সারা বাংলা

শরণার্থী জীবন থেকে মুক্তি চায় রোহিঙ্গারা

সুজাউদ্দিন রুবেল, কুতুপালং ক্যাম্প : ‘বাংলাদেশে এসেছি ইচ্ছাকৃতভাবে না। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন, জুলুম, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, বাচ্চাদের কেটে ফেলা ইত্যাদি সহ্য করতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছি বাংলাদেশে। কেউ নিজ দেশ, ভিটে-মাটি ফেলে আসে না, আসতে বাধ্য করা হয়েছে। এখন এই শরণার্থী জীবন থেকে মুক্তি চাই। আমাদেরকে অধিকার, সম্মান ও নাগরিকত্ব দিয়ে দ্রুত স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।’ কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিক মোহাম্মদ আলী (৫৫) এভাবে বিশ্ববাসীর কাছে অনুরোধ করছিলেন। শুধু উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে নয়, এখন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ২০টি ব্লকে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের একটি দাবি, শরণার্থী জীবন থেকে মুক্তি এবং অধিকার, সম্মান ও নাগরিকত্ব নিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া। উখিয়া-টেকনাফের বড় একটি অংশজুড়ে এখন ঠাসাঠাসি জীবনযাত্রা। যেখানে গাদাগাদি করে থাকছে অন্তত ১১ লাখ মানুষ। নতুন করে রোহিঙ্গা আসার আগে যারা ছিল তাদের ধরলে বাংলাদেশ ভিটেমাটি হারা রোহিঙ্গাদের বোঝা বহন করছে ২৭ বছর ধরে। তাতে দিনে দিনে বেড়েছে নানামুখী সংকট। এর মধ্যে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী মর্যাদা দেওয়ার দাবি থাকলেও তারও সুরাহা হয়নি। তবে, আলোচনা-উদ্যোগ যাই থাক, নিজ দেশে ফিরতে মরিয়া এসব রোহিঙ্গা। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নুরুল আলম (৩৫) বলেন, ‘আমাদের শরণার্থী জীবন ভালো লাগে না। আমরা দ্রুত নিজ দেশে ফিরতে চাই, ভালোভাবে বাঁচাতে চাই।’ রোহিঙ্গা নাগরিক রিয়াদ, জসিম ও শামসুদ্দিন বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কারণে আমাদের শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে দিনযাপন করতে হচ্ছে। এভাবে থাকতে চাই না। অধিকার নিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে বসবাস করতে চাই।’  

আমির ফয়সাল (৪০) নামের আরেক রোহিঙ্গা বলেন, ‘এত বছর ধরে শরণার্থী জীবন যাপন করছি। তার একমাত্র কারণ অধিকার, সম্মান ও নাগরিকত্ব নিয়ে নিজ দেশে ফেরার জন্য। বিশ্ববাসী মিয়ানমারকে দ্রুত চাপ দিক যাতে মিয়ানমার আমাদেরকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।’ রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের কাছে এখন এক ধরনের বোঝা। এরা সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশ, অপরাধসহ নানা সমস্যার কারণ। তাই বিশ্ব শরাণার্থী দিবসে এদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি স্থানীয়দের। উখিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে দ্রুত ফেরত পাঠিয়ে উখিয়া-টেকনাফে স্থানীয় জনগণকে বাঁচানোর দাবি জানাচ্ছি।’ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহামুদুল হক চৌধুরী জানান, মিয়ানমারের ইচ্ছার অভাবের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দেরি হচ্ছে। এর জন্য বিশ্ববাসীকে এক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। শরাণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের যাতে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়, সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথভাবে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত বেশ কিছু কাজ এগিয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ইউএনএইচসিআরের সাথে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চুক্তিও করেছে। ফলে আশা করছি, দ্রুত সময়ে মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। সর্বপ্রথম ১৯৭৮ সালে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। যার মধ্যে ২০০৫ সালে সর্বশেষ প্রত্যাবাসন হলেও তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দফায় দফায় নতুন রোহিঙ্গা আসা অব্যাহত রয়েছে। রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/২০ জুন ২০১৮/সুজাউদ্দিন রুবেল/সাইফুল