সারা বাংলা

জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী জাহাঙ্গীর-হাসান সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর : আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আজ রাত ১২টার পর থেকে শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রচারণা। প্রচারণার শেষ দিন রোরবার এ নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার নির্বাচনে জয়ে ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। রোববার বেলা ১১টার দিকে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার এবং বিকেল ৩টার দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রোববার দুপুর ৩টার দিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম সিটি করপোরেশনের হারিকেন ফ্যাক্টরি এলাকা তার নিজ বাসার আঙ্গিনায় সংবাদ সম্মেলনে করেন। সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোটের মালিক জনগণ। আমি সিটির ৪২৫ সেন্টারের প্রত্যেকটি ভোটারের কাছে কম-বেশি গিয়েছি। মানুষের ভালবাস দেখেছি। আজকে লাখ লাখ মানুষ আমাকে, নৌকাকে ভোট দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে। আমার আশা নগরবাসী আমাকে এবং নৌকাকে ভোট দেবে। জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, গাজীপুরের এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা বিএনপির কারো বিরুদ্ধে মামলা, হামলা, কোনো ধরনের জিডি বা তাদের নির্বাচনী প্রচারকাজ ব্যাহত করিনি। বরং আমি নিজেও বিএনপি প্রার্থীর বাসায় গিয়েছি, মাঝে-মধ্যেই ফোন দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলছি, কোনো সমস্যা অসুবিধা হচ্ছে কিনা খোঁজ-খবর নিয়েছি? বয়সের কারণে হোক, অসুস্থতার কারণে হোক তিনি সবার কাছে যেতে পারছেন না। প্রতিপক্ষ নয় বিরোধী দল হিসেবে তাকে সহযোগিতা করার জন্য চেষ্টা করেছি। তারপরও তিনি প্রতিদিনই আমাকে, নৌকাকে, আওয়ামী লীগকে, বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এসব কাজ করছেন। আজকেও সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, আমরা নাকি তাদের পোলিং এজেন্টদের বাধাগ্রস্ত করছি। আমি বলতে পারি, সিটি করপোরেশনের ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রের জন্য তাদের কোনো এজেন্টকে আমরা চিনিই না। আমার বাধা দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। আমরা তাদের সব কাজে সহযোগিতা করেছি। তিনি বলেন, পাঁচ বছর অনেক সময়। গতবার বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হয়ে প্রথম দুবছর সিটি করপোরেশন পরিচালনা করেছেন। কোনো কাজে হাত দেন নাই। মাঝখানে সিটি করপোরেশনের দ্বন্দ্বের কারণে উনাদের জেল হয়েছে। তার পরেও এক বছর ধরে তারা এখানে সিটি করপোরেশন পরিচালনা করছেন। পার্টির দ্বন্দ্বের কারণে এবার মান্নান সাহেব মনোনয়ন পাননি। এটা তাদের ব্যাপার। আমরা বলতে চাই, আমাদের ব্যাপারে কেন তারা কটূক্তি করছে, বাজে কথা বলছে? তিনি আরো বলেন, আমি এ শহরটাকে গড়তে চাই। এই শহরের মানুষকে নিয়ে একসাথে থাকতে চাই। প্রতিদিন যানজট হচ্ছে। ডেনেজ ব্যবস্থা নেই, ময়লা-আবর্জনার পানি বাসা-বাড়িতে যাচ্ছে। পরিকল্পিত স্কুল-কলেজ নেই। আমাকে সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব দেন আমি দলমত নির্বিশেষে কাজটি করতে চাই। সবাই মিলেমিশে নগরটাকে গড়ি। জাহাঙ্গীর বলেন, উনি (হাসান সরকার) ’৮৬ সালে, ’৮৮ সালে নির্বাচন করেছেন। ওই সময় চৌরাস্তায় মার্ডার হয়েছে, রক্তপাত হয়েছে। ২০০৪ সালে আহসান উল্লাহ মাস্টারকে তারা মেরে ফেলেছে। বিএনপির আমলে মামলা হয়েছে, বিএনপির আমলে রায় হয়েছে। সেই রায়ে তার আপন ছোট ভাই ফাঁসির আসামি হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিদিনই উনি ভোট ডাকাতি, ভোট চুরির অন্যায় অপবাদ আমার পরিবার, আমাকে নিয়ে বিভিন্নভাবে বাজে কথা বলছেন। একজন সিনিয়র মানুষতো এভাবে কথা বলতে পারে না। জাহাঙ্গীর বলেন, এই নগরের মানুষ অনেক কষ্ট করেছে। মানুষ রাস্তাঘাটে বেরুতে পারে না। যে রাস্তা পেরুতে ১০ মিনিট সময় লাগার কথা সে রাস্তা পেরুতে সময় লাগছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আমরা বলেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকারে আছেন, আমাকে এবং নৌকাকে আপনারা বিজয়ী করুন। আমরা নিরাপদে চলতে চাই, যানজটে থাকতে চাই না। আমাদের এখানে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক আছে, তাদের অধিকার বাস্তবায়নে সবার কাছে সহযোগিতা চাই। তিনি বলেন, আমি শুনেছি তারা এজেন্টই তৈরি করতে পারে নাই। তাদের কাছে এজেন্ট যায় না। উনি অন্য পার্টি থেকে বিএনপি গেছেন। বিএনপি যদি উনাকে পছন্দ না করে এখানে আমাদের কী করার আছে। উনি (হাসান সরকার) যতটা নির্বাচন করেছেন প্রতিটি নির্বাচনেই রক্ত ঝরেছে। কোনো না কোনো মায়ের বুক খালি করেছে। আর যেন সেই কাজটি না করেন। তারা একজন পার্লামেন্ট মেম্বার আহসান উল্লাহ মাস্টারের মতো একজন মানুষকে হত্যা করেছে। আমার মা আমাকে তাদের থেকে সাবধানে চলার কথা বলেছেন। যারা খুনি পরিবার, মানুষকে খুন করতে চায়। আমি বলেছি, না আমি মানুষের অধিকারের কথা বলছি।

 

তিনি বলেন, সকলের জানমালের রক্ষার স্বার্থে বলছি আমাকে এবং নৌকাকে ভোট দেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানিত করি। একটি আধুনিক পরিচ্ছন্ন নগরী করতে আগামী ২৬ জুন ভোটের দিন সকলের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই, দোয়া চাই। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাভোকেট আজমত উল্লাহ খান, আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াজ উদ্দিন মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বেলা ১১টার দিকে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার টঙ্গীতে তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে হাসান উদ্দিন সরকার গাজীপুর সিটির ভোটারদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ঝড়-বৃষ্টি থাকলেও আপনারা ভোটকেন্দ্রে আসবেন এবং ভোট দিবেন। শত উৎপীড়ন, মুখেও আপনারা পিছপা হবেন না। কারণ সত্য এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী ন্যূনতম সুষ্ঠু নির্বাচন যদি হয়, তাহলে আল্লাহর রহমতে সম্মানজনক ভোট নিয়ে নির্বাচিত হব। হাসান উদ্দিন সরকার অভিযোগ করে বলেন, অত্যন্ত বিশ্বস্ত বিশেষ মাধ্যমে আমি অবহিত হয়েছি যে, খুলনা রেঞ্জের পুলিশদের গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করার জন্য নিয়ে এসেছে। খুলনাতে যেভাবে যে কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন করেছে, সেভাবে এখানেও নির্বাচন করার সকল পরিকল্পনা তারা সম্পন্ন করেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সংশয় কেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমার এজেন্টদের প্রতিদিন রাতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে। নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমি মনে করি, এজেন্টদের নিরাপত্তা নেই, ভোটারদের নিরাপত্তা নেই। তিনি আরো বলেন, আমাদের অনেক লোকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নতুন কৌশলে গ্রেপ্তার করে কাউকে নরসিংদী, কাউকে টাঙ্গাইল, কাউকে ঢাকা, কাউকে নারায়ণগঞ্জ পাঠিয়ে দিচ্ছে। আরার কারো এখন পর্যন্ত হদিসই পাইনি কোথায় আছে? এ অবস্থায় আমরা নির্বাচনে আছি, থাকব। তিনি বলেন, আমি চাই- নির্বাচন পরিচালনার যে নিয়ম-কানুন রয়েছে, এটি বাস্তবায়ন করা হোক। এই নির্বাচন করার জন্য যে নিয়ম-কানুন রয়েছে এর মধ্যে নির্বাচনটা হোক। হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, সরকার, যে দল বার বার উচ্চারণ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চায়। আমার মনে হয় গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনে আমিই হয়তো শেষ মুক্তিযোদ্ধা হব, গাজীপুরে আর কোনো মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া যাবে না। একটা সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু আশা করেছি। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী গাজীপুরের। আমি তাকে (মন্ত্রী) ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানাব। কারণ এই নির্বাচন শেষ নির্বাচন নয়, দেশ, সমাজ ও মানুষ যদি থাকে তবে নির্বাচন হতেই থাকবে। দেশ, সমাজে বেঁচে থাকা যায় দুভাবে- একটা হলো সুনামের সাথে, আরেকটা হলো ঘৃণার সাথে। এ সময় শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা নেতা সালাউদ্দিন, বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রাইজিংবিডি/গাজীপুর/২৪ জুন ২০১৮/হাসমত আলী/মুশফিক