আড়ুয়াপাড়া প্রাইমারি স্কুল, আড়ুয়াপাড়া মেইনরোড, কোর্টস্টেশন, বড়বাজার রেলগেট, বাসষ্ট্যান্ড, টার্মিনাল, নফরশাহ মাজার, দেশওয়ালীপাড়া, পোড়াদহ রেলষ্টেশন, ভেড়ামারা স্টেশন, দৌলতপুর বাসস্ট্যান্ড, খলিশাকুন্ডি দরগাপাড়া, খলিশাকুন্ডি গোরস্থান এলাকা, তারাগুনিয়া বাজার, বাহিরচর, আল্লারদর্গা বাজার, কালিশংকরপুর। এছাড়া মোটরসাইকেলে মোবাইল কলের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয় মাদক। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘কুষ্টিয়ার মাদকের স্পটগুলোতে পুলিশের ব্যাপক নজর রাখা হয়েছে। এখন মাদক কেনাবেচা নাই বললেই চলে। যেটুকু হচ্ছে সেটা মোবাইল ফোনে। সেটাও নেহায়েত দুই একটা ফেন্সিডিল বোতল। মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের ধরতে পুলিশ রাতদিন সমানে কাজ করছে। কেউ আর মাথা খাড়া করে দাঁড়াতে পারবে না।’ রাইজিংবিডি/কুষ্টিয়া/৪ জুন ২০১৮/কাঞ্চন কুমার/টিপু