সারা বাংলা

ভোট গণনা চলছে

রাইজিংবিডি ডেস্ক : তিনটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে ভোট গণনা চলছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনের শুরুতে কিছুটা বিশৃঙ্খলা ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অবশ্য বিএনপির প্রার্থীর পক্ষ থেকে ভোট কারচুপি, অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। বরিশালে পোলিং এজেন্টদের মারধর, কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে দুপুরে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। এর আগে রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে সোমবার সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয় এবং তা একটানা চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তিন সিটিতে মোট ১৪টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হয়েছে। ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, নির্বাচন শুরুর পর কিছু জায়গায় বিশৃঙ্খলা ঘটেছে। তারা সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে র‌্যাব-পুলিশকে নির্দেশনা দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ভোটকেন্দ্রের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন  ভোটাররা। দুপুরে ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিটি কর্পোরেশনে ‘সরকারের নীল নকশার নির্বাচনের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ’ ঘটেছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘নির্বাচনী প্রচারের প্রথম থেকে সরকারের নীল নকশার নির্বাচন নিয়ে আমরা যে অভিযোগগুলো করেছিলাম, সেটিরই নগ্ন বহিঃপ্রকাশ তিন সিটিতে ফুটতে শুরু করেছে। আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের জন্যই সরকার তিন সিটির ভোট নিয়ে অনাচারে লিপ্ত হতে পেরেছে।’’ ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে ভোট নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। আওয়ামী লীগ বলছে, উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হচ্ছে। বিএনপির অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেছে দলটি। দুপুর ১২টায় বরিশালের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘‘৭০-৮০টি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরুই হয়নি। কেন্দ্রের বাহিরে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন ছিল। আর ভেতরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নৌকায় সিল মারছিল। এমনকি সিলযুক্ত মেয়র প্রার্থীর ব্যালট ভোটারদের হাতে দেওয়া হয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘প্রায় ৫০টি কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদের মারধর ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের বাহিরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। পক্ষান্তরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আমাদের কর্মীদের। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভোট জালিয়াতির উৎসবে মেতে উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘’ সরোয়ার বলেন, ‘‘প্রতিটি কেন্দ্রে জোর করে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হচ্ছে। এমনটা হলে ভোটে থাকার দরকার নেই। তাই আমি এ নির্বাচন বর্জন করলাম।’’ দুপুরে সিলেট নগরীর মাছিমপুরস্থ আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে গিয়ে সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. আলিমুজ্জামানের কাছে সিলেট সিটির নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি সেখানে কেন্দ্র দখল, এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আনেন। আরিফ অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা নগরীর আম্বরখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চন্দনটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এমসি কলেজ কেন্দ্র, হাতিম আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাসদবির ভোট কেন্দ্রসহ নগরীর বেশিরভাগ কেন্দ্র দখল করে নৌকা প্রতীকে সিল দিয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের তাড়িয়ে দিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারের সহযোগিতায় ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করেন তিনি। নগরীতে একটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার না থাকার অভিযোগ এনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ওই কেন্দ্র প্রাঙ্গণে মাটিতে বসে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর বিনোদপুর এলাকায় ইসলামিয়া কলেজ কেন্দ্রে তিনি এভাবে বসে পড়েন। দুপুর ২টা পর্যন্ত বৃষ্টি আর কাঁদার মধ্যে তিনি সেখানে বসে ছিলেন। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বুলবুল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি কেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখেন, মেয়র প্রার্থীদের কোনো ব্যালট নেই। তিনি আশঙ্কা করছেন, মেয়র পদের ব্যালট আগেই সিল মেরে রাখা হয়েছে। এর আগে সকাল ৮টায় ভোট শুরুর পর থেকে কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া, এজেন্টদের ঢুকতে না দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ করতে থাকেন বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, বদরুদ্দিন আহমেদ কামরান ও সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং নিশ্চিত পরাজয় জেনে এসব অভিযোগ করছে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জুলাই ২০১৮/স্বপন/তানজিম/নোমান/বকুল