সারা বাংলা

চামড়া পাচাররোধে ১২ পয়েন্টে চেকপোস্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা : কোরবানির পশুর চামড়া ভারতে পাচাররোধে খুলনার চারটি উপজেলার ১২টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। এ সব পয়েন্টে ঈদ পরবর্তী সময়ে সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। খুলনার বাজারে চামড়ার মূল্যে ধস নেমেছে। ছোট-বড় আকারভেদে প্রতিটি চামড়া মাত্র ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন মাদ্রাসায় দানকৃত চামড়া বিক্রিতে হতাশায় পড়েছেন কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণাঞ্চলের সাতক্ষীরা ও যশোর সীমান্তবর্তী এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ভারতে চামড়া পাচারে প্রতি বছর সক্রিয় থাকে। এ বছরও এর ব্যত্যয় ঘটবে না বলে আশঙ্কা করছেন খুলনার চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ীরা। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে চামড়া পাচারকারী সিন্ডিকেট। সরকারিভাবে চামড়ার দাম কম নির্ধারণ হওয়ায় সিন্ডিকেটের তৎপরতা বেড়ে গেছে। বুধবার ঈদের দিন মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে পাড়ায়-মহল্লায় তাদের নির্ধারিত লোকের মাধ্যমে চামড়া কেনাচ্ছেন। দক্ষিণাঞ্চল থেকে চামড়ার পাচার ঠেকাতে সক্রিয় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে সীমান্তবর্তী ৭ জেলায় কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে খুলনার ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, কয়রা ও দাকোপ উপজেলার ১২টি পয়েন্টে ঈদ পরবর্তী সময়ে সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। খুলনা মহানগরীর শেখপাড়া চামড়াপট্টির ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতে চামড়ার অনেক দাম। প্রতিনিয়ত সেখানে নতুন ট্যানারি গড়ে উঠছে। চাহিদাও বেশি। তারা বলেন, দেশে চামড়ার দাম কম থাকায় বরাবরের মতো এবারও চামড়া পাচার হবে। সরেজমিন দেখা গেছে, শেখপাড়া প্রধান সড়ক ও শেরে বাংলা রোডের সংযোগস্থলের চামড়াপট্টির রাস্তার উপরে চামড়া এনে রাখছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানান, চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য পৃথক মার্কেট বা বাজার নেই। বাড়ির মালিকরা চামড়া ব্যবসায়ীদের দোকান ভাড়া দিতে চান না। এ জন্য রাস্তার ওপর চামড়া সংরক্ষণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। খুলনার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম ডালী বলেন, এবারও চামড়ার দাম কম হওয়ায় ৫০ ভাগ চামড়া ভারতে পাচার হবে। খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীরা এ বছরও অসাধু ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। ট্যানারি মালিকরা বকেয়া টাকা না দেওয়ায় চাহিদা ও সুবিধামত চামড়া কিনতে পারছেন না তারা। এই সুযোগে ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও কোরবানির আগে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, চামড়া পাচারের সুযোগ নেই। খুলনা জেলার পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া যাতে ভারতে পাচার না হয়, সেই জন্য জেলা পুলিশ ১২টি চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করছে। একই সঙ্গে চামড়া পাচাররোধে কড়া নজরদারি বসিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সন্ধ্যায় নগরীর শেখপাড়া চামড়া পট্রিতে চামড়া বিক্রি করতে আসা জিরোপয়েন্ট মাদানিনগর মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা কামাল হোসেন বলেন, মাঝারি গরুর প্রতিটি চামড়া ২০০ টাকা, বড় চামড়া মাত্র ৫০০  এবং ছোট চামড়া ১০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এবার তার প্রতিষ্ঠানে চামড়া প্রাপ্তির সংখ্যা বেশি হলেও দাম না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠান চালাতে হিমশিম খেতে হবে। বাবরি মসজিদ মাদ্রাসার প্রতিনিধি বলেন, প্রতিটি চামড়া মাত্র ১০০ টাকা করে দাম বলছে। এখন বিক্রি করা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছেন তিনি। ভ্যানে করে একাধিক ব্যাপারীকে দেখালেও দাম বেশি পাচ্ছেন না। রাইজিংবিডি/খুলনা/২২ আগস্ট ২০১৮/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/বকুল